• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪৩ অপরাহ্ন

শুধু উন্নয়ন নয়, উন্নত গণতন্ত্রও অপরিহার্য : ক্যামেরন


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২৮, ২০১৭, ১০:২৫ AM / ৪১
শুধু উন্নয়ন নয়, উন্নত গণতন্ত্রও অপরিহার্য : ক্যামেরন

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ভবিষ্যতে বিশ্বের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ আছে, তার একটি হচ্ছে সুষ্ঠু ও কার্যকর গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্র মানে এখানে শুধু মেয়াদ শেষের নির্বাচন নয়, সব অধিকার সমুন্নত রাখা। তিনি বলেন, শুধু উন্নয়ন নয়, উন্নত গণতন্ত্রও অপরিহার্য। উন্নত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং সহিংস জঙ্গিবাদ দমনের মতো চ্যালেঞ্জগুলো দূর করার ওপরও তিনি জোর দেন।

ছয় বছর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় বাংলাদেশে আসতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন ডেভিড ক্যামেরন। প্রথমবারের মতো ঢাকায় সংক্ষিপ্ত সফরে এসে আর্থসামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে অব্যাহত উন্নতির জন্য বাংলাদেশকে তিনি সমৃদ্ধির ‘উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

ঢাকায় সংক্ষিপ্ত সফরের সময় গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে বক্তৃতা করতে গিয়ে এই তিনটি বিষয় তিনি সামনে নিয়ে আসেন। বক্তৃতা শেষে বিশ্বের সমকালীন পরিস্থিতি নিয়ে তিনি উপস্থিত অতিথিদের কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দেন।

দুই দিনের ঢাকা সফরের দ্বিতীয় দিনের শুরুতে সকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপর একটি তৈরি পোশাক কারখানা দেখতে যান তেজগাঁওয়ে। দুপুরে ইন্টারন্যাশনাল গ্রোথ সেন্টার (আইজিসি) আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন। বিকেলে তিনি ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। সংক্ষিপ্ত সফর শেষে ডেভিড ক্যামেরন গতকাল রাতে ঢাকা ছেড়ে গেছেন।

ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি এনাম আলী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন টেলিভিশন উপস্থাপক িজল্লুর রহমান।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে যুক্তরাজ্যের থাকা না-থাকা নিয়ে গণভোটে (ব্রেক্সিট) হেরে যাওয়ার পর গত বছরের জুনে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান ডেভিড ক্যামেরন। গতকাল বিকেলে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তৃতার শুরুতে তিনি বাংলাদেশে বৈদেশিক সহায়তার কার্যকর প্রয়োগে চমৎকার সফলতার প্রশংসা করেন। বৈদেশিক সহায়তার কার্যকারিতা নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন তোলেন, তিনি তাঁদের বাংলাদেশ ঘুরে দেখার পরামর্শ দেন। তাঁর মতে, বাংলাদেশের সামনে যেমন সম্ভাবনা আছে, তেমনি চ্যালেঞ্জও কম নয়। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য অর্জন করতে হলে বাংলাদেশকে জ্বালানি, অবকাঠামো, শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জনের জন্য বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হবে।

যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টির নেতা এরপর বিশ্ব প্রেক্ষাপটে সামনের দিনের চ্যালেঞ্জের কথা বলতে গিয়ে গণতন্ত্র, দুর্নীতি ও সহিংস জঙ্গিবাদের প্রসঙ্গ টানেন। দেশের জন্য শুধু উন্নয়ন নয়, উন্নত গণতন্ত্রও অপরিহার্য। গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে শর্টকাট (সংক্ষিপ্ত) পথ ধরে এগোনোর যুক্তি দেখানো হয়। এই মতের পক্ষের যুক্তি হচ্ছে, আপনি গণতন্ত্রের সব সুবিধা পাবেন, একটা নির্দিষ্ট সময় পর নির্বাচন হবে, তবে জটিল বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা হয়। জবাবদিহি নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই, আইনের শাসন নিয়ে ভাববার কারণ নেই। অথচ এগুলোই হচ্ছে গণতন্ত্রের ভিত্তিমূল। কারও কারও মতে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় থেকেও স্বৈরাচারী পদ্ধতিতে কাজ করে উন্নতি করতে পারলেই হলো।

ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ‘কিছু কিছু মানুষ এভাবেই কাজ হবে বলে মনে করেন। আমি মনে করি, এটা পুরোপুরি ভুল। উন্নত গণতন্ত্র মানে শুধুই নির্বাচন নয়। গণতন্ত্র মানে আইনের শাসন, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার ও ন্যায়বিচারের অধিকার নিশ্চিত করা। এই উপাদানগুলো একটা দেশকে শক্তিশালী করে। এসব উপাদানে ঘাটতি থাকলে সুশাসনের অভাব দেখা দেয়, যা ব্যবসার জন্য সহায়ক নয়। সারা বিশ্বে এ নিয়ে বিতর্ক চলছে। সারা বিশ্বেই আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি। এই বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশে প্রকাশ্যে বিতর্ক হওয়া উচিত।’

আগামী দিনের উন্নয়নের পথে দুর্নীতিকে দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। তাঁর মতে, এক-আধটু দুর্নীতি হলে ক্ষতি নেই বলে যাঁরা যুক্তি দেন, তাঁরা ভুল করেন। দুর্নীতি ক্যানসারের মতো, যা মানুষকে রাজনীতি সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ করে তুলতে পারে।

যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সবার একসঙ্গে কাজ করা উচিত বলে মত দেন। তাঁর মতে, জঙ্গিবাদ অবশ্যই রুখতে হবে। এ জন্য কখনো কখনো সামরিক শক্তিও প্রয়োগ করতে হয়। তবে লড়াইটা সব সময় সশস্ত্র পথে গিয়ে হয় না। কারণ, এখানে আইএসের মতাদর্শের পথ ধরে যারা সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে লড়াইটা আদর্শিকও। নিরাপত্তা দরকার, গোয়েন্দা তথ্যের প্রয়োজন। তবে সবচেয়ে বড় সংগ্রামটা হচ্ছে জনগণের হৃদয় জয় করা। যেখানটায় জনগণকে এমন একটা মুক্ত, অবাধ, সহনশীল ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের স্বপ্ন তুলে ধরতে হবে।

ডেভিড ক্যামেরন বলেন, বিশ্বের জনগণ, বিশেষ করে তরুণেরা এমন একটা পরিবেশ দেখতে চান, যেখানে তাঁরা নিজেদের মনের কথা বলতে পারেন, নিজেদের উন্নত ভবিষ্যৎ দেখতে পান।

প্রশ্নোত্তর পর্বে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন করতে গিয়ে কখনো কখনো গণতন্ত্র, আইনের শাসন আর মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হয় কি না। এ নিয়ে তাঁর স্পষ্ট মত হচ্ছে, জঙ্গিবাদ দমন করতে গিয়ে প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করা যাবে। তবে এই পরিবর্তনের কারণে লোকজন বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় কি না, সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে। যেহেতু লড়াইটা আদর্শিক, তাই জনগণের অধিকারের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতি এখন সংরক্ষণবাদের দিকে ঝুঁকছে এবং জাতিসংঘের মতো বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা উপযোগিতা হারিয়ে ফেলছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ‘আমি সব সময় সংরক্ষণবাদের বিরুদ্ধে এবং মুক্ত বাণিজ্যব্যবস্থার পক্ষে। বহুপাক্ষিকতার উপযোগিতা হারিয়ে যায়নি।’

নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রসঙ্গ টেনে ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প কী পদক্ষেপ নেবেন আর কোন পথে যাবেন, আমরা আসলেই তা জানি না।’

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলাদেশ সফরের জন্য যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম ১০.২৬এএম/২৮//২০১৭ইং)