• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন

মায়ের সান্নিধ্য বাঁচাবে অপূর্ণাঙ্গ শিশুকে


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৯, ২০১৭, ২:১৪ PM / ৫৬
মায়ের সান্নিধ্য বাঁচাবে অপূর্ণাঙ্গ শিশুকে

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ডেস্ক : ক্যামেলা টরেসের বয়স যখন ১৮ বছর তখন সে প্রথম সন্তানসম্ভবা হন। সেটি ১৯৮৭ সালের কথা। তার স্বামী পাবলো হার্নান্দেজকে নিয়ে তখন বাস করতেন কম্বোডিয়ার এক উপকূলীয় অঞ্চলে। তবে অনাগত সন্তানের কথা ভেবেই তারা পরে রাজধানী বোগোটায় চলে আসেন। সিদ্ধান্তের পেছনে সন্তানের সুরক্ষার বিষয়টি তো ছিলই, সঙ্গে পরিবারের সমৃদ্ধির কথাও ভেবেছিল তারা।

এত অল্প বয়সে সন্তানের মা হওয়ার কথা শুনে টরেসের অভিভাবকেরা রেগে যান। কিন্তু সে সন্তান জন্মদানের বিষয়ে ছিল অনড় অবস্থানে। ফলে পিতার সঙ্গে তার কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। সময়ও কেটে যাচ্ছিল ভালোভাবেই। তবে বাদ সাধলো প্রসবের নির্দিষ্ট সময়ের দু’মাস আগে। পেটে বেকায়দা চাপ লাগায় জটিলতা দেখা দেয়। ফলে টরেস বাধ্য হন হাসপাতালে যেতে।

বোগোটা’র পূর্বাঞ্চলীয় একটি মাতৃসদনে ভর্তি হন তিনি। চিকিৎসকেরা দ্রুত তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। সন্তান প্রসবও হয় তার! কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই শিশুটির ওজন নির্দিষ্ট পরিমাণের তুলনায় কম হয়। মাত্র ১৬শ’ গ্রাম।

চিকিৎসকেরা শিশুটিকে ইনকিউবেটরে রাখার পরামর্শ দেন। ফলে সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের মুখ ভালো করে দেখার আগেই সরিয়ে নেয়া হয় টরেস’র কাছ থেকে। কিন্তু টরেস’এর বিপদমুক্ত থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছেড়ে দেয়। ফলে সন্তানের মুখ ভালো করে না দেখার আক্ষেপ নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয় তাকে।

তৃতীয় দিন সকালে হাসপাতাল থেকে ফোন আসে। টেরেস জানতে পারেন, সন্তান তার মারা গেছে। যদিও কেনো শিশুটি মারা গেল সে ব্যাপারে পরিষ্কার করে কিছু জানায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত টরেস বলেন, ‘বাচ্চাটার নাম পর্যন্ত রাখতে পারিনি। কেন সে আমাদের ছেড়ে চলে গেল তাও জানি না।’ দুঃখ ভুলতে আবারও সন্তান নিতে চান তিনি। আগের অভিজ্ঞতার কারণে এবার তিনি ছিলেন আরও সাবধান। আগের সম্পর্কও চুকিয়ে ফেলেন। বিয়ে করেন রিভেরা নামের এক যুবককে। এবং বোগোটাতেই স্থায়ী হন। পেটের সন্তান যাতে কোনো জটিলতার মধ্যে না পড়ে সেজন্য সব রকমের সাবধানতা অবলম্বন করেন তিনি। বাদ দেন বাইরের কাজও।

কিন্তু বিধি বাম! সন্তান প্রসবের ক’মাস আগে একদিন বাসায় পার্টি চলাকালে বিপদ ঘটে যায়। অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে সকালে পার্টি চলাকালেই তিনি টের পান পেটে কোনো গণ্ডগোল ঘটেছে। ব্যাথাও ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু পার্টি’র কারণে বিষয়টি তিনি চেপে যান। তবে সন্ধ্যায় আর পারলেন না। জটিলতা বাড়তে থাকায় বাধ্য হন হাসপাতালে যেতে।

টরেস বলছিলেন, ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি ঘটছিল। কেননা, যে হাসপাতালে তিনি ভর্তি হন প্রথম সন্তান জন্মদানের জন্য সেখানেই এসেছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, যে ওয়ার্ডে তিনি ছিলেন সেখানেই তাকে রাখা হয়।

ডাক্তারেরা দ্রুত তাকে পরীক্ষা করেন। বলতে গেলে ধমকের সুরেই বলেন, এত দেরি করে কেন হাসপাতালে এসেছেন? অনাগত শিশুটিকে বাঁচাতে তখনই প্রসবের সিদ্ধান্ত হয়। টরেস তখন ধরেই নিয়েছেন নিয়তির ফেরে পড়েছেন তিনি। এবারও হারাতে হবে সবেধন নীলমনিকে।

পরদিন সকালে সন্তান প্রসব করেন টরেস। চিকিৎসকেরা জানান, ভূমিষ্ঠ শিশুটি পূর্ণাঙ্গ নয়। আগের সন্তানের মতোই ওজন নিয়ে জন্মেছে সে। তাই রাখতে হবে ইনকিউবেটর’এ। সব শুনে নিয়তির কাছে নিজেকে ছেড়ে দেন টরেস। তবে পুরনো আক্ষেপ কাটাতে শিশুটির নাম আগেই রাখেন তিনি। নাম দেন জুলিয়ান।

অবশ্য নিয়তি বলছিল অন্য কথা। সন্তান প্রসবের পরদিন সকালে একজন ডাক্তার তার কাছে আসেন। ওই নারী চিকিৎসক তাকে অন্য এক পথের সন্ধান দেন। জানান, অস্ট্রেলিয়ার অতিপরিচিত প্রাণী ক্যাঙ্গারু যেভাবে তার অপূর্ণাঙ্গ সন্তানকে বড় করে তোলে, টরেস’ও সেভাবে তার শিশুকে বাঁচিয়ে তুলতে পারেন। শিশুটিকে এজন্যে সবসময় তার শরীরের ত্বকের স্পর্শে রাখতে হবে।

কথাটি আজব শোনালেও হাল ছেড়ে দেয়া টরেস তাতেই রাজি হয়ে যান। চিকিৎসকদের বলেন অপরিণত শিশুটিকে নিয়ে আসেন তার কাছে। পরিস্কার কাপড় দিয়ে নিজেদের জড়িয়ে নেন। দিতে থাকেন বুকের দুধ। আশ্চর্য হলেও সত্য সন্তানটি তার ধীরে ধীরে পূর্ণতা পেতে থাকে। একসময় বুঝতে পারেন নিয়তি তাকে ধোঁকা দেয়নি।

বিভিন্ন কারণে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মায়েরা সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হন। ফলে অপূর্ণাঙ্গ শিশুটির জীবন পড়ে হুমকির মুখে। এমন অবস্থায় অনেকে আগত সন্তানটিকে ইনকিউবেটরে রাখতে বাধ্য হন। তবে অতিরিক্ত খরচ এবং সব জায়গার সুবিধাটি না থাকায় সেই সৌভাগ্য সবার হয় না। ফলে মায়েরা সন্তানের মুখ দেখলেও তাকে বাঁচাতে পারেন না। কিন্তু প্রকৃতির শক্তির কথা জানেন না অনেকেই।

অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই একদল চিকিৎসক দাবি করে আসছেন, সন্তান নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নিলেও তাকে বাঁচানো সম্ভব। কিভাবে?

তাদের দাবি, নির্দিষ্ট সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ শিশুকে মায়ের কাছ থেকে আলাদা না করে উল্টো কাছে রাখলেই সুফল মিলবে সবচেয়ে বেশি। কৃত্রিমভাবে তাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা না করে বরং প্রাকৃতিক নিয়মই অনুসরণ করা উচিত। এরফলে মায়ের সান্নিধ্যে ধীরে ধীরে পূর্ণতা পাবে শিশুটি।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/২:০৫পিএম/৯/২/২০১৭ইং)