• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫৩ পূর্বাহ্ন

ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল এর গল্প(ভিডিও)


প্রকাশের সময় : মে ২৭, ২০১৯, ১:২৩ PM / ৫৯
ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল এর গল্প(ভিডিও)

সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি : প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি এলেই ভাষা শহিদদের আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। কিন্তু যারা সেদিন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার পর আহত হয়ে পরবর্তীতে বেঁচে ছিলেন কিংবা এখনো জীবনের শেষ সময়ে এসে বেঁচে রয়েছেন, তাদেরকে নিয়ে আমরা ক’জন ভাবি? ভাষা শহিদ রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার এর মতো নতুন প্রজন্ম কি চেনে তাদেরকে? রাষ্ট্র কি তাদের সবাইকে সঠিক মূল্যায়ন করতে পেরেছে? প্রিয় দর্শক, আজ আমরা ঢাকারনিউজ এর বিশেষ সাক্ষাৎকার বিভাগে অতিথি হিসেবে পেয়েছি জীবন্ত কিংবদন্তি ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিলকে। একইভাবে পরবর্তিতে লাল সবুজের পতাকার জন্য যিনি ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে লড়াই করে বাঙালী জাতিকে উপহার দিয়েছেন স্বাধীন রাস্ট্র ‘বাংলাদেশ’।


জাতির শ্রেষ্ঠ এ সন্তান বর্তমানে দেশের সমসাময়িক অনেক সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে কথা বলেছেন।জানিয়েছেন ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত একজন দেশপ্রেমিক সৈনিক হিসেবে তার নানা অভিজ্ঞতার কথা।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ‘রাস্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মীদের পাশাপাশি আব্দুল জলিল ও তার বন্ধুরা মিলে সেদিন বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, সালাম সহ ৮জন। অনেকেই আহত হন। সেদিন ভাগ্যগুণে বেঁচে যাওয়াদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল জলিল।

১৯৩২ সালের ১৭ ডিসেম্বর নোয়াখালীতে জন্ম। বাবা আলহাজ্ব মোহাম্মদ শামসুল হক ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কনফিডেন্টসিয়াল অ্যাসিসট্যান্ট টু দি গভর্নমেন্টের একান্ত সচিব। কথা প্রসঙ্গে এই বীর বাঙালী জানালেন, ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ তার বাবা সর্বপ্রথম পাকিস্তান সরকার হতে প্রাপ্ত মেডেল ফেরত দেন। যা ছিল সেই সময়ের বেশ সাহসী পদক্ষেপ। বিষয়টি বরাবরই ভাষা সৈণিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিলকে গৌরবান্বিত করে বলে জানান তিনি।

বার্ধক্যের কারণে বেশিরভাগ সময়ই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এই বীর বাঙালী। সাক্ষাৎকার গ্রহণকালেও তাকে একইভাবে বেশ খানিকটা অসুস্থ হয়ে পরতে দেখা গেছে, আমাদের ঢাকারনিউজ এর ক্যামেরায় তা বন্দী হয়ে যায়।

দেশে ঘটে চলা একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা, বাংলা ভাষার বিকৃতি সহ নানা অসঙ্গতি ও অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলো তাকে ভাবায় সারাক্ষণ। শারীরিক শক্তি না থাকলেও মানসিক শক্তি যাকে ভেতরে ভেতরে আবার দেশের মানুষের প্রতি অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠার আহ্বান জানায়।

জীবন সায়ান্নের ৮৬ বছর বয়সে এসেও মাটি ও সবুজের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পায় তার ড্রয়িং রুম থেকে বারান্দা পর্যন্ত নানা ধরনের গাছের সংগ্রহ দেখে।

জানালেন, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বঙ্গববন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতারের পর তাদের নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী তাজউদ্দীন আহমদ, যিনি সেই সময় অস্থায়ীভাবে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হোন। তিনিই ছিলেন তখন স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা।

বাংলা ভাষার বিকৃতির প্রশ্নে তিনি বলেন, বড় বড় রাস্ট্রে কিন্তু সাইনবোর্ড থেকে শুরু করে সমস্ত কিছুতেই তাদের রাস্ট্রভাষা রাখা হয়। অথচ আমাদের দেশেই কেবল ইংরেজি ভাষাকে নিজেদের ভাষার চেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। যেটা কোনোভাবেই উচিত নয়।

ধর্ষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই যে দল বেঁধে ছোট ছোট মেয়েদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, এত এত যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে, এসব রোধে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত মুসলিম দেশের মতো কঠোর এবং তাৎক্ষণিক বিচারের ব্যবস্থা করা হলেই কেবল তা সম্ভব। যেমন মুসলিম দেশগুলোতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি কি তা ফলো করলে আমার মনে হয় ধর্ষণ রোধ করা যেতে পারে। অর্থাৎ এদেশের বিচার ব্যবস্থা যদি সৌদি-ইরাকের মতো মুসলিম দেশগুলোর মতো কঠোর হয় তাহলেই কেবল ধর্ষণ রোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি অভিভাবকদেরও দোষ রয়েছে বলব। তারা সন্তানদেরকে সঠিক লাইনে গাইড করছেন না। পারিবারিক সঠিক শিক্ষার অভাবে এই অবক্ষয়ের কারণ মনে করেন তিনি।

জীবনে চাওয়া-পাওয়ার প্রশ্নে জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তান জানান, সবক’টি সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করতে পেরেছি এটাই চাওয়া ছিল এবং পেয়েছিও তাই।

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে আব্দুল জলিল বলেন, যখন যে সরকার আসে তখন মুক্তিযোদ্ধার লিস্টটি বদল হয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ছাটাইয়ের বিষয়টা সফল হবে বলে আমি মনে করিনা। কেননা তারাতো ভাতার জন্য আন্দোলন করেননি। তারা দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য যুদ্ধ করেছিল। তাদের অনেকেই সার্টিফিকেটও নেননি তখন।

একের পর এক সড়ক দূর্ঘটনা রোধে দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ রেখে মহান এ দেশপ্রেমিক বলেন, আপনারা একটু আইন-শৃঙ্খলা মেনে চলুন, একটু সময় ব্যয় হলেও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য অন্তত রাস্তা পাড় হবার সময় ফুটপাত এবং ফুটওভার ব্রীজ ব্যবহার করুন। তাহলেই দেখবেন সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে।

video news link :

https://www.youtube.com/watch?v=2X6hg9lsL_Q&feature=youtu.be

ক্যামেরা পারসন রাজু আহমেদকে সাথে নিয়ে সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি, ঢাকা।
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১:২৫পিএম/২৭/৫/২০১৯ইং)