• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৯ পূর্বাহ্ন

তাহিরপুর সীমান্তে চোরাচালান বাণিজ্য : বিএসএফের গুলিতে আহত ২


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ১৪, ২০২৩, ৮:৫৪ PM / ২৩৭
তাহিরপুর সীমান্তে চোরাচালান বাণিজ্য : বিএসএফের গুলিতে আহত ২

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে সরকারের লাখলাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা ও পাথরসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য পাচাঁরের অভিযোগ দীর্ঘদিনের হলেও এব্যাপারে কার্যকর কোন পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে ঘটছে নানান অপ্রীতিকর ঘটনা। অবৈধভাবে কয়লা পাচাঁরের সময় ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে দেলোয়ার হোসেন (২৮) ও হনুফা বেগম (৫৫) হাত ভেঙ্গে আহত হয়েছে। তাদেরকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে গতকাল শুক্রবার (১৩ জানুয়ারী) রাতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এঘটনার পর সীমান্তের বড়ছড়া শুল্কষ্টেশন সংলগ্ন স্থানে ভারতের শিলং ১৯৩ ব্যাটালিয়নের বড়ছড়া কোম্পানীর পক্ষে বিএসএফ কমান্ডার দিলিপ শিং ও বাংলাদেশের পক্ষে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের টেকেরঘাট কোম্পানীর কমান্ডার জাফর আহমেদের নেতৃত্বে পতাকা বৈঠক হয়। এরপর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সহকারী পুলিশ সুপার (তাহিরপুর সার্কেল) মোঃ সাহিদুর রহমান ও তাহিরপুর থানার ওসি সৈয়দ ইফতেখার হোসেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো গতকাল শুক্রবার (১৩ জানুয়ারী) ভোর থেকে জেলার তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী, শাহ আরেফিন মোকাম, সাহিদবাদ, পুরান লাউড়, চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া, রাজাই ছড়া, গারো ছড়া, টেকেরঘাট সীমান্তের রজনীলাইন, বুরুঙ্গাছড়া, টেকেরঘাট, লাকমা, লালঘাট, চাঁরাগাঁও সীমান্তের বাঁশতলা, লালঘাট, কলাগাঁও, জঙ্গলবাড়ি, চারাগাঁও এলসি পয়েন্ট ও বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের লামাকাটা, সুন্দরবন, রঙ্গাছড়া, বাগলী ছড়া এলাকা দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা ও পাথরসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য পাচাঁর শুরু করে চোরাকারবারীরা। এমতাবস্থায় দুপুর অনুমান ২টার সময় সোর্স কামাল মিয়া নেতৃত্বে টেকেরঘাট সীমান্তের বুরুঙ্গা এলাকা দিয়ে কয়লা পাচাঁরের সময় বিএসএফ চোরাকারবারীদের তাড়া করে। ঐসময় বিএসএফকে লক্ষ করে চোরাকারবারীরা পাথর নিক্ষেপ করলে তারা ৫ রাউন্ড গুলি করে। এসময় বুরুঙ্গাছড়া গ্রামের রাশিদ মিয়ার ছেলে দেলোয়ার হোসেন গুলিবৃদ্ধ হয়। আর হনুফা বেগম দৌড়ে পালানোর সময় পাথরের উপর পড়ে হাত ভেঙ্গে ফেলে। এরপর বিএসএফ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে দেখা দেয় উত্তেজনা। এখবর পেয়ে বিজিবি ঘটনাস্থলে আসলে বিএসএফ চলে যায়।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে- সম্প্রতি উপজেলার বাগলী ছড়া দিয়ে মোস্তফা মিয়া ও আলী হোসেনগং ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা পাচাঁরের পর বাগলী কয়লা ও চুনাপাথর আমদানী কারক সমিতি সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেনগং বিজিবি দিয়ে আটক করে। এঘটনায় দুই গ্রুপের মধ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে ১০জন আহত হয়। পরে সালিসের মাধ্যমে সংঘর্ষের ঘটনার সমাধান করার পরদিন থেকে আবারো কয়লা পাচাঁর শুরু করে। এছাড়া যাদুকাটা নদী দিয়ে কয়লা, পাথর ও মাদকদ্রব্য পাচাঁর করতে গিয়ে এপর্যন্ত মোট ১৭জনের মৃত্যু হয়েছে। তারপরও বন্ধ হয়নি চোরাচালান। বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা ও লালঘাট এলাকায় চোরাই কয়লা গুহায় মাটি চাপা পড়ে এপর্যন্ত ৯জন ও চারাগাঁও সীমান্তের বাঁশতলা সীমান্তে সম্প্রতি ১জনসহ মোট ৫জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানাগেছে। এতকিছুর পরও সীমান্ত চোরাচালান বন্ধ না হয়ে উল্টো আরো দ্বিগুন বেড়ে গেছে। এই চোরাচালানকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক, পুলিশ ও বিজিবিসহ বিভিন্ন সংস্থার নাম ভাংগিয়ে সোর্স পরিচয় দিয়ে বীরেন্দ্র নগর সীমান্তে মস্তোফা মিয়া, চারাগাঁও সীমান্তে রফ মিয়া, বালিয়াঘাট সীমান্তে কালাম মিয়া, রতন মিয়া, লেংড়া বাবুল, জিয়াউর রহমান জিয়া, টেকেরঘাট সীমান্তে ইসাক মিয়া, কামাল মিয়া, আব্দুর রাজ্জাক ও আজাদ মিয়াসহ চাঁনপুর ও লাউড়গড় সীমান্তে আরো একাধিক চোরাকারবারীরা করছে লাখলাখ টাকা চাঁদা উত্তোলন। ঐসব ব্যক্তিদের বিরোদ্ধে একাধিক মামলা থাকার পরও তাদের চোরাচালান ও চাঁদাবাজি বন্ধের ব্যাপারে আজ পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ না নেওয়া কারণে কিছুদিন পরপর সীমান্ত এলাকায় নানান অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে বলে সীমান্ত এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা জানান।

এব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ও দৈনিক সংবাদ প্রতিনিধি কামাল হোসেন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন- রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যারা চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করছে তাদের ব্যাপারে বিজিবিকে বারবার জানানোসহ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করার পরও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়না। সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক মাহমুদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান- বিএসএফের গুলিতে এক যুবক ও পিটনীতে এক নারী আহত হওয়ার ঘটনার পর প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।