• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১৫ অপরাহ্ন

১৪ দলের শরিকরা সরকারের অবস্থানে অস্বস্তিতে


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১৬, ২০১৭, ১১:০৭ AM / ৩৬
১৪ দলের শরিকরা সরকারের অবস্থানে অস্বস্তিতে

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

ঢাকা: সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে ন্যায়বিচারের প্রতীক জাস্টিশিয়া ভাস্কর্য সরানো এবং কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদকে স্নাতকোত্তর মর্যাদার ঘোষণা দেওয়া নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক দলগুলো অস্বস্তিতে রয়েছে। এ ঘটনা অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের চেতনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করছেন জোটটির শরিক দলগুলোর নেতারা।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, বাম, প্রগতিশীল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত ১৪ দলের মূল লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং তাকে অগ্রসর করে নিয়ে যাওয়া। এ লক্ষ্য নিয়ে ১৪ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন ও ক্ষমতায় এসে সরকার পরিচালনা করছে। জোটের দলগুলো থেকে সরকারের মন্ত্রী ও জাতীয় সংসদে সদস্য রয়েছেন।

হেফাজতের দাবি অনুসারে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে ভাস্কর্য সরানো এবং কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদকে স্নাতকোত্তর মর্যাদার ঘোষণা দেওয়া নিয়ে শরিক দলগুলোর মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। সরকারের এ অবস্থানকে অগ্রহণযোগ্য মনে করছেন জোট নেতারা। এর ফলে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তি আরও উৎসাহিত হবে বলে আশঙ্কা তাদের। এটি তারা সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীর কাছে নতিস্বীকার বলেও মনে করছেন।

শরিক নেতারা মন্তব্য করেন, আজ সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীর এ দাবি মেনে নেওয়া হলে আগামীতে তারা আরও অনেক বিষয়ে অগ্রসর হতে পারে, যা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা এবং বাংলাদেশের ভিত্তিতে আঘাত করবে।

ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘হেফাজতের দাবি মেনে যা যা করা হচ্ছে, তার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এতে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তি মদদ পাবে। এসব করা হলে অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল চেতনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে’।

গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুর রহমান সেলিম বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি উৎসাহিত হতে পারে, এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না। এদেশের মানুষ প্রতিবাদী হয়ে উঠবে। কোনো অবস্থাতে কারো ওই ধরনের দাবির কাছে নত হয়ে পা বাড়ানো সঠিক হবে না। যারা এ দেশকে সাম্প্রদায়িক দেশ বানাতে চায়, তারা দিবাস্বপ্নের মধ্যে আছে। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থেকে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ধারায় দেশকে এগিয়ে নিতে হবে’।

‘পাঠ্যপুস্তকে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, সেটির সংশোধন করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থার সকল পাঠক্রমকে সমন্বিত সিলেবাসের আওতায় আনতে হবে’।

জাসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, ‘হেফাজত গোষ্ঠীর রাজনৈতিক অবস্থান শুধু সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে ভাস্কর্যের বিরুদ্ধেই নয়, এ গোষ্ঠী বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক চেতনার বিরুদ্ধে। তাদের ছাড় দেওয়া হলে তারা আবারও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে’।

জাসদের আরেক অংশের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, হেফাজতের ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলার দাবি অযৌক্তিক। এটি কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। পৃথিবীর সব দেশেই আদালত প্রাঙ্গনে এ ধরনের ভাস্কর্য আছে’।

কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম আহ্বায়ক অসিত বরণ রায় বলেন, ‘আজ যদি সুপ্রিম কোর্টের সামনের ভাস্কর্য সরানোর দাবি মানা হয়, তাহলে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তি আরও উৎসাহিত হবে। তারা আরও অনেক কিছু চেয়ে বসবে, তখন কি হবে? এরপর তারা অপরাজেয় বাংলা, বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যসহ আরও যেসব ভাস্কর্য আছে, সেগুলো সরানোর দাবিও তুলতে পারে’।

‘এ দাবি মানা হলে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আরও পোক্ত হবে। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার যে মূল নীতি নিয়ে ১৪ দলের জোট গড়ে উঠেছিলো, তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে’।

ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক বলেন, ‘হেফাজতের দাবি মেনে নেওয়া, তাদেরকে ডেকে নিয়ে তাদের সঙ্গে বসা ঠিক হয়নি। তারা কখনও আওয়ামী লীগকে সমর্থন করবে না। এটি অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ধারাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে’।

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম /১১.০৪এএম/১৬//২০১৭ইং)