• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১৫ অপরাহ্ন

হেপাটাইটিস বি নিরাময়ে দুই বাংলাদেশির সাফল্য


প্রকাশের সময় : মার্চ ২৫, ২০১৭, ১০:৩০ AM / ৬৭
হেপাটাইটিস বি নিরাময়ে দুই বাংলাদেশির সাফল্য

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

‘হেপাটাইটিস বি’ চিকিৎসায় বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছেন বাংলাদেশের দুই চিকিৎসা বিজ্ঞানী। এতে স্বীকৃতি মিলেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে। এই আবিষ্কারের ফলে ‘হেপাটাইটিস বি’র কারণে আর কাউকে মৃত্যুবরণ করতে হবে না।

পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমান বিশ্বে জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ কখনো না কখনো হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আবার বাংলাদেশে ৫ থেকে ৬ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে সংক্রমিত। এর মধ্যে প্রায় ১ কোটি ক্রনিক হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত।

এসব আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে বেশির ভাগই লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন। দেশে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ প্রতি বছর হেপাটাইটিস বি ভাইরাসজনিত লিভার সিরোসিস অথবা লিভার ক্যান্সারে মারা যান।

এ সমস্যা সমাধানে মাইলফলক সৃষ্টি করেছেন ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর। তিনি ২৫ বছর ধরে ‘হেপাটাইটিস বি’ চিকিৎসায় নতুন পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য গবেষণা করেছেন। ‘হেপাটাইটিস বি’র বিরুদ্ধে মানুষের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণ করাই ছিল তার গবেষণার বিষয়।

জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে ‘হেপাটাইটিস বি’ রোগীদের ওপর একাধিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা করা হয়। এ বিষয়ে নানা আন্তর্জাতিক জার্নালে তার একশরও বেশি গবেষণাপত্র প্রকাশ পায়।

অন্যদিকে বিএসএমএমইউর লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুন-আল-মাহতাব বাংলাদেশে ১ হাজার ‘হেপাটাইটিস বি’ রোগীর ডাটাবেজ করেন, যা থেকে নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরিচালিত গবেষণার ফল তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মেডিকেল জার্নালে ডা. মাহতাবের ১৫টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবরের গবেষণা খুবই ফলপ্রসূ।

বাংলাদেশে ক্রনিক ‘হেপাটাইসিস বি’ রোগীদের চিকিৎসায় ‘ন্যাসভ্যাক’ পদ্ধতি প্রয়োগের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে ১৮ জন রোগীর ওপর ‘ন্যাসভ্যাক’র ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ফেজ-১ ও ফেজ-২ পরিচালিত হয়। এ ট্রায়ালের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ছিলেন ডা. মাহতাব আর কো-প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ও আন্তর্জাতিক কল্যাবরেটর ছিলেন ডা. আকবর। এতে ‘ন্যাসভ্যাক’ পদ্ধতি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং বর্তমানে ‘হেপাটাইটিস বি’র চিকিৎসায় ব্যবহৃত অন্য সব ওষুধের তুলনায় অধিকতর নিরাপদ হিসেবে প্রমাণিত হয়।

ট্রায়ালে দেখা যায় ন্যাসভ্যাক ব্যবহারে শতকরা ৫০ শতাংশ ক্রনিক রোগীর রক্ত থেকে ‘হেপাটাইটিস বি’ ভাইরাস সম্পূর্ণ নির্মূল হয়েছে এবং শতকরা ১০০ ভাগ রোগীর লিভারের প্রদাহ পুরোপুরি ভালো হয়েছে। এ ফল এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় লিভার অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক প্রকাশিত এবং পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষস্থানীয় লিভারবিষয়ক জার্নাল হেপাটোলজি ইন্টারন্যাশনাল এ এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।

কিউবার সরকারি রিসার্চ প্রতিষ্ঠান ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবরের গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে ‘হেপাটাইটিস বি’ রোগের চিকিৎসায় ‘হেবার-ন্যাসভ্যাক’ নামে একটি নতুন ওষুধ তৈরি করেছে, যাতে কিউবা অত্যন্ত সাফল্যজনক প্রমাণিত হয়। ‘ন্যাসভ্যাক’ সম্প্রতি কিউবার ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের রেজিস্ট্রেশন লাভ করেছে। কিউবায় এ ওষুধটির বাণিজ্যিক নাম ‘হেবার-ন্যাসভ্যাক’। বর্তমানে রাশিয়া ও চীনে ন্যাসভ্যাকের মাল্টিসেন্টার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। আশা করা যায়, ওষুধটি ২০১৮-১৯ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী বাজারজাত হবে।

ডা. আকবর ও ডা. মাহতাবের এ গবেষণাটি বাংলাদেশে প্রথম কোনো অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের মলিকুলার ট্রায়াল। এটিই বাংলাদেশের জন্য প্রথম কোনো পদ্ধতি, যা ক্রনিক ইনফেকশনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রেজিস্ট্রেশন অর্জন করে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে অদূরভবিষ্যতে ক্যান্সারের ওষুধ তৈরি করা সম্ভব হবে বলে জানান গবেষকরা।

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম /১০.২৯এএম/২৫//২০১৭ইং)