• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫০ অপরাহ্ন

সাদুল্যাপুরে লিচু বাগানের মুকুলের মৌ মৌ গন্ধ


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১৮, ২০১৭, ১১:১৯ AM / ৩১
সাদুল্যাপুরে লিচু বাগানের মুকুলের মৌ মৌ গন্ধ

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা : ফাল্গুন মাসে বসন্তের শুষ্ক হাওয়ায় যতদূর চোখ যায় শুধুই সবুজের সমাহার। আর এরই সাথে ছড়িয়ে পড়েছে কৃষক আলহাজ্ব রইচ উদ্দিন ফারাজির লিচু বাগানের মুকুলের মৌ মৌ গন্ধ। গত মৌসুমের তুলনায় এবার প্রাকৃতিক আবহাওয়ার ভারসাম্য ঠিক থাকায় সিংহভাগ লিচু গাছে প্রত্যাশিত মুকুল এসেছে তার বাগানে। আর এসব মুকুল থেকে বাম্পার ফলনের আশায় ইতিমধ্যে তিনি বাগানে সার-কীটনাশক প্রয়োগ সহ বিভিন্ন পরিচর্যায় ছেলেদের ব্যস্ত করে তুলেছেন।  আর এই মুকুল থেকে লিচুর বাম্পার ফলন পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন রইচ উদ্দিন।
গাইবান্ধা জেলার সাদুল্যাপুর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের মৌজা জামালপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান ফারাজির ছেলে কৃষক আলহাজ্ব রইচ উদ্দিন ফারাজি।  বয়স ৭৫-এ ছুঁইছুঁই করছে। দাম্পত্ব জীবনে তিনি ৫ পুত্র ও ৩ কন্যা সন্তানের জনক।  কৃষি ফসলের উপর নির্ভশীল তার পরিবার।

এদিকে ধান বা অন্যান্য ফসল উৎপাদন করে তেমন লাভবান না হওয়ায় তিনি লিচু চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি দীর্ঘ এক যুগ আগে বানিজ্যিক ভিত্তিতে লিচু চাষ শুরু করেন।

তার পৈত্রিক ভিটার জমি ছিল উচুঁতে। আশপাশের জমি বেলে, বেলে-দোঁয়াশ মাটি হওয়ায় ধান, পাট ও শাক-সবজি উৎপাদন হতো কম। তাই একদিন সকলের কথা উপেক্ষা করে তিনি লিচুর চাষ শুরু করেন।

প্রথমে বসতভিটার জমিতে দুটি লিচুর চারা রোপন করেন। বছর দুয়ের মধ্যে গাছ দু’টিতে লিচু আসে। লিচুর স্বাদ ও ফলন হয় খুব ভালো। এতে তার লিচু চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। সেই থেকে ২০০৪ ইং সালে তৈরী করেন লিচু বাগান। বর্তমানে তার দেড় একর জমির উপর রোপনকৃত লিচু বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির চায়না-থ্রি, বোম্বাই, মাদ্রাজি ও বেদানাসহ দেশীয় জাতের প্রায় ৩৫০টি লিচু গাছ রয়েছে।

লিচু বাগান দেখতে গিয়ে কথা হয় বৃদ্ধ চাষী রইচ উদ্দিন ফারাজির সাথে।  তিনি বলেন, প্রতিটি গাছের সারি থেকে সারির দুরুত্ব ১২ ফুট।  প্রতি মৌসুমে বাগানে সার-কীটনাশক, শ্রমিক, পরিচর্যা ও পরিবহন বাবদ ব্যয় হয় প্রায় এক লক্ষ থেকে সোয়া লক্ষ টাকা। এবারে সিংহভাগ লিচু গাছে প্রত্যাশিত মুকুল এসেছে।  আবহাওয়া অনুকুল পরিবেশে থাকলে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে প্রায় ৭ লক্ষাধিক টাকার নীট মুনাফা আয় করা সম্ভব। প্রতি মৌসুমে তার বাগানের লিচুর গুণগতমান ভাল হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিশেষ করে ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা ও চট্রগ্রাম জেলা থেকে আগত লিচু ব্যবসায়ীরা ভির জমান তার দর্শনীয় এ লিচু বাগানে।

আরও জানান, বাগানের লিচু পরিপক্ক হওয়ার আগেই আগত ব্যবসায়ীদের নিকট অগ্রিম বিক্রি করেন। এতে তার শ্রমিক ও সময় একদিকে যেমন সাশ্রয় হয় তেমনি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আতঙ্ক থেকে নিরাপদ থাকেন।

লিচু বাগানে পরিচর্যারত চাষী রইচ উদ্দিন ফারাজির ছেলে স্কুল শিক্ষক আজিজ ফারাজি খাজার সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, লিচুর মৌসুম শেষে বাগান গাছের কর্তনকৃত ডাল-পালা ও পাতা বছর ব্যাপী জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও লিচুর কলম কেটে চারা বানিয়ে বাজারজাত করে প্রায় ২০-২৫হাজার টাকা অতিরিক্ত আয় করে থাকেন।

এভাবেই দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বাগানের লিচু বিক্রি করে বর্তমানে তিনি সংসারে ফিরে এনেছেন আর্থিক স্বচ্ছোলতা। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লিচু চাষে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে তার। মেধা, শ্রম আর কাজের প্রতি অদম্য স্পৃহা থাকলে যে কোন কাজেই সফল হওয়া যায়, সেটা প্রমাণ করেছেন বৃদ্ধ কৃষক রইচ উদ্দিন ফারাজি।

তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, কৃষি বিভাগের সহায়তা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও উৎপাদিত লিচু সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হতো।
কৃষক রইচ উদ্দিন ফারাজি লিচু বাগানে সাফল্য অর্জন ক্ষান্ত হননি। তিনি লিচু বাগান চাষে অনেককে উৎসাহ যুগিয়েছেন। তার এ সাফল্যকে অনুকরণ করে ওই এলাকার রফিকুল ইসলাম, শাহ আলম ও আবু তালেব সহ আরও অনেকে লিচু বাগান করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। মৌজা জামালপুর গ্রাম এখন লিচু বাগান  হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এলাকার আবাল-বৃদ্ধ চাষী রইচ উদ্দিন ফারাজিকে এখন লিচু ফারাজি নামে চেনেন ও জানেন।

সাদুল্যাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. ফজলে এলাহী জানান, কৃষক রইচ উদ্দিন ফারাজির লিচু বাগানটি চোখে পড়ার মত। লিচু চাষ করে সফলতা আনা সম্ভব এটা তারই দৃষ্টান্ত। ফলে এলাকায় দিন দিন লিচু চাষে ঝুঁকে পড়েছে কৃষক। তিনি এলকার লিচু চাষীদের আশানুরুপ ফলন পেতে বাজারজাত করণে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১১:১০এএম/১৮/২/২০১৭ইং)