• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০১:২২ অপরাহ্ন

‘যুক্তি-তর্ক দিয়ে আদালতেও পুরুষের সমান ভূমিকায় নারী’


প্রকাশের সময় : মার্চ ৫, ২০১৯, ৬:৪৩ PM / ৫২
‘যুক্তি-তর্ক দিয়ে আদালতেও পুরুষের সমান ভূমিকায় নারী’

সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি : সাম্যের গান গাই- আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই। কাজী নজরুল ইসলামের নারী কবিতার এই দুটি লাইন যেনো এ কালের নারী জাগরনের এক অমর বার্তা বহন করে চলেছে। সেকেলে ধ্যান-ধারনার বাইরে আজকাল নারী আদালতেও পুরুষের সমান ভূমিকা রেখে চলেছে। মানুষের অধিকার রক্ষায় যুক্তি-তর্ক দিয়ে লড়াই করে চলেছে তারা।

প্রিয় পাঠক, আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে আমাদের বিশেষ সাক্ষাৎকার বিভাগে আজ যুক্ত হয়েছেন- বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর ও নারায়ণগঞ্জ জেলা যুব মহিলা লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক এডভোকেট জাসমীন আহমেদ। আইন পেশা ও রাজনীতিতেও যিনি সমান তালে কাজ করে চলেছেন।

নারী হিসেবে নিজ পেশায় কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে এডভোকেট জাসমীন আহমেদ বলেন, একজন পাবলিক প্রসিকিউটর এর দায়-দায়িত্ব অনেক। খুন, মাদক, যৌতুক, নারী নির্যাতন সহ সরকারি সকল মামলায় কাজ করতে হয় আমাকে। আল্লাহর রহমতে বেশ সুনামের সহিত আমি এসব দায়িত্বগুলো পালন করে চলেছি।

নারী নির্যাতন মামলার সংখ্যা আসলে সমাজে থেমে নেই। নারী পাচার থেকে শুরু করে সব ধরনের মামলাই আমাদের কাছে আসে।

এসময় তিনি প্রতিবেদক (সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি) এর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন – আমি যতটুকু দেখেছি সৌদিতে পাচার হওয়া অনেক নারীকে আপনি নিজে উদ্যোগ নিয়ে উদ্ধার করেছেন। সেখানকার কনস্যুলেটের সাথে কথা বলে আপনি তাৎক্ষণিক সেইসব অসহায় নির্যাতিত নারীদের উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে এনেছেন। যে কাজগুলো পুরুষরা করতে সাহস পায়নি তা আপনি করেছেন। জীবনের রিস্ক নিয়ে আপনি এসব কাজ করেছেন। এমনকি তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে এনেও তাদের বেশ কয়েকজনকে কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করেছেন আপনি। এইভাবেই কিন্তু আমরা নারীরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছি।

এক সময়ের তূখোর এ রাজনীতিক বলেন, বর্তমান সরকার জননেত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই নারী বান্ধব। তিনি নিজে একজন নারী, দেশের প্রধান বিরোধী দলের প্রধান একজন নারী, জাতীয় সংসদের স্পীকার একজন নারী। এ থেকে শুরু করে সমাজের নিম্ন শ্রেণী পর্যন্ত কিন্তু এখন শুধু নারীর জয় জয়কার। সুতরাং নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে। বিভিন্ন পেশায় কাজ করতে গেলে নানা ধরনের বাধা বিপত্তি আসবেই। এর মধ্যে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে, কাজ করে যেতে হবে।

জাসমীন আরো বলেন, তবে আমি মনে করি যে অতীতে যেমন আমরা নারীরা যেভাবে বঞ্চিত ছিলাম এবং পিছিয়ে ছিলাম, সেই অবস্থা এখন আর নেই। একটা সময় কিন্তু পুরুষ সহকর্মীরা কতৃত্ব করার জন্য ধমক দিয়ে কথা বলতদ। তবে এখন আমি ধমক খাইনা, উল্টো ধমক দিয়ে দেই। এই বিষয়গুলো প্রতিটা নারীর মাঝে থাকতে হবে।

তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি যখন প্রথম অঅজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে আইনজীবী হয়ে নারায়ণগঞ্জ জজ কোর্টে জয়েন করি তখন আমরা হাতে গুণা কয়েকজন মেয়ে ছিলাম। তখন বিভিন্নজন নানা কথা বলত, নানা ধরনের প্রবলেম ফেইস করতে হয়েছে। কিছু না হলেও অযথা বদনাম করত আমাদের। আমি বলি পাছে লোকে কত কি বলে। মূলত ব্যাপারটা হচ্ছে- ঈর্শ্বা, অর্থাৎ ঈর্শ্বা থেকেই তারা নারীদের দমিয়ে রাখতে চাইত। অথচ আজকে এসকল বাঁধাকে প্রতিহত করে নিজেদের আলাদা পরিচিতি তৈরি করেছে এবং আজ এই জজ কোর্টে(নারায়ণগঞ্জ জজ কোর্ট) প্রায় ১৩শ’ আইনজীবীর মাঝে ২৭০ জন নারী আইনজীববী রয়েছেন। এদের বেশিরভাগই ক্রিমিনাল ও সিভিল এ কাজ করছেন। এছাড়া ২৫টি কোর্টের মধ্যে ৬জন নারী জজ রয়েছেন। এসবই আমি মনে করি নারী নেতৃত্বের আরেক বাস্তব রুপ।

সম্বোধনের ক্ষেত্রে নারী আইনজীবী এবং পুরুষ আইনজীবী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেনো মহিলা আইনজীবী পরিষদ, মহিলা আইনজীবী কেনো বলবে। আমি এর পক্ষে নই। আমার কাছে পেশার ক্ষেত্রে লিঙ্গ উল্লেখ করা জরুরি নয়। আইনজীবী মানে আইনজীবী, তার কোনো আলাদা লিঙ্গ বৈশিষ্ট্য বলা উচিত নয়। এতে করে নারীর অধিকার, নারী নেতৃত্ব আরো বেশি তৈরি হবে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে তিনি দেশের সকল নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন- প্রতিটা নারীর আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত। বাবা-ভাই কিংবা পরিবারের অন্যান্য পুরুষদের পরিচয়ে নয়, নারীর নিজের একটা আলাদা পরিচিতি গড়ে তোলা উচিত। তবেই এই দেশ থেকে লিঙ্গ বৈশম্য দুর করা সম্ভব হবে। (ক্যামেরায় : খাদিজা আক্তার ভাবনা)

ভিডিও সংবাদটি দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-

https://www.youtube.com/watch?v=KtEV1SnZw8M

 

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/৬:৪৫পিএম/৫/৩৩/২০১৯ইং)