• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৩:২৭ অপরাহ্ন

মৃত্যুসজ্জায় পল্লীবিদ্যুৎ কর্মচারী, কতৃপক্ষের অবিচার!


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ৭, ২০১৯, ৬:১৯ PM / ৩৯
মৃত্যুসজ্জায় পল্লীবিদ্যুৎ কর্মচারী, কতৃপক্ষের অবিচার!

মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা : মুন্সীগঞ্জ পল্লীবিদ্যুতে কর্মরত লাইনম্যান গ্রেড-১ মোঃ কাওছার মিয়া গত ২৪-১২-২০১৮ তার নিজ মোটরসাইকেল নিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পুরাতন ভবনের ৪র্থ তলায় I.C.U তে ১১ নং বেডে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
আহত কাওছার মিয়া গত ২৪-১২-১৮ তার মেয়ের পিএসসি রেজাল্ট হওয়ার পর তার সাবেক কর্মস্তল ভাগ্যকূলে যাওয়ার পথে দূর্ঘটনার শিকার হন।

আহত কাওছারের স্ত্রী ঢাকারনিউজ প্রতিনিধিকে জানান, তার সন্তানের লেখাপড়ার জন্যে স্বামীর বদলীর পরও সাবেক কর্মস্থলের বাসাতেই তিনি থাকতেন। স্বামী মাসে ১/২ বার পরিবারের দেখভাল করতে কতৃপক্ষকে অবগত করে বৃহস্পতিবার রাতে আসতেন আর শনিবার ভোরে চলে যেতেন। প্রতিবারের মতো সেদিনও তিনি তার জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জলিলের সাথেই আলদী অফিস থেকে টংগিবাড়ী জোনাল অফিস পর্যন্ত যান। সেখানে আব্দুল জলিল ব্যডমিন্টন খেলতে নেমে কাওছারকে তার বাসায় যাওয়ার জন্যে ছেড়ে দেন। বাসায় আসার পথেই এই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। সেসময় তাৎক্ষণিক তাকে মেডিকেলে ভর্তি করা হলে ডাক্তার জানান, দূর্ঘটনাটি খুবই মারাত্মক, তার শ্বাসনালি ফেটে গেছে, পাকস্থলীতে চাপ লেগে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, চোয়াল ফেটে গেছে, কলিজায় খুব আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে। পরবর্তীতে চিকিৎসার জন্যে কলিজার প্রায় ৮০% অংশ কেটে ফেলা হয়।

তার শরীরের এতটাই রক্তক্ষরণ হয়েছে যে এ পর্যন্ত প্রায় ২৫ ব্যাগ রক্ত তাকে দিতে হয়েছে।

তার স্ত্রী কান্নাজড়িত কন্ঠে জানায়, চিকিৎসা বাবদ তার প্রায় ৬ লক্ষ টাকা ব্যায় হলেও অফিস কোনো সহযোগিতা করছেনা। তার সহকর্মীরা চাঁদা তুলে ১ লক্ষ টাকা সহায়তা দিয়েছে।

তিনি আরো জানান, আমি পল্লীবিদ্যুতের জি. এম মোঃ মোবারক উল্লাহ’র কাছে সহযোগিতা চেয়ে ফোন দিলে তিনি আমাকে রেগে গিয়ে বলেন আমরা কি সহযোগিতা করবো? সে কাউকে না বলে বাসায় গেছে। এমতাবস্থায় অফিসিয়াল নিয়মে সহযোগিতা করার কোন ব্যাবস্থা নাই। তারপর আমার স্বামীর বিরুদ্ধে নানারকম অভিযোগ তুলে ধরে। ঘটনাটির পর আমি মানষিক চাপে পড়ে তার সহকর্মীদের সাথে আলোচনা করলে তারা বলেন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জলিল কাওছার মিয়ার বিরুদ্ধে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের কাছে অভিযোগ পত্র দিয়েছে যে আমার স্বামী তাকে বলে আসেনি এবং যতোবার সে বাসায় এসেছে তাও নাকি তার অজান্তেই।

আহত কাওছারের স্ত্রী বলেন, আপনারা অন্যান্য কর্মচারীদের কাছে জিগ্যেস করলে জানতে পারবেন ঐ জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জলিল আমার স্বামীর সাথে একই মোটরসাইকেলে জোনাল অফিসে আসে পরে আমার স্বামী সেখান থেকে রওনা দিয়ে রাস্তায় দূর্ঘটনায় পরে। এটা কেমন বিচার একজন মৃত্যু সজ্জায় থাকা ব্যাক্তির সাথেও কি মানুষ এমন আচরণ করতে পারে? এই বলে সে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে।

বিষয়টি জানার পর আমরা টংগিবাড়ী জোনাল অফিসের (১৭৬৯৪০১৪৭৪) এই নাম্বরে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, ঘটনাটি তাদের আরেক অফিস আলদী ঘটে। পরে সেই অফিসেরই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু কর্মচারী জানান, কাওছারের স্ত্রীর কথা সবই সঠিক, এই জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার কাওছার মিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে নিজে দায়মুক্ত থাকতে চাইছেন। আমরা কেউ কোথাও গেলে তার অনুমতি নিয়েই যাই।

কর্মচারীরা আরো জানান, যে দোষে সে কাওছার মিয়াকে দোষারোপ করছেন সেই দোষে তিনিও দোষী। কারণ, সেও তার নিজ অফিস এরিয়ার ভিতরে থাকেনা। তার স্ত্রীও এই সমিতিতে চাকরি করেন। তারা বাসা নিয়েছেন হেড অফিসে। প্রতিদিন সে হেড অফিস থেকে যাতায়াত করেন। সে জরুরী বিভাগের দ্বায়িত্বে থেকেও কেন সে অফিস এরিয়ার বাইরে থাকেন?

কর্মচারীরা তার বিষয়ে আরো বলেন, তিনি ব্যাপক অনিয়মের সাথে জড়িত, যা আমরা কিছু বলতে পারিনা। বললেই আমাদেরকেও মিথ্যা কথার মাধ্যমে কতৃপক্ষের কাছে দোষী বানিয়ে শাস্তির আওতায় আনবে।

কর্মচারীদেকে অনেক অনুরোধ এর পর তারা জানায় অফিসের সকল কাজ তারা করে, কিন্তু জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হাজার হাজার টাকা লেবার বিল তুলে নিচ্ছে লেবার দেখিয়ে। সকল ইলেকট্রিশিয়ানদের নিকট থেকে প্রতি মাসে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

তার অনিয়মের কোন শেষ নেই। গত ১৬ ই ডিসেম্বরেও সে কর্মচারীদের চাপে রাখতে কাজে পাঠিয়েছে। ঐ দিন শুধু জরুরি অভিযোগ গ্রুপ ছাড়া সকলকে ছুটি দেওয়ার কথা। কিন্তু সে মিটার পরিবর্তন করতে সার্ভিস অর্ডার (কার্যাদেশ) করেন।

কোনো শুক্রবার আমরা ঠিকমতো নামাজ আদায় করতে পারিনা তার দেওয়া কাজের কারনে। তার এই খামখেয়ালি আচরণ এর কারণ হিসেবে কর্মচারীরা বলেন, তার স্ত্রীর আত্মীয় B.R.E.B একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা। তাই সে নিজের খেয়াল খুশী মতন অফিস পরিচালনা করেন।

কাওছার মিয়ার এমন অবস্থায় জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জলিল একবার তাকে দেখতে গিয়েছিল, পরবর্তীতে আর তার খোঁজ খবর নেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করেনি। উপরন্তু তার মিথ্যা অভিযোগ এর ফলে রোগী কতৃপক্ষের কাছ থেকে তার প্রাপ্ত অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরইএন/এসডিপি/৬:২০পিএম/৭/১/২০১৯ইং)