• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২৬ পূর্বাহ্ন

বিমানের জাল টিকিট বেচে মাসে আয় ৩ লাখ!


প্রকাশের সময় : মার্চ ১৫, ২০২৪, ৫:৪৯ PM / ৪৫
বিমানের জাল টিকিট বেচে মাসে আয় ৩ লাখ!

লিখন রাজ : কুয়েত প্রবাসী লিটন মিয়া (৩৭) দেশে ফিরে ভিসা প্রসেসিং সংক্রান্ত কাজ শুরু করেন। তারই ব্যবস্থাপনায় একজন বিদেশে গিয়ে আর ফিরে আসেনি, লিটনের পাওনা টাকাও পরিশোধ করেননি।

এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে নিজেই নামেন প্রতারণায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডিসকাউন্টে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে অন্তত চার লাখ মানুষকে প্রতারণার টোপ ফেলেন।

সাশ্রয়ী দামের টিকিট বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নিতেন, সরবরাহ করতেন জাল টিকিট। অভিনব এ প্রতারণায় বিশেষ করে প্রবাসীদের ফাঁদে ফেলে লিটনের মাসিক আয় প্রায় তিন লাখ টাকা।

ডিসকাউন্টে এয়ার টিকেট বিক্রির অভিনব এ প্রতারণার দায়ে লিটনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

গ্রেপ্তার বাকিরা হলেন- মো. বেল্লাল হোসেন (৪৭) ও মো. রিয়াজ শেখ (৩৫)।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন, একটি কম্পিউটার ও চেকবইসহ ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়েছে।

ঘটনার বিবরণে ডিবি জানায়, কুয়েত প্রবাসী মজনু মিয়া গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তার স্বজন হুমায়ুন কবিরকে জানান, তিনি মে মাসে বাংলাদেশে ছুটিতে আসবেন। কুয়েত থেকে বাংলাদেশে আসা যাওয়ার টিকিটের মূল্য বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে টিকেট কিনতে বলেন।

বাংলাদেশে হুমায়ুন কবিরের কোনো পরিচিত ট্রাভেলস না থাকায় অনলাইনে সান ফ্লাওয়ার ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের খোঁজ পান। যেখানে ১৫ শতাংশ ডিসকাউন্টে (কুয়েত-ঢাকা-কুয়েত) টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। ফেসবুকে দেওয়া ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করলে টিকিট দিতে পারবে বলে জানায়।

ফোনে যোগাযোগ করে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি হুয়ায়ুন কবির যাত্রাবাড়ী ধলপুর এলাকায় লিটন মিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। দেখা করার পর হুমায়ুন কবির মজনু মিয়ার সঙ্গে কথা বলে নগদ পাঁচ হাজার টাকা ও পাসপোর্টের ফটোকপি দেয়। বাকি ৪৭ হাজার টাকা লিটনের দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরে পরিশোধ করে।

টাকা পাওয়ার পর চক্রটি মজনু মিয়ার হোয়াটসঅ্যাপে আল জাজিরা বিমানের টিকেটের কপি পাঠায়। পরবর্তীতে যাচাই করে দেখা যায় টিকিটটি জাল। এরপর লিটনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে লিটন হোয়াটসঅ্যাপে মজনু মিয়াকে ব্লক করে দেয়।

গ্রেপ্তার লিটনের বিষয়ে ডিবি জানায়, চতুর্থ শ্রেণি পাস লিটন মিয়া ২০১২ সালে কুয়েতে ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দেশে ফিরে লিটন ভিসার কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে একজন লিটনের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশ চলে গেলে সে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

লিটন প্রাথমিকভাবে ফেসবুকে সানফ্লাওয়ার ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি পেজ খুলে ১৫ শতাংশ ডিসকাউন্টে টিকেট বিক্রির কথা বলে পোস্ট দেয়। চটকদার বিজ্ঞাপনে বিদেশে কর্মরত শ্রমজীবী লোকজন আকৃষ্ট হয়ে ফেসবুকে দেওয়া ফোন নাম্বারের মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে। তাদের মধ্য থেকে লিটন টার্গেট বাছাই করে ডিসকাউন্ট প্রাইজে টিকেট বিক্রির টোপ ফেলে।

লিটন কাস্টমারদের তার অফিস সিটি সেন্টারের লিফটের ১১ তে বলে জানায় এবং কাস্টমারের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে বলে। লিটনের অবর্তমানে কাস্টমারদের সঙ্গে রিয়াজ কথা বলে। এয়ার টিকেট ক্রেতাদের টাকা পাওয়ার পর তাদের হোয়াটসঅ্যাপে ব্লক করে দেয়।

গত কয়েক মাসে লিটন আনুমানিক চার লাখ লোকের সঙ্গে কথা বলে প্রতারণার টোপ ফেলেছে। প্রতিমাসে তার আনুমানিক আয় তিন লাখ টাকা বলে জানায়।