• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৫ অপরাহ্ন

ফার্নিচার নকসা মিস্ত্রি মোস্তফার বাড়িতে শোকের মাতম


প্রকাশের সময় : মার্চ ১৮, ২০২৪, ১:০৯ AM / ১২৮
ফার্নিচার নকসা মিস্ত্রি মোস্তফার বাড়িতে শোকের মাতম

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি : এক দিন কাজ না করলে যার সংসার চলত না।সব সময় ছেলে মেয়ের লেখা-পড়া আর ওদের ভবিষ্যৎ লইয়া সবসময় ভাবত।এই মানুষটারেই ওরা জানে মাইরা ফালাইলো।এখন আমার সংসার চলাইবো কে,পোলা পাইনরে মানুষ করমু কেমনে, তিনটা বাচ্চা লইয়া কই যামু,কি করমু,কারকাছে জামু কে দেখবো আমাগো।

কথা গুলো বলছিলেন মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় ফার্নিচারের নকশা করা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে নিহত রাজনৈতিক মোস্তফা খালাসী (৪২) তার স্ত্রী সালমা আক্তার এর। মোস্তফা খালাসী টঙ্গীবাড়ী উপজেলার যশলং ইউনিয়নের হাটকান গ্রামের সফি উদ্দিন খালাসীর ছেলে।তিনি বাঘিয়া বাজারে একটি দোকান ভারানিয়ে ফার্নিচারের নকশার কাজ করতেন।

সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের ঢালীকান্দি এলাকার বাসিন্দা রাজন সিকদারের বিরুদ্ধে মোস্তফা খালাসীকে হত্যার অভিযোগ।

সালমা আক্তার ও মোস্তফা একই এলাকার বাসিন্দা।১৫ বছর আগে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়।এ দম্পতির ঘরে অস্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া জান্নাতুল ফেরদাউস(১৪),ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে সামি খালাসী(১২) ও ১১ মাস বয়সি সাবিহা ফেরদৌস নামে তিন ছেলে মেয়ে রয়েছে।

এ দিন সালমা কান্না করতে করতে বলছিলেন,আমাদের ঘরে অভাবছিল।তবে কোন অশান্তি ছিলনা। বিয়ের পর অভাবে কষ্ট করছি,স্বামীর দ্বারা কখনো কষ্ট পাইনাই।আমাদের ঘরে সুখ ছিল।মানুষটা দিন রাত পরিশ্রম করতো আমাদের একটু ভালো রাখার লাইগা।এই মানুষটা ছিল আমাগো একমাএ ভরসা।এখনতো আমাদের সব শেষ হইয়া গেলো।আমাগো ভাঙা একটা ঘর ছাড়া আমাদের কিছুই নাই।পুলা মাইয়া নিয়া পথে বসা ছাড়া কোন উপায় আমি দেখছি না।

এ সময় সালমা আক্তার আক্ষেপের সঙ্গে বলেন,সামান্য নকসা করা নিয়ে কথা-কাটাকাটি হইতে পারে।একটা তাজা মানুষরে কেমনে মাইরা ফেললো।যে আমার স্বামীরে মারলো,আমাদের পথে বসাইলো, আমি তার বিচার চাই।

শনিবার সকালে বাঘিয়া বাজারে ফার্নিচারের নকশা করার জন্য মোস্তফার দোকানে কাঠ নিয়ে আসেন রাজন সিকদার। মোস্তফাকে রাজন তাঁর কাঠে নকশা করে দিতে বলেন। রোজা রেখেছি, হাতে কাজ আছে, বিদ্যুৎও থাকবে না জানিয়ে মোস্তফা নকশা করে দিতে পারবেন না বলে জানান রাজনকে। রাজন বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। এ নিয়ে দুজন তর্কে জড়ান। রাজনের কাঠ দোকান থেকে বাইরে ছুড়ে ফেলে দেন মোস্তফা। এতে রাজন ও মোস্তফা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে রাজন মোস্তফার অন্ডকোষ চেপে ধরেন। পরে তাঁদের দুজনকে দুই দিকে ছাড়িয়ে দেন পাশের দোকানের দোকানিরা। সে সময় মোস্তফা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
নিহত মোস্তফার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদাউস বলে,বাবা আমাদের অনেক আদর করত।কখনো আমার ভাইকে বাবা আর আমাকে মা ছাড়া ডাকদিত না।আমাদের বড় কলেজে ভর্তি করবো। বাবার মত যেনো কষ্ট করতে না হয়,এজন্য পড়াশোনা করিয়ে বড় অফিসার বানাতে চেয়েছিল আমার বাবা।শনিবার ভোরে রাতে বাবার সঙ্গে সেহরি খেয়েছি।সে সময় ছিল বাবার সঙ্গে শেষ দেখা শেষ কথা।ঘুম থেকে উঠে দেখি বাবা কাজে চলে গেছে।সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে শুনি বাবাকে মেরে ফেলেছে।যে আমার বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।আমাদের ভাই বোনদের যে এতিম করেছে আমরা তার বিচার চাই।

মোস্তফা খালাসীর মরদেহ ময়না তদন্ত শেষে শনিবার সন্ধ্যায় হাটকান সামাজিক গোরস্তানে দাফন করা হয়েছে।এ ঘটনায় রোববার সকালে সালমা আক্তার বাদি হয়ে টঙ্গিবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেছেন। এদিকে মোস্তফা হত্যাকান্ডে এলাকায় শোকের ছায়া পড়েছে।স্থানীয়রা খুনি রাজন সিকদারের ফাঁসির দাবি তুলেছেন।

টঙ্গিবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোল্লা সোয়েব আলী বলেন,ঘটনার সঙ্গে জড়িত রাজন সিকদারকে গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।