• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০৬ পূর্বাহ্ন

প্রবাসী নারী শ্রমিক : কর্মসংস্থান নাকি ব্যবসা?(ভিডিও)


প্রকাশের সময় : জুন ২৭, ২০১৯, ৬:৫৬ PM / ১৪০
প্রবাসী নারী শ্রমিক : কর্মসংস্থান নাকি ব্যবসা?(ভিডিও)

সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি : একের পর এক নির্যাতনের শিকার হয়ে দলে দলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফিরছে প্রবাসী নারী গৃহ শ্রমিকরা। প্রতিদিনের সংবাদ মাধ্যমে যা অহরহ প্রকাশ পাচ্ছে। বিশেষ করে গায়ে কাঁটা দেয়া সৌদি আরবে গৃহ শ্রমিকের কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়া বাংলাদেশী নারীদের নানা নির্যাতনের গল্পগুলো এখন আর কারো অজানা নয়। প্রতিদিনের প্রকাশিত সংবাদ থেকে শুরু করে টিভি টক-শোগুলোতে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে বিষয়টিকে নিয়ে।

যাবার আগে এসব নারীদের নামেমাত্র প্রশিক্ষণ, সাবলম্বী হবার মিথ্যে স্বপ্ন দেখিয়ে প্রবাসে পাঠানো এবং সেখানে পাঠানোর পর নির্যাতনের খবর পেয়েও তাদের কাছে জরুরি সাহায্য না পাঠানো সহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো।

সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন মাধ্যমের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে দেশে ফিরে আসা নারীরা বাংলাদেশে ফিরেও পরিবারের কাছে নিগৃহীত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেখান থেকে নানা নির্যাতনের কারণে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে, গৃহকর্তা দ্বারা ধর্ষিত হয়ে গর্ভে অথবা কোলজুড়ে অবৈধ সন্তান নিয়ে দেশে ফিরতে হচ্ছে তাদের। নিজের দুঃখ নিজে অন্তরে রেখে নীরবে কান্না করতে হয় তাদের। প্রবাসে যারা যান, একমাত্র তারাই প্রবাসজীবন কেমন নির্দয় ও নির্মম তার ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।

ঠিকমত খাবার না পাওয়া, পান থেকে চুন খসলে কিংবা বেতন চাইলেই মারধর করা এবং যৌন নির্যাতনসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে শত শত নারী গৃহ শ্রমিক ফিরে আসছে বাংলাদেশে। কেউবা আবার আশ্রয় নিচ্ছেন সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সেফ হোমে তথা সফর জেলে। সেখান থেকে মাসের পর মাস অপেক্ষা শেষে দেশে ফিরতে পারছে তারা। তবে দেশে ফিরেও তাদের অনেকেই নিজ নিজ পরিবার তথা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। অথচ পরিবারকে একটু ভাল রাখার জন্যই বিদেশে পাড়ি জমায় এসব দরিদ্র পরিবারের অসহায় নারীরা।

অনেকের মতে- দীর্ঘদিন ধরে যে সমস্যাগুলো সৃষ্টি হচ্ছে প্রবাসী নারী গৃহ শ্রমিকদের নিয়ে, তা থেকে বেরোবার পথ হতে পারে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর প্রতি সরকারের বিশেষ নজরদারি এবং এসব সহজ সরল ও অশিক্ষিত নারীদেরকে বিদেশে না পাঠিয়ে দেশেই তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে।

সৌদি আরবের সাথে অভিবাসন চুক্তি অনুযায়ী কর্মের খোঁজে নারী শ্রমিক সে দেশে গেলেও ফিরে আসার সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। অভিবাসী নিয়ে কাজ করা বেসরকারি একটি সংস্থা ব্রাক এর তথ্য মতে গত বছর নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরেছেন ২ হাজার ৫০০ নারী, চলতি বছরে এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত নারী কর্মী দেশে ফিরে এসেছে।

ফিরে আসা অধিকাংশ নারীরা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা না থাকা, যুক্তির বাইরে অতিরিক্ত কাজ করানো, দূতাবাস কর্তৃক তদারকির অভাব, মালিকপক্ষ হতে শারীরিক নির্যাতন ও মানসিক প্রহারকে দায়ী করেন।

সৌদিতে নিযুক্ত একটি এজেন্সির দায়িত্বরত কর্মকর্তা তানিয়া আহমেদ জানান, মূলত সমস্যাটা শূরু হয় বেতন থেকে।
যেমন বাংলাদেশ থেকে সৌদি গৃহশ্রমিকের কাজে নেয়ার সময় এজেন্সিগুলো বলে থাকে তাদেরকে ৪০ হাজার টাকা বেতন দিবে, অথচ ওখানে গিয়ে দেখা যায় পাচ্ছে ১৫ বা ২০ হাজার। এছাড়া কনট্যাক্ট পেপারে লিখে বা বলে নেয়া হয় যে ৮ ঘন্টা কাজ করতে হবে। অথচ গিয়ে দেখা যাচ্ছে যে একজন গৃহকর্মীকে কাজ করতে হচ্ছে ২৪ ঘন্টা। অর্থাৎ তারা পর্যাপ্ত রেস্ট পাচ্ছেনা। তার উপর ওখানে খাবারের কষ্ট। সব মিলিয়ে মূল সমস্যাটাই তৈরি করছে বাংলাদেশী এজেন্সিগুলো। তার মতে- এইসব এজেন্সিগুলোর এসব মিথ্যে বলে সহজ-সরল নারীদের সাথে প্রতারণা করার বিষয়গুলো সরকারিভাবে নজরদারি করা উচিত।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদার বলেছেন, মেয়েরা আসছে সেটা সরকারেরই বিশেষ প্রক্রিয়া। সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস এ বিষয়ে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তাদের সেফ হোমে রাখছে। সেখানে কিছুদিন থাকার পর বিশেষ প্রক্রিয়ায় তাদের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন। যারা আসছে সেটা তো এই পদ্ধতিতেই। তবে তাদের দাবি করা সব অভিযোগ সত্য নয় বলেও দাবি করেন ড. নমিতা হালদার।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন সূত্রমতে, প্রতিদিনই সৌদি আরব থেকে গৃহশ্রমিক নারীরা ফিরছেন। ইমিগ্রেশন কাউন্টারে কোনো অভিযোগ না করলেও তারা বাইরে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে সবই বলছে।

তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফেরা এসব নির্যাতিত নারীরা বিমানবন্দরে নেমেই সৌদিতে আর কোনো নারীকে না পাঠানোর দাবিও জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিবছরই সৌদিতে নারী নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ২০১৭ সালে অভিবাসী নারীর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯২৫ জন; যা মোট অভিবাসনের ১৩ শতাংশ। ১৯৯১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত অভিবাসন প্রত্যাশী নারী শ্রমিকদের অভিবাসনে বাধা দেয়া হলেও পরে ২০০৩ এবং ২০০৬ সালে তা কিছুটা শিথিল করা হয়। ২০০৪ সালের পর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নারী শ্রমিকের অভিবাসন হার ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় মোট অভিবাসনের ১৯ শতাংশ। কিন্তু ২০১৬ সালে অভিবাসী নারী শ্রমিকের সংখ্যা নেমে আসে ১৬ শতাংশে এবং ২০১৭ সালে ১৩ শতাংশে।

বিস্তারিত দেখুন আমাদের ভিডিও সংবাদে…………………..

https://www.youtube.com/watch?v=1Q53GLsY1VU&feature=youtu.be

 

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/৬:৫৫পিএম/২৭/৬/২০১৯ইং)