• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০২:০৮ অপরাহ্ন

নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালিত হবে ছিটমহল বিনিময়ের ৩য় বর্ষপূর্তি


প্রকাশের সময় : জুলাই ৩১, ২০১৮, ২:৪৯ PM / ৭০
নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালিত হবে ছিটমহল বিনিময়ের ৩য় বর্ষপূর্তি

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : ২০১৫ সালের ১ আগস্ট। এই দিনে বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডের সাথে সম্পৃক্ত হয় ভারতীয় ছিটমহলগুলো। ফলে বিলুপ্ত ছিটবাসীর কাছে এটা একটা বিশেষ দিন। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে তারা দিনটি পালন করবে। দিনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সন্ধ্যা ৭টায় আলোচনাসভা, রাত ৯টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাত ১২টা ১ মিনিটে ৬৮টি মোমবাতি প্রজ্জ্বলন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পমাল্য অর্পণ। দু’দিন ব্যাপি অনুষ্ঠানের পর দিন থাকছে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, আনন্দ র‌্যালি, ক্রীড়া অনুষ্ঠান এবং পুরস্কার বিতরণ। অনুষ্ঠানগুলি হচ্ছে দেশের বৃহত্তম ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার কালিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গনে। সাবেক ছিটমহলবাসী পক্ষে বিলুপ্ত ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সভাপতি আলতাফ হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা খানসহ অন্যান্য নেতারা অনুষ্ঠানের দায়িত্বে রয়েছেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকছেন কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মন্ডল, সাবেক এমপি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাফর আলী, ফুলবাড়ী আওয়ামীলীগের সভাপতি আতাউর রহমান শেখ ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গোলাম মোস্তফা খান।
ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে আমূল পরিবর্তন এসেছে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রায়। মাত্র তিন বছরে যেন সোনার কাঠির ছোঁয়ায় উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে পুরো এলাকা। ৬৮ বছর ধরে শৃংখলিত অন্ধকার অমানিশায় নিষ্পেষিত জীবন এখন উড়ন্ত পায়রায় মতো মুক্ত স্বাধীনতার ছোঁয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে। হাসিখুশি মুখগুলো জানান দিচ্ছে বর্তমান সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতার পরশ।
কালিরহাট বাজারের সাইফুল, হাবীব ও সোলায়মান জানান, আমরা যেন স্বপ্নের ঘোরে বসবাস করছি। এখনো বিশ^াস এটা কি করে সম্ভব হল। একসময় অন্ধকারে, অনাহার আর অত্যাচার মধ্যে জীবনকে সপে দিয়েছিলাম আমরা। এখন ঘুচে গেছে সমস্ত বঞ্চনা। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা  প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো, প্রশস্ত মসৃন পাকা রাস্তা, ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন, সৃদৃশ্য মসজিদ, মন্দির, বিটিসিএল অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ, ডিজিটাল সেন্টার, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা পেয়েছি। এ যেন আলাদীনের চেরাগের ষ্পর্শে বদলে গেছে এক নতুন জনপদ দাসিয়ারছড়া। ১ আগষ্ট ছিটমহল বিনিময়ের ৩ বছর পূর্তিতে প্রত্যাশার চেয়ে বেশী প্রাপ্তি থাকায় খুশি বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারা।
এখান লোকজন জানান, প্রতিটি পরিবারের ছেলে-মেয়েরা স্থানীয় স্কুল-কলেজে পড়ার সুযোগ ছাড়াও দেশের বড় বড় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ছে। অনেকেই বিভিন্ন সরকারি-বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে। এখন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে যে সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, তার সবই পাচ্ছে সাবেক ছিটমহলের অধিবাসীরা।
এলজিইডি সুত্রে জানা গেছে, গত দু’বছরে বিশেষ বরাদ্দ প্রায় ২২ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ হয়েছে দাসিয়ারছড়ায়। এর মধ্যে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন,  ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এলজিইডির মাধ্যমে ২৪ কিলোমিটার পাকা রাস্তা তৈরী হয়েছে দাসিয়ারছড়ায়। ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে কালিররহাটে কমিউনিটি রির্সোস সেন্টার,  ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫টি মসজিদ, ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি মন্দির,  ২ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ব্রিজ, ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০টি হত দরিদ্র পরিবারের বসতবাড়ী নির্মাণ উল্লেখযোগ্য।
অন্যদিকে ভূমি জটিলতার বিষয়টি সম্পুর্ণভাবে নিরসন করা গেছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন ১ হাজার ৬৪৩ দশমিক ৪৪ একর ও সরকারি খাস খতিয়ান ভুক্ত ৯ একর জমির প্রাক জরিপ শেষ করে খতিয়ান হস্তান্তর করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত কল্পে স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক ৩টি  কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে। দেয়া হয়েছে দ্রুত গতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরকারের সর্বোচ্চ মহল এখানকার সুবিধা অসুবিধার খোঁজ নিচ্ছেন । ডিজিটাল সাব সেন্টার থেকে স্বল্পমূল্যে দেয়া হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির সেবা। উপজেলা কৃষি অফিসার অর্থায়নে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও কৃষি যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে।  দাসিয়ারছড়ায় ঘরে ঘরে সুপেয় পানি আর স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়েছে।  আত্বকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বেকার যুব ও যুব মহিলাদের দেয়া হয়েছে নানা ট্রেডে প্রশিক্ষণ।
দাসিয়ারছড়ার সাবেক পঞ্চায়েত প্রধান নজরুল ইসলাম, আব্দুল হাকিম, আব্দুল জলিল, নুর আলম মাস্টার জানান, এখন তারা বাংলাদেশের নাগরিক পরিচয় দিতে পেরে আনন্দিত ও গর্বিত। তবে সর্ববৃহৎ ভারতীয় ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় প্রায় ৬ হাজার লোক বাস করলেও পৃথক ইউনিয়নের দাবী উপক্ষিত থেকেছে। ইউনিয়নের দাবীতে অনেক আন্দোলন করেও লাভ হয়নি। সংলগ্ন ৩টি ইউনিয়নের সাথে দাসিয়ারছড়াকে একিভূত করে দেয়া হয়েছে। এতে নিজেদের নেতা নির্বাচন করার অধিকার হারিয়েছেন তারা। ফলে তারা উন্নয়নের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হবার আশঙ্কায় আছেন। স্থানীয় কৃষক মানিক মিয়া বলেন, ‘হামার নিজের একটা ইউনিয়ন আর চেয়ারম্যান পাইলোং না।’
সাবেক ছিটমহল আন্দোলনের নেতা গোলাম মোস্তফা ওই মইনুল হক বলেন, ‘আমাদের প্রাণের দাবী দাসিয়ারছড়া ইউনিয়ন ঘোষণা না হলেও যেভাবে উন্নয়ন কাজ তিন বছরে হয়েছে তাতেই আমরা সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।’
এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও বলেন, ‘বিলুপ্ত ছিটমহলের অবরুদ্ধ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর। এছাড়াও গত তিন বছরে বিলুপ্ত ছিটমহলে সরকারী ও বে-সরকারিভাবে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এবং উন্নয়নের কাজ চলতে থাকবে।’

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/২:৪৫পিএম/৩১/৭২০১৮ইং)