• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১৮ অপরাহ্ন

কুড়িগ্রামে বোরোতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে কৃষক দিশেহারা


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২৩, ২০১৮, ৭:৩৩ PM / ৫৮
কুড়িগ্রামে বোরোতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে কৃষক দিশেহারা

 

ঢাকারনিউজ২৪.কম, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগের কারণে ফলন হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পরেছে কৃষক। মাঠে ধান আছে। থোকা থোকা শীষও বের হয়ে গেছে। সেগুলো শুকিয়ে সাদা হয়ে চিটাতে পরিণত হয়েছে। ফলে মাঠভরা ফসল থাকলেও সেগুলো ঘরে তুলতে পারছে না তারা। অনেক কৃষক ধানের এ অবস্থা দেখে মাঠেই অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে।
সরজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের উল্টর নওয়াবশ গ্রামের কৃষক সেলিম(৩৮) বলেন,৬০হাজার টাকা খরচ করে এবার ৩একর জমিতে ২৮ধান আবাদ করেছেন। ধানের শীষ বের হয়েছে। ইতোমধ্যে শীষের গোড়ায় ব্লাষ্ট রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ঔষধ স্প্রে করেও কোন লাভ হচ্ছে না। ব্লাষ্ট রোগ ধরার কারণে ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। একই এলাকার কৃষক তালেব(৫০) ২বিঘা জমিতে ২৮ধানেও একই অবস্থা। যাত্রাপুর ইউনিয়নের ছত্রপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম(৪২) বলেন,এবার ৬বিঘা জমিতে ২৮ধান আবাদ করেছি। বিঘা প্রতি ৫হাজার টাকা করে খরচ গেছে। ব্লাষ্ট রোগে ইতোমধ্যে ১৫শ টাকার ঔষধ স্প্রে করেও কোন লাভ হয় নাই। তাই আক্রান্ত হওয়া ধান গাছ কেটে খড় করে গুরুকে খাওয়ানো হচ্ছে। এই এলাকার কৃষাণী আমেনা বেগম(৪৫) জানান,১৫হাজার টাকা সুদের পর নিয়ে ২বিঘা জমিতে ২৮ধান আবাদ করেছি। ফলন তুলে সেই টাকা শোধ করার কথা ছিল। কিন্তু ধান চিটে হয়ে যাবার কারণে দুিশ্চন্তা পড়েছি কিভাবে সুদের টাকা শোধ করব।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, চলতি বোরো মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ১১ হাজার ৮৪২ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৪৭ হেক্টর। ফলন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ লাখ ৬১ হাজার ৯১৫ মেট্রিক টন। এরমধ্যে হাইব্রিডে ৪ দশমিক ৭৬মে.টন, উফশি ব্রিধান-২৮ এ ৩ দশমিক ৯৩ মে.টন এবং স্থানীয়তে ১ দশমিক ৯৪ মে.টন। এবার ৯টি উপজেলার মধ্যে কুড়িগ্রাম সদরে-১৪হাজার ১৮৫হেক্টর, উলিপুরে-২১হাজার ৯৭৫হেক্টর, চিলমারীতে-৬হাজার ৮শ হেক্টর, রৌমারীতে-১০হাজার ১৫০হেক্টর, রাজিবপুরে-২হাজার ৭১০হেক্টর, ভূরুঙ্গামারীতে-১৬হাজার ২৭৫হেক্টর, নাগেশ^রীতে-২১হাজার ৮১২হেক্টর, ফুলবাড়িতে-১১হাজার ৬৫০ হেক্টর এবং রাজারহাটে-১২হাজার ১৯০হেক্টর ধান আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে কৃষি বিভাগের তথ্যমতে জেলায় ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ফসলের সংখ্যা ১১ দশমিক ১৫ হেক্টর জমিতে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এই সংখ্যা ৭০ থেকে ৮০ হেক্টর জমিতে ছড়িয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
বর্তমানে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও ক্ষতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে শতশত একর ফসলী জমির কৃষকদের। বোরো ধান ক্ষেতে শীষ বেরোনোর সাথে সাথেই ব্লাষ্ট ভাইরাসে আক্রমণে রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ধান ক্ষেত। এতে ধান দেখা গেলেও ধানের ভিতরে নেই কোন চাল। ফলে চিটে হচ্ছে ফসল। প্রথমে শীষের গোড়া পঁচে যায়। এতে করে ধান গাছের উপরি অংশে রস পৌঁছতে না পারায় তা দানা পুষ্ট হতে পারেনা। শুকিয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে শীষ বের হওয়া ধান ক্ষেত। কৃষি অধিদপ্তর থেকে মিলছেনা কোন সদুত্তর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আব্দুর রশীদ জানান, ব্লাষ্ট রোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা এখনো শুরু হয়নি। জেলায় ব্লাষ্ট রোগ তেমন ব্যাপক আকার ধারণ করতে না পারে সেজন্য তৎপর রয়েছে কৃষি বিভাগ। স্টেনজা,ট্রুপার, সেলটিমা,উল্কা, নোভিটা ঔষধ জমিতে স্প্রে করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। দিনে ও রাতে আবহাওয়ার তারত¤্র থাকায় থাকায় পাতা ব্লাষ্ট, গিট ব্লাস্ট এবং নেক ব্লাস্ট ভাইরাসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এজন্য কৃষকদেরকে জমিতে পানি ধরে রাখা এবং ধানের শীষ বের হবার আগে ও পরে দু’ বার স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/৭:৩২পিএম/২৩;৪;২০১৮ইং)