• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১২:৪০ অপরাহ্ন

অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসাব দিতে অনাগ্রহী


প্রকাশের সময় : মার্চ ২৮, ২০১৭, ১:১৯ PM / ৪১
অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসাব দিতে অনাগ্রহী

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের (বিওটি) সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা কৌশলে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষা (অডিট) প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) জমা দিচ্ছেন না।

ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯৫টি। এর মধ্যে মাত্র ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয় হালনাগাদ তথ্য দিয়েছে। বাকি ৭৭টির অডিট রিপোর্ট অনিয়মিত। আইনের তোয়াক্কা না করায় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন- ২০১০ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিওটি (বোর্ড অব ট্রাস্টি) সদস্য বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো আর্থিক সুবিধা নিতে পারবে না। আইনের ৪৫ ধারা অনুযায়ী, প্রতি অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষা করাতে হবে। এ প্রতিবেদন পরবর্তী আর্থিক বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। এ ধারা লঙ্ঘিত হলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ বাতিলের নির্দেশনা রয়েছে।

৪৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। আইনের ১৪, ২৫ ও ২৬ ধারা অনুযায়ী, অর্থ কমিটি গঠন ও পরিচালনা করতে হবে।

অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় অর্থ কমিটির কোনো সভা হয় না। নেই কোনো কোষাধ্যক্ষ। যেখানে কোষাধ্যক্ষ আছে, সেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মালিকপক্ষের পছন্দের লোককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

আইনের তোয়াক্কা না করে বিওটি সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ভুয়া কাগজপত্র ও স্বাক্ষর জাল করে সংরক্ষিত তহবিলের (ফান্ড) বিপরীতে ব্যাংক থেকে ঋণও নিচ্ছেন তারা- এমনও অভিযোগ রয়েছে।

প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আট ক্যাটাগরিতে মোট ১২ জন সিন্ডিকেট সদস্য রয়েছেন। মিটিংয়ে উপস্থিত থাকার জন্য একজন সিন্ডিকেট সদস্য মাথাপিছু সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত সম্মানী নিচ্ছেন। প্রমোদ ভ্রমণের জন্য অনেক সময় বিদেশেও সিন্ডিকেট মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়। এভাবে বিভিন্ন বৈঠকের নামে বিওটির সদস্যরা সম্মানীর নামে বছরে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। কেনাকাটাতেও চলছে অনিয়ম, দুর্নীতি। ইউজিসির তদন্ত রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গত বছর ইউজিসি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে হস্তান্তর করে। এতে সনদ বিক্রি, সিন্ডিকেটের নামে অর্থ আত্মসাৎ, গবেষণাখাতসহ ১৬ ধরনের আর্থিক দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৯৫টি। এর মধ্যে গত বছর ৮৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আয় ছিল প্রায় দুই হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। গড়ে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় আয় করেছে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা। অপরদিকে, গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্যয়ও করেছে প্রায় দুই হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা। আয়-ব্যয় সমান দেখিয়েছে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়। আয়-ব্যয় কীভাবে সমান হয় তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে ইউজিসির।

ইউজিসির তথ্যানুযায়ী, প্রায় দুই যুগ আগে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ইউএসটিসি)। ২৩ বছর ধরে এ বিশ্ববিদ্যালয় অডিট রিপোর্ট ইউজিসিতে জমা দেয়নি। আদৌ বিশ্ববিদ্যালয়টির হিসাব নিরীক্ষা করানো হয় কিনা, সে তথ্যও ইজিসিতে নেই। একইভাবে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ২৩ বছরের কোনো অডিট রিপোর্ট নেই। পুন্ডু ইউনিভার্সিটির নেই ১৬ বছরের, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটির ১১ বছরের, রয়েল ইউনিভার্সিটির ১৩ বছরের অডিট রিপোর্টের তথ্য নেই।

এ ব্যাপারে ইউজিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সিএ (চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট) ফার্মের মাধ্যমে হিসাব নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা। সিএ ফার্ম নিয়োগ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যে কারণে প্রতিবেদন দাখিল করা প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া অন্য কেউ সিএ ফার্ম চেয়েছে কিনা, তাও আমাদের জানা নেই।

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম /০১.১৮ পিএম/২৮//২০১৭ইং)