• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৭:০৭ অপরাহ্ন

হেফাজতের সঙ্গে কখনো আপস করেনি আওয়ামী লীগ


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ৩০, ২০১৭, ৭:২৫ AM / ৫৬
হেফাজতের সঙ্গে কখনো আপস করেনি আওয়ামী লীগ

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

আওয়ামী লীগ হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে কোনো আপস করেনি বলে দাবি করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, বিষয়টি ধীরে ধীরে পরিষ্কার হবে। গত বৃহস্পতিবার নিজ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কালের কণ্ঠকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে তিনি এ কথা বলেন। ওই সময় হেফাজতের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জবাব দেওয়া ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজ দল ও সরকারের ভূমিকা, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের প্রস্তুতি সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। সাক্ষাত্কারে উঠে আসে অকাল বন্যায় হাওরাঞ্চলে নেমে আসা বিপর্যয় মোকাবেলায় সরকার ও নিজ দলের ভূমিকার বিষয়টিও।

ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা দাবি করেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে। তৃণমূলে দলটি তাই প্রস্তুতি শুরু করেছে। তবে নির্বাচনকালীন কোনো সহায়ক সরকার থাকবে না বলে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন।

ওবায়দুল কাদের জানান, জাতীয় নির্বাচনের ছয় মাস আগে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত্ত করবে। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে যাঁরা জনগণের কাছে অগ্রহণযোগ্য তাঁদের তালিকা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে হারলেও তৃণমূলে শক্তি দেখে আওয়ামী লীগের আস্থা বাড়ছে। বিএনপি নেতারা অফিসে মারামারি করলেও আওয়ামী লীগ নেতারা কেন্দ্রীয়ভাবে হিমালয় পর্বতের মতো ঐক্যবদ্ধ।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগ একটি আদর্শিক দল, তার সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে। ১৯৪৯ সাল থেকে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল। সামনে দলের আরো একটি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আসছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস ও চেতনা জড়িত। আওয়ামী লীগ এই চেতনা ধারণ করে। তিনি বলেন, ‘সময়ের বিবর্তনে আমরা কিছু বাস্তবতার মুখোমুখি হই। প্রয়োজনে কিছু কৌশলগত পদক্ষেপ নিতে হয়। ট্র্যাডিশনের সঙ্গে টেকনোলজির, আইডিয়ালিজমের সঙ্গে রিয়ালিটির সংমিশ্রণ করতে হয়। এভাবেই সময়ের বাস্তবতায় ইতিহাস-অর্পিত কিছু আবশ্যকতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সামনে যেতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে সামনে যেতে হবে। আধুনিকতার হাওয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সামনে যাওয়া যায় না। ’

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের সামনে ন্যায়বিচারের প্রতীক ‘জাস্টিশিয়া’ ভাস্কর্যটি সরানোর দাবি করছে হেফাজতে ইসলাম। এ নিয়ে তারা নানা হুমকিও দিয়ে আসছিল। একপর্যায়ে গত ১১ এপ্রিল হেফাজতের একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ভাস্কর্য সরানোর দাবি তোলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীও ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে মত দেন। এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলারও প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী। ওই দিন তিনি কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ সনদকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সমমান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ারও ঘোষণা দেন। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ তার আদর্শের সঙ্গে আপস করে না। বিশেষ করে স্বাধীনতার বহুদিন পর মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যই। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের দাবি, যে নেতা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারেন, তিনি আপস করতে পারেন না। হেফাজতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো ঐক্য হয়নি।

ভাস্কর্য সরানোর বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতিকে বলেছেন। এখন এটা প্রধান বিচারপতির বিষয়। এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। যা বলার প্রধানমন্ত্রীই বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর পর্যবেক্ষণ ইতিমধ্যে ব্যক্ত করেছেন। এ নিয়ে সংস্কৃতি অঙ্গনের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গেও আমাদের দলের কার্যালয়ে বৈঠক হয়েছে। আমরা আমাদের অসাম্প্রদায়িক অবস্থান তুলে ধরেছি। ’

হেফাজতের বিভিন্ন দাবি মানার পেছনে ভোটের রাজনীতি জড়িত কি না—জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘হেফাজতের সঙ্গে কোনো গোপন সমঝোতা হয়নি। ভোটের বিষয়টিও এখানে টেনে আনার যুক্তি নেই। কওমি মাদরাসার সব শিক্ষার্থী কি ভোটার? ভোট অন্য বিষয়। কওমি মাদরাসার উচ্চশিক্ষার স্বীকৃতি দেওয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই। ’

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর মতে, কওমি মাদরাসার উচ্চশিক্ষার স্বীকৃতি দেওয়া মানে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে কোনো আপস করা নয়। একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যেক সরকার অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিতে পারে না। তাদের শিক্ষার একটা স্বীকৃতি দেওয়া উচিত—এ ভাবনা থেকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের ৭০ হাজার কওমি মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীদের উপেক্ষা করতে পারি না। আগামী কিছুদিনের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যাবে যে হেফাজতের সঙ্গে আমাদের কোনো আপস হয়নি। নির্বাচনের কিছুদিন আগে কওমি মাদরাসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে প্রপাগান্ডার সুযোগ থাকত। নির্বাচনের বাকি আছে দেড় বছর। তার মধ্যে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। ’

প্রত্যেকের নামে ফাইল হচ্ছে : আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইপ্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যেসব জনপ্রতিনিধি যেসব নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের উসকানি দিয়েছে বা দিচ্ছে তাদের বিষয়ে প্রতিবেদন দলের সভাপতির কাছে জমা আছে। যারা জনপ্রতিনিধি হয়ে গণবিরোধী কাজে লিপ্ত, যাদের আচরণ উন্নয়নের বিরুদ্ধে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে দলীয় নিজস্ব পদ্ধতিতে। বিভিন্ন সংস্থাও তথ্য নিচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের নামে ফাইল হচ্ছে, ভালো ও খারাপ ফাইল। ছয় মাস পর পর জরিপ হচ্ছে। জনগণের কাছে অগ্রহণযোগ্যদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। কিছু জনপ্রতিনিধিকে শোধরানোর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। চূড়ান্ত অ্যাসেসমেন্ট করা হবে নির্বাচনের ছয় মাস আগে। আজ যে খারাপ করছে শোধরানোর সুযোগ দেওয়ায় সে ভালোও করতে পারে। এখনই তাই বলা যাবে না কতজন খারাপ অবস্থায় আছে।

মাঠ চাঙ্গা রাখতে নানা কথাবার্তা : নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বাকপটু কাদের বলেন, সহায়ক সরকারের বিধান পৃথিবীর কোনো ইতিহাসে সেই। অনেকে বলে বসে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাব না। কিন্তু নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চয়তা দিতে পারে এ নির্বাচন কমিশন।

আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের বিষয়ে কাদের বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। তারা তৃণমূলে প্রস্তুতি শুরু করেছে। আমি সারা দেশ ঘুরি। আসলে মাঠ চাঙ্গা রাখতে তারা নানা কথাবার্তা বলছে। ’

বিএনপিকে খাটো করে দেখি না : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কি না এবং অন্যতম বড় দল বিএনপি তাতে অংশ নেবে কি না জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দোষ কোথায়? বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে সরকার কি সুযোগ বা করুণা বিতরণ করবে? নির্বাচনে অংশগ্রহণ একটি রাজনৈতিক দলের অধিকার। আমরা বিএনপি আমলে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। মাগুরাসহ বিভিন্ন নির্বাচনের বিষয়টি এখনো অনেকের জানা আছে। ওই সময় নির্বাচনগুলোতে জালিয়াতির বিষয় ছিল। ’ বিএনপিকে কেন টেনে আনতে হবে—এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিরোধী শক্তির ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম বিএনপি। তাদের খাটো করে দেখি না। বর্তমান নির্বাচন কমিশনে তো তাদের প্রতিনিধি আছে। এই কমিশনের অধীনে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছে। সেখানে আমরা হেরে গেছি। তবে আমাদের টার্গেট ছিল নির্বাচন নিরপেক্ষ করা। সেখানে আমরা হেরে গেলাম-সেটাকে আমরা শুধু এভাবে দেখি না। সব নির্বাচনে কি শুধু জিততেই হবে?’

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম .২১এএম/৩০//২০১৭ইং)