• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৬:৩৪ পূর্বাহ্ন

সৎ ও দক্ষ সাংবাদিকতায় ভরে উঠুক আমাদের মিডিয়া


প্রকাশের সময় : জুলাই ৫, ২০১৮, ৪:০৬ PM / ২৯
সৎ ও দক্ষ সাংবাদিকতায় ভরে উঠুক আমাদের মিডিয়া

সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি : সরকার মোহাম্মদ আব্বাস। দেশের প্রথম সাড়ির জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল Bangla Tribune এর শিক্ষা বিটের সিনিয়র রিপোর্টার। এর আগে banglanews24.com, www.bdnews24.com, Sangbad সহ দেশের প্রথম সাড়ির অসংখ্য সংবাদমাধ্যমে অত্যন্ত সুনামের সহিত বিভিন্ন বিটে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে যার। এই তো সেদিন, সৌদি আরবে আটক বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ৯ নারীকে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য একলাই পথে নেমেছিলাম। খুব কঠিন ছিল প্রতিটি মুহূর্ত। কিন্তু থেমে থাকিনি। পরদেশ থেকে কিছু অসহায় মানুষকে বাঁচিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে একার পক্ষে যেভাবে যা কিছু সম্ভব তা করে চলেছিলাম। চোখের সামনে শুধু ৯ নারীর নির্যাতনের চিত্র ভেসে আসছিল, সেই সাথে তাদের কান্না যেনো অনবরত কানে বেজেই চলেছিল। তাদের বাঁচাতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাজ এগিয়ে নিচ্ছিলাম দ্রুত গতিতে। তবুও কেনো যেনো উৎসাহ পাচ্ছিলাম না। ১৬ মে প্রেসক্লাবের সামনে ৯ নারীকে উদ্ধারের জন্য মানববন্ধনের খবর বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা/অনলাইনে প্রকাশ হলো পরদিন। তবে সেইসব সংবাদগুলোতে তেমন একটা গুরুত্ব পেলো না সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি নামের এই আন্দোলনের পেছনের একমাত্র মানুষটির কথা। যে শুধুমাত্র মানবতাকে পুঁজি করে কিছু মানুষকে নরক থেকে মুক্ত করে ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় রত। কেউ পেছন থেকে টেনে থামাতে চায়, কেউ বাড়াবাড়ি করছি বলেন। তবুও থামিনি। এই বিষয়টাকে নিয়েই প্রচন্ড ব্যস্ততার মাঝেই ১৬ কিংবা ১৭ মে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির আপ্যায়ন সম্পাদক প্রিয় কামাল উদ্দিন সুমন ভাই বললেন- তোমাকে আব্বাস নামে একজন ফোন করবে। আমি বলে দিয়েছি। সৌদির নারী গৃহ শ্রমিকদের নিয়ে তোমার কাজ নিয়ে তাকে সব জানাও। সে নিউজ করবে। সাথে আরো কয়েকজনকে আমার ফোন নাম্বার দিয়েছেন আমার এ শুভাকাঙ্খি বড় ভাই। সাথে সাথেই আব্বাস ভাই ফোন করলেন। সেদিন দুপুর থেকে রাত প্রায় সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত দিনভর সে আমার থেকে বিভিন্ন তথ্য নিলেন। ৯ নারীর পরিবারের সকলের নাম্বার নিলেন, সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, লেবার কাউন্সেলর সহ যেসব স্থানে আমি কথা বলেছি এমনকি বাংলাদেশের এ সংক্রান্ত বিভিন্ন দপ্তরে ফোন করে তিনি একে একে তথ্য নিলেন। অর্থাৎ একটা স্পেশাল রিপোর্ট তৈরি করতে কতশত জায়গায় তার ফোন…..। আহ্ সাংবাদিকতা! এই যান্ত্রিকতা ও কপিপেস্ট সাংবাদিকতার যুগে নির্ভুল ও সঠিক তথ্যনির্ভর একটি তাৎক্ষণিক টপিকের উপর বিশেষ রিপোর্ট তৈরি করতে কত সময় ‌ব্যায় করলেন মানুষটি! এর পাশাপাশি তো তার নিয়মিত ‘শিক্ষা’ বিটের কাজ চলছেই। অবশেষে সংবাদটি প্রকাশ হলো রাতে। প্রথম আমার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য স্বীকৃতি স্বরুপ আমি এবং আমার সেই কাজকে গুরুত্বের সাথে উপস্থাপন করলেন ওই সংবাদে। Bangla Tribune এ বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি সংস্করণেও সমান গুরুত্বের সাথে প্রকাশ হলো সংবাদটি। সবাই জানল সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি নামের একজন সাধারন গণমাধ্যমকর্মী ও মানবাধিকার কর্মী ভিনদেশে আটক ৯ জন নারীকে দেশে ফেরাতে কত কিই না করছে। এরপর একে একে দেশের প্রথম সাড়ির বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা থেকে শুরু করে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আমাকে খুঁজতে লাগল। ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ করতে লাগল। আমিও ফিরে পেলাম কাঙ্খিত উৎসাহ। যা খুব দরকার ছিল। ব্যাপারগুলো এত বেশি দ্রুত সময়ের মধ্যে হচ্ছিল যে এসব নিয়ে এক্সট্রা ভাবে ভাববার সময় পাচ্ছিলাম না। মাথায় শুধু কাজ করছিল- বিপদগ্রস্থদের ফিরিয়ে আনতে হবে। যাকে যেভাবে পাচ্ছিলাম, শুধু সহযোগিতা নিয়ে যাচ্ছিলাম। এরপর দিন ১৮ মে প্রথম ৫ জন দেশে আসবেন। রাত অনেক হবে। তার উপর এজেন্সি ও দালালদের হুমকি-ধামকি, বিভিন্ন মহলের চাপতো ছিলই। তবুও ভেবেছিলাম- মানবতাবোধ থেকে যেটুকু করার তাতো করে দিয়েছি, এবার তাদের পরিবার এসে তাদেরকে রিসিভ করুক। আমি এবার আমার পত্রিকা ও সংসারের কাজে মন দেই। কিন্তু না, আব্বাস ভাই বললেন- “আপা, এটা বাংলাদেশ। এখানে কাজ করবেন আপনি, কিন্তু ক্রেডিট নেবে অন্যজন। তাই আপনি যান। দিন-রাত এক করে নাওয়া-খাওয়া-ঘুম বাদ দিয়ে নারীদের আনাচ্ছেন আপনি, তাহলে আপনি কেনো তাদেরকে রিসিভ করতে যাবেন না? আপনি এয়ারপোর্ট যাবেন এবং তাদেরকে রিসিভ করবেন। সেই নারীরাওতো প্রথম দেশের মাটিতে পা রেখে আপনাকে দেখতে চাইছে। তাহলে কেনো যাবেন না?” তার কথায় যেনো আরো একবার উৎসাহ পেলাম। মনে হলো আমার কাজ আসলে শেষ হয়নি। তাঁকেও অনুরোধ করলাম এয়ারপোর্ট থাকার জন্য। শত ব্যস্ততার মাঝে তিনিও এলেন।

মোটরসাইকেলের তেল খরচ করে, নিজের মূল্যবান সময় ব্যায় করে। নিজ চোখে দেখলেন সেই নারীদেরকে প্রথম বুকে টেনে নেয়ার আমার সেই আবেগঘন মুহূর্ত। ফের লিখলেন আমি ও আমার কাজ নিয়ে। উৎসাহ পেলাম আরো একবার। যা সেখানে রয়ে যাওয়া বাকি ৪ নারীকেও পরবর্তী ৬ দিনের মধ্যে আগের চেয়েও আরো বেশি যুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনার জন্য প্রয়োজন ছিল। তারাও এলো। আবারো লিখলেন প্রিয় আব্বাস ভাই। দেশ-বিদেশের মানুষ জানল- সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি নামের একজন সামান্য সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী কিছু মানুষের পাশে অদম্য সাহস নিয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন নিস্বার্থ, পেশাগতভাবে অত্যন্ত দক্ষ ও যোগ্য এবং সৎ গণমাধ্যমকর্মী ‘সরকার মোহাম্মদ আব্বাস’ এর কারণে একজন সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি তার ভাল একটি কাজের স্বীকৃতি পেলো লাখো মানুষের ভালবাসায়। এমন একজন আব্বাস ভাই যদি মিডিয়ার প্রতিটি হাউজে থাকত তাহলে এদেশে সাংবাদিকদের মানুষ সাংঘাতিক বলে গালি দিত না। আমি ও আমার এ কাজগুলো আজীবন প্রিয় আব্বাস ভাইয়ের কাছে ঋণি থাকবে। জানিনা কতটুকু কি করতে পেরেছি দেশের মানুষের জন্য। তবে প্রতিজ্ঞা করেছি নিজের সাথে- জীবনে যদি এই ভাল কাজগুলোর জন্য কোনো সম্মান কিংবা স্বীকৃতি পাই, তবে সাংবাদিক আব্বাস ভাইকে ছাড়া তা গ্রহণ করব না। আমার আগে যেনো আব্বাস ভাইকে সম্মান জানানো হয় সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে চাই আমি। ঘুমন্ত আব্বাস ভাইয়েরা জেগে উঠুক আমাদের গণমাধ্যমের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে, এমন এক একজন আব্বাস ভাইয়েরা সমাজের ভাল ভাল কাজে এক একজন প্রীতির উপস্থিতি সকলকে জানিয়ে দিক। আর আমাদের দেশ আবার ভরে উঠুক । স্যালুট প্রিয় আব্বাস ভাই।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/৪:০২পিএম/৫/৭/২০১৮ইং)