• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০২:১৮ অপরাহ্ন

সৌদিতে ফ্রি ভিসা মানে পুরনো প্রতারণার নতুন ফাঁদ!


প্রকাশের সময় : নভেম্বর ৩, ২০১৯, ১১:৫৬ AM / ৬১
সৌদিতে ফ্রি ভিসা মানে পুরনো প্রতারণার নতুন ফাঁদ!

সবুজ আহমেদ : ২০১৫ সালে থেকে সৌদি আরবে বাংলাদেশি শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার পর উল্লেখযোগ্য হারে বাংলাদেশি দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক আসছে।বিশেষ করে ফ্রি ভিসা নামক ফ্রি যন্ত্রণা মাথায় করে বেশীর ভাগ শ্রমিক আসে আর তা কখন আঁচ করতে পারে যখন সৌদি আরবের মাটিতে নেমে বাস্তবতার মুখোমুখি হয়।প্রথম হোঁচট খায় মালিকপক্ষকে খুঁজে না পেয়ে,ফেলেও কাজ থাক আর না থাক মাসে মাসে ৩০০ রিয়াল করে পয়দা দেয়া লাগবে মুখিক শর্তে বাহিরে কাজ করার অনুমতি
দেয় কপিল বা স্পনসরম্যান।ইকামা ফিস বেড়েছে চারগুণ তাও শ্রমিকের ঘাড়ে চাপে,তাছাড়া নিজের খাওয়া খরচ,রুম ভাড়া, পর্যাপ্ত কর্মের অভাব,বাহিরে কাজ করলে অল্প বেতন,ভাষা না জানা,এতসব মোকাবিলা করতে গিয়ে নতুন পরিবেশে আসা একজন শ্রমিকের দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

এই সেই শ্রমিক যাকে বহুবার সতর্ক করা হয়ে ছিলো পিতা,অভিভাবক বড় ভাই,নিকট প্রতিবেশী ইবেন মন্ত্রনালয় হতেও,এমন ভিসায় না আসতে,আসলে নাজেহাল হতে হবে তখন সে কারো কথা শোনেনি,বেশির লোভে দু’দেশের ভিসা ব্যবসায়ী স্বদেশী দালালের দেয়া টোপ গিলে খেয়েছে।কি আর করা কাঁটাতো আটকে গেছে গলে এখন তো আর উগরে ফেলানো যাচ্ছে না।

দীর্ঘ প্রায় বছরের আপন অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। সৌদিতে ফ্রি ভিসা বলে কোনো ভিসা ইস্যু হয় না।ফ্রি ভিসার বিষয়ে কিছু অসাধু সৌদিচক্র আঁতাত করে বাংলাদেশি দালালদের তাদের মাধ্যমে ফ্রি ভিসার কথা বলে অসহায় প্রবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা করে মোটা অহংকার অর্থ হাতিয়ে নেয় ।

সৌদিতে এই ভিসা বেকার ভিসা হিসেবে প্রচলিত। কারণ এ ধরনের ভিসা দিয়ে যারা আসে তাদের সবাইকে কাজ খুঁজে নিতে হয়, কাজ পাওয়ার আগ পর্যন্ত নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে এমনকি বাড়ি থেকে অর্থ এনে থাকা-খাওয়া চালিয়ে যেতে হয়।

ফ্রি ভিসা কিছু অসাধু বাংলাদেশি দেশটির প্রশাসনকে অস্থায়ী অফিস দেখিয়ে কোম্পানির আদলে শুধু ভিসা বের করার জন্য একটা ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করে।এ লাইসেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশিদের জন্য ফাঁদ ফাঁততে ভিসা ইস্যু করে, সেই ভিসাকে ফ্রি ভিসা বলে বাজারে বিক্রি করে। একটা ভিসা ইস্যু করতে বাংলাদেশি টাকায় সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়,কিন্তু সেটি গ্রাহক ধরে বিক্রি করে ৫ থেকে ৮ লাখ টাকায়।

সৌদিতে গত ৪-৫ ধরে ফ্রি ভিসায় যে সব বাংলাদেশি এসেছে তারা কফিলকে (স্পন্সর) চোখে দেখেনি বা সে যে কোম্পানির ভিসা নিয়ে এসেছে সেই কোম্পানির অফিসও দেখার ভাগ্য হয়নি।সৌদিতে ফ্রি ভিসা বলে কোনো ভিসা ইস্যু হয় না,ব্যক্তির হাতে আসলে বা মুখের কথায় ভিসাটি ফ্রি হয়ে যায়।সত্যিকার অর্থে প্রত্যেক ভিসায় ফ্রি না, কোন না কোন পেশা উল্লেখ থাকে।

উল্লেখ্য সৌদিতে বাংলাদেশিদের বাদে অন্যান্য দেশ বিশেষ করে পাকিস্তান নেপাল ভারতীয়রা চাকরি নিয়ে ভিসা বাবদ খরচ হয় সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ হাজার রিয়াল অথচ বাংলাদেশিদের বেলায় ৫০-৬০ হাজার টাকায় দাঁড়ায়। আর ভিসা ব্যবসায়ীদের প্রতারণায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য তা ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা,কত অসম তবুও মানুষ সতর্ক হচ্ছে না।এমন প্রতারণার শিকার হয়ে মানবিক মানবতের জীবন যাপন করতে হচ্ছে ফ্রি ভিসায় আসা প্রবাসীদের।অথচ একজন প্রবাসীর আশায় পথ চেয়ে থাকে একেকটি পরিবার।পরিবারের করুণ অবস্থার কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।উচ্চ ঋণের চড়া সুদ,বসত ভিটা বন্ধুকি জমির লাভ, পরিবারে খরচ, চাকরির খোঁজ, বেতন বকেয়া,বছর শেষে ইকামার মোটা অঙ্কের অর্থ কষ্ট ছাড়াও বিবিধ মানসিক চাপে বাসা বাঁধে শরীরে নীরব ঘাতক রোগ ।

বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বশীল এবং দূতাবাসের কতিপয় কর্মকর্তারা এসব অসাধু ভিসা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কার্যত কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এদের দৌরাত্ম দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। তবে সৌদিতে শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক হারে। পাশাপাশি শ্রমবাজারে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।এসব ভিসা ব্যবসায়ীদের দমন করা গেলে মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ সৌদি আরব অচিরেই বাংলাদেশি শ্রমবাজারে পরিণত হবে।

সৌদি আরবের বিভিন্ন শহর সরেজমিনে ঘুরে এবং ভুক্তভোগী অনেক মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, কিছু অসাধু ফ্রি ভিসা ব্যবসায়ীর কারণে বাংলাদেশি শ্রমিকরা সৌদিতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সুবিধা গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে কিছু মুনাফাখোর অর্থলোভী প্রবাসী বাংলাদেশি শুধু ভিসার ব্যবসা করার জন্য নানান জায়গায় অফিস খুলে বসে আছে, নিজে একজন বাংলাদেশি হয়েও প্রবাসে বাংলাদেশিদের সঙ্গেই প্রতারণা করে যাচ্ছে।
এসব রক্তচোষা ভিসা ব্যবসায়ীদের প্রতারণার কারণে দেশটির স্বনামধন্য কোম্পানিগুলো মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সাথে ব্যক্তি মালিকানাধীন নিয়োগকর্তারাও বাংলাদেশি শ্রমশক্তির নিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছে। চলমান এ অবস্থার জরুরী ভিত্তিতে পরিবর্তন করা না গেলে সৌদিতে পুনরায় বাংলাদেশি শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না বলে অভিমত প্রকাশ করেন দীর্ঘদিন বসবাসরত প্রবাসীরা ।

সবুজ আহমেদঃ লেখক কবিও সংবাদকর্মী
রিয়াদ,সৌদি আরব।
sabujahamed1983@gmail.com
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/কেএস/১১:৫৫এএম/৩/১১/২০১৯ইং)