• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন

‘সহায়ক সরকারের অধীনেই নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে’


প্রকাশের সময় : মে ২৯, ২০১৭, ৩:০৫ PM / ৮১
‘সহায়ক সরকারের অধীনেই নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে’

 

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ঢাকা : সহায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছি। আমরা বার বার বলেছি আমরা নির্বাচন চাই। সেই নিবার্চন হতে হবে অর্থবহ। মানুষের অংশগ্রহণমূলক নিবার্চন। সে জন্য নিরপেক্ষ সরকার অধীনে নির্বাচন দরকার। নিবার্চনের সময় যদি নিরপেক্ষ সরকার না থাকে তাহলে কখনোই নিবার্চন সুষ্ঠু হয় না। সে জন্যই সহায়ক সরকারের অধীনে নিবার্চনের কথা বলেছি। নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।’
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সোমবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৬তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াসহ সবার নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ দিতে হবে। সহায়ক সরকারের অধীনেই নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে।’
জিয়াউর রহমানের কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘উন্নতির শিখরে ওঠার জন্য জাতির লড়াইয়ের সেনাপতি ছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান। তার মৃত্যুতে দেশের কোটি কোটি মানুষ সেদিন কেঁদেছিল জানাযা নামাজে। জানাজা শেষে ইমাম সাহেব যখন দোয়া করেছিলেন বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য। তখনই লাখো মানুষ ডুঁকরে কেঁদেছিলেন। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই দেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেন শহীদ জিয়া।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যখন সমগ্র জাতি কিংকর্তব্যবিমূঢ় তখনই সেই অখ্যাত মেজর জিয়াউর রহমানের কণ্ঠে দেশের মানুষ স্বাধীনতার ঘোষণা শুনতে পান। তারা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। এরপরই আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন বাকশাল কায়েম করেছিল। আজকে তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনলে হাসি পায়। তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে জিয়াউর রহমানকে খাটো করতে চায়। কারণ তিনি যুদ্ধ করেছিলেন। আর আওয়ামী লীগ পালিয়ে গিয়েছিল।’
মির্জা ফখরুল দেশের উন্নয়নে জিয়াউর রহমানের অবদান প্রসঙ্গে বলেন, শহীদ জিয়ার অবদান ছিল অসংখ্য। যেখানেই যান তার অবদান রয়েছে। কোন দিকে তাকাবেন? সবখানে তাকে পাবেন। নারী ও শিশু মন্ত্রণালয় তার সৃষ্টি। চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম গবেষণা কেন্দ্র তার দেওয়া, ঈশ্বরদীতে সুগার রিসার্চ ইনস্টিটিটিউট তার দেওয়া, খামার বাড়িতে গবেষণা কেন্দ্র তার সৃষ্টি। এমনিভাবে অসংখ্য জায়গায় তার নামফলক রয়েছে।’
শহীদ জিয়াকে মিতব্যয়ী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘জিয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২ হাজার টাকার বেশি কখনোই থাকতো না। নিজের একটু জমিও নেই তার। মৃত্যুর পর তার একটা ভাঙা স্যুটকেস পাওয়া গেছিল। এখানেই অনন্য তিনি।’
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশে পরিকল্পিতভাবে বিভাজন সৃষ্টি করেছে। তারা প্রথম আঘাত এনেছে রাজনীতিতে। এভাবে সর্বস্তরে তারা ধ্বংস করছে। প্রবৃদ্ধি নিয়ে মিথ্যাচার করছে। সরকার সমগ্র মানুষকে প্রতারিত করছে। এখন প্রবৃদ্ধি হচ্ছে শুধু আওয়ামী লীগের নেতা নেত্রীদের।’
এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘শহীদ জিয়া মাত্র ১০ বছরে বাংলাদেশের মানুষের মণিকোঠায় স্থান করে নেন তার অনন্য গুণাবলী দ্বারা। তিনি দিশেহারা মানুষের মাঝে অকুতোভয় চিত্তে দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এমনকি নিজেও যুদ্ধ করেন, সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। আমাদের জাতিসত্তার পরিচয়টা দিয়ে গেছেন। সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম অন্তর্ভুক্ত করেন। এটা মুছে ফেলা যাবে না। শহীদ জিয়া আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা। আজকে গায়ের জোরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ সরকার ফ্যাসিবাদী আচরণ করছে। কারণ তাদের জনভিত্তি নেই।’
অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, তিনটি বিশেষগুণে শহীদ জিয়া রাষ্ট্রনায়ক। তিনি একটি দর্শন দিয়েছেন, স্বপ্ন দিয়েছেন এবং দর্শন বাস্তবায়নে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জমির আইলে আইলে হেঁটে হেঁটে মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়েছেন।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘দেশকে সমৃদ্ধকরণের জন্য যা দরকার তার সবই করেছিলেন শহীদ জিয়া। স্বাধীনতার পর একটি ভঙ্গুর দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির খেতাব ঘুঁচিয়েছিলেন তিনি। শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারীর কর্মসংস্থান করেছিলেন। বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে কর্মসংস্থান তৈরি করেছিলেন। ১৯৭৬ সালে সাড়ে ৮ হাজার লোক মধ্যপ্রাচ্যে পাঠিয়ে শ্রমবাজার প্রতিষ্ঠা করেন। কৃষকের কাছে গিয়ে মাঠে কাজ করেছেন, খোঁজ নিয়েছেন। এটা দূরদর্শী মনোভাব না হলে হয়না।’
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরি এ্যানী ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য দেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, শ্রমিকদল সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, যুবদলের সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছা সেবকদলের শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসান, মহানগর উত্তরের বজলুল বাসিত আনজু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার প্রমুখ।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আব্দুস সালাম আজাদ, রফিক সিকদার, আমিনুল হক, আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, আব্দুল মালেক, শাহ নেছারুল হকসহ বহু নেতাকর্মী। এ ছাড়া সভায় যোগ দিতে আসা খিলগাঁও থানা যুবদলের ৬ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করায় তীব্র নিন্দা ও মুক্তির দাবি জানানো হয়।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/৩:০৫পিএম/২৯/৫/২০১৭ইং)