• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন

শুরু হলো অমর একুশে গ্রন্থমেলা


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১, ২০১৮, ৯:০৭ AM / ৬২
শুরু হলো অমর একুশে গ্রন্থমেলা

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ঢাকা : অমর একুশে গ্রন্থমেলা, ব্যাপকভাবে পরিচিত একুশে বইমেলা। স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর অন্যতম। আজ ১ ফেব্রুয়ারি থেকে থেকে শুরু হচ্ছে বাঙালীর প্রাণের বইমেলা।

প্রতি বছর পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে এই মেলা বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে ও বর্ধমান হাউজ ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সনের ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখ বাংলা ভাষার জন্য আত্মোৎসর্গের যে বীরত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে, সেই স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতেই এই মাসে আয়োজিত বইমেলার নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’।

এই বইমেলার ইতিহাস স্বাধীন বাংলাদেশের মতোই প্রাচীন। যতোদূর জানা যায়, ১৯৭২ সনের ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার গোড়াপত্তন করেন। এই ৩২টি বই ছিলো চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (বর্তমান মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশী শরণার্থী লেখকদের লেখা বই। এই বইগুলো স্বাধীন বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের প্রথম অবদান।

১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সন পর্যন্ত তিনি একাই বইমেলা চালিয়ে যান। ১৯৭৬ সনে অন্যান্যরা অণুপ্রাণিত হন। ১৯৭৮ সনে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমিকে মেলার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। ১৯৭৯ সনে মেলার সাথে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি; এই সংস্থাটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা।

১৯৮৩ সনে কাজী মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে বাংলা একাডেমিতে প্রথম ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র আয়োজন সম্পন্ন করেন। কিন্তু স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষা ভবনের সামনে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে ট্রাক তুলে দিলে দুজন ছাত্র নিহত হয়। ওই মর্মান্তিক ঘটনার পর সেই বছর আর বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। এরপর ১৯৮৪ সনে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়। সেই ৩২টি বইয়ের ক্ষুদ্র মেলা আজ কালানুক্রমে বাঙালীর সবচেয়ে স্বনামধন্য বইমেলায় পরিণত হয়েছে।

২০১৪ সন থেকে বইমেলা বর্ধমান হাউজ থেকে সম্প্রসারিত হয়ে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বিস্তৃত হয়৷ এই মুহূর্তে প্রকাশকদের স্টলগুলো সোহরাওয়ার্দি উদ্যানেই স্থান দেয়া হয়েছে৷ আর বর্ধমান হাউজ এলাকায় লিটল ম্যাগ, মিডিয়া এবং বাংলা একাডেমিসহ অল্প কিছু- মূলত সরকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়৷ সব মিলিয়ে এখন তিন শতাধিক প্রকাশকের প্রায় চারশ’ স্টল থাকে মেলায়৷ অন্যসব বইমেলা প্রকাশকরা করলেও একমাত্র ব্যতিক্রম হলো ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’৷ এটা বরাবরই বাংলা একাডেমি আয়োজন করে আসছে৷

একুশে গ্রন্থমেলা শুধুই মেলা নয়, এর সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের ভাষা আন্দোলন, ইতিহাস, ঐাতহ্য৷ তাই এই মেলার একটি ভিন্ন মাত্রা আছে৷ এটি আমাদের জাতীয় ঐহিত্য৷ এই মেলা পাঠক সৃষ্টি করে, পাঠক ধরে রাখে৷ ডিজিটাল যুগেও বইমেলার আকর্ষণে পাঠকরা ছুটে আসেন, নতুন বই ছুঁয়ে দেখেন, কেনেন৷ নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মাতোয়ারা হন তারা৷ এই মেলা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষে অনেক বড় ভূমিকা রেখে আসছে৷

শিশুদের বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট করতে এই মেলার বড় ভূমিকা আছে৷ মেলায় চালু করা হয়েছে শিশুপ্রহর, অর্থাৎ শিশুদের বইয়ের জন্য আদালা চত্বর৷

এই প্রাণের মেলার সাথে বেদনার স্মৃতিও জড়িয়ে রয়েছে। ২০১৫ সনে বইমেলা চলাকালে মেলা থেকে বের হওয়ার পর জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন লেখক ও ব্লগার ড. অভিজিৎ রায়৷ এর আগে ২০০৪ সনে বইমেলার বাইরে হামলার শিকার হন প্রথাবিরোধী লেখক অধ্যাপক হুমায়ূন আজাদ৷ পরে তিনি জার্মানিতে মারা যান৷

যার কারণে বইমেলায় ব্লগার, লেখক ও প্রকাশকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। যাতে করে ব্লগার, লেখক, প্রকাশক এবং পাঠক নিশ্চিন্তে, নির্বিঘ্নে প্রাণের গ্রন্থমেলায় বইয়ের উৎসবে মেতে উঠতে পারেন।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/কেএস/৯:০৫এএম/১/২/২০১৮ইং)