• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০২:৩২ অপরাহ্ন

রসুনের বাম্পার ফলন নাটোরে


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১৫, ২০১৭, ১২:৩৯ PM / ৩৬
রসুনের বাম্পার ফলন নাটোরে

ঢাকারনিউজ২৪.কম:নাটোর:

দেশের ৩০ ভাগ রসুন উৎপাদনকারী জেলা নাটোরে চলতি মৌসুমে ২ লাখ টন উৎপাদন ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জমি থেকে কৃষকদের রসুন সংগ্রহ এখন শেষের পথে। বাড়ির আঙিনায় গায়ের বধূরা ব্যস্ত সময় পার করছেন রসুন সংরক্ষণ কাজে।

চলতি মৌসুমের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের ১৪টি কৃষি অঞ্চলের ৬৪ জেলায় রসুনের আবাদি জমির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলের ২৭ হাজার ৫৫০ হেক্টর আবাদি জমির বেশিরভাগটাই নাটোর জেলায়। অর্থাৎ দেশের রসুনের আবাদি জমির ৩০ ভাগই নাটোর জেলায়।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে নাটোর জেলায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে ২৫ হাজার ৮০০ হেক্টর।

কৃষি বিভাগের প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্যে এবার রসুনের উৎপাদন হবে অন্তত ১ লাখ ৯৫ হাজার ২৬৮ টন। অর্থাৎ বিঘাপ্রতি ফলন ২৫.২৩ মণ। তবে এলাকার রসুন চাষিদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা করা যায়, মোট উৎপাদন ২ লক্ষ টন ছাড়িয়ে যাবে।

জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে জেলায় রসুনের আবাদি জমির পরিধি ও উৎপাদন উভয়ই ক্রমশ বেড়েছে। ২০১২ সালে ১৪ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ করে ফলন পাওয়া গিয়েছিল ১ লক্ষ ১১ হাজার ৪৩৮ টন। ২০১৩ সালে ১৭ হাজার ৮৪০ হেক্টর আবাদি জমি থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫৮৪ টন এবং ২০১৪ সালে ১৯ হাজার ৫০ হেক্টর জমি থেকে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩১ টন রসুন পাওয়া গিয়েছিল। গত বছর ২০ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯২৬ টন ফলন পাওয়া যায়।

নাটোরে উৎপাদিত রসুনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- বিনা চাষে রসুন উৎপাদন। প্রচলিত পদ্ধতিতে জমি চাষ করে রসুন লাগানো হয়। নাটোরে রসুনের আবাদি জমির প্রায় ৮০ ভাগই বিনা চাষের রসুন।

১৯৯৪-৯৫ সালে জেলার সীমান্তবর্তী বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলার কৃষকরা স্বপ্রণোদিত হয়ে বিনা চাষে রসুন আবাদ করেন। গুরুদাসপুর উপজেলার কাছিকাটা এলাকার কৃষক জেহের আলী কার্তিক মাসে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর জমিতে রসুনের কোয়া বুনে বিনা চাষে রসুন উৎপাদনের প্রচলন করেন। এই পদ্ধতিতে রসুন আবাদে জমি চাষ করতে হয় না, সেচও লাগে না। আগাছা থাকে কম এবং সারের ব্যবহার খুবই কম। উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক কম হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদনের পরিমাণ বেশী হওয়ায় এই পদ্ধতি কৃষকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রসার ঘটে জেলার অন্যসব উপজেলা ছাড়িয়ে দেশের অন্য জেলাগুলোতে।

জেলার বেশিরভাগ রসুন উৎপাদিত হয় গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলায়। রসুন চাষি তোফাজ্জল হোসেন চলতি মৌসুমে ১০ বিঘা জমিতে রসুন আবাদ করেছেন। তিনি জানান, বিঘাপ্রতি ৩০ মণ ফলন পেয়েছেন। গত বছর ফলন ছিল বিঘাপতি ৪০ মণ।

তবে কিছু কৃষক জানান, গড়ে তারা ২০ মণ করে ফলন পেয়েছেন।

বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার ইকবাল আহমেদ রসুনের গড় ফলনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কিছু ক্ষেত্রে রসুনের উৎপাদন কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, একই জমিতে বার বার রসুন চাষ এবং মাটিতে জৈব সারের ঘাটতির কারণে ক্ষেত্র বিশেষে এমন হতে পারে।

গুরুদাসপুর উপজেলার কৃষি অফিসার আব্দুল করিম জানান, শুধু বিনা হালে রসুন চাষই নয়, রসুনের জমিতে সাথী ফসল হিসেবে তরমুজ ও বাঙ্গী চাষের উদ্ভাবনও এই এলাকা থেকেই হয়েছে।

বিগত দুই দশকে নাটোরে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈচিত্রকরণ হয়েছে। কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কৃষি বিভাগের নতুন প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণের সমন্বয়ে প্রচলিত শস্যের বাইরে কৃষকরা অপ্রচলিত কিন্তু লাভজনক শস্যের প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন। এক্ষেত্রে রসুন অগ্রগামী শস্য। বর্তমানে রসুন চলনবিল অধ্যুষিত গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম এলাকার সবচেয়ে লাভজনক শস্য।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষকদের প্রচেষ্টা এবং কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় রসুনের আশাতীত উৎপাদন হয়েছে। রসুনের বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়াতে মৌসুমের শুরুতেই উর্ধ্বমুখী বাজার দর ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পেয়ে কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন উপ পরিচালক।

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম /১২.৩৮পিএম/১৫//২০১৭ইং)