• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৮:১৩ অপরাহ্ন

‘প্রয়োজনে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খাব’


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৭, ৭:০৫ AM / ৩৫
‘প্রয়োজনে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খাব’

 

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ঢাকা : আশ্রয়ের জন্য আসা রোহিঙ্গাদের ফেলে দিতে পারি না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে আমরা আমাদের খাবার ভাগ করে খাব। বৃহস্পতিবার দশম জাতীয় সংসদের সপ্তদশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি একথা বলেন। খবর: বাসস।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমরা মোকাবেলা করি এবং বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবেলায় সিদ্ধহস্ত। কিন্তু এই মানুষের যে কষ্ট, যে দুর্দশা দেখেছি আমাদের যত কষ্টই হোক না কেন- যদি প্রয়োজন হয় আমরা আমাদের খাবার ভাগ করে খাব তাদের সাথে। যে সাধারণ মানুষেরা আসছে আমাদের কাছে আশ্রয়ের জন্য, আমরা তাদের ফেলে দিতে পারি না।’

তিনি বলেন, গতকাল (বুধবার) এটি নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদ থেকে যে স্টেটমেন্টটা দেয়া হয়েছে সেখানে মিয়ানমারকেই এই নির্যাতন, হত্যাকাণ্ড বন্ধের কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ যে এই নির্যাতিত মানুষগুলোকে আশ্রয় দিয়েছে তার জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছে।

জাতিসংঘ মহাসচিবও মিয়ানমারকে এই নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন এবং তাদের নাগরিকদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়ার কথাও জাতিসংঘ বলেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সব থেকে মানবেতর অবস্থায় রয়েছে শিশুরা। কয়েকটা শিশুর সঙ্গে কথা বললাম চোখের পানি রাখা যায় না।

উখিয়া শরণার্থী শিবিরের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি শিশুর চোখের সামনে তার বাবা-মাকে মেরে ফেলেছে। সে তার দাদা-দাদির সঙ্গে কোনোমতে এপারে চলে এসেছে। তার নিজের শরীরেও আঘাতের ক্ষত।’

‘দুটি মেয়ে- তাদেরও বাবা-মা কেউই বেঁচে নেই। আপনজন সবাইকে হারিয়ে এপারে চলে এসেছে দুই বোন। আরেকটা ছোট মেয়ে তার ছোট্ট ভাইটাকে নিয়ে অন্যদের সঙ্গে চলে আসলেও ভাইটা যে কোথায় হারিয়ে গেছে সে জানে না। এ ধরনের করুণ কাহিনী সেখানে গিয়ে আমার শুনতে হয়েছে যা কিনা আমাদের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়’ যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরাওতো আপনজন, ঘরবাড়ি হারিয়েছি। পাকিস্তানি হানাদাররা আমার দাদাবাড়ি, নানাবাড়ি সব জ্বালিয়ে দেয়ার পর নানা-নানি নৌকায় আশ্রয় নিয়েছিল, পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়।’

পঁচাত্তরে রিফিউজি হিসেবে বিদেশে থাকার স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, ‘আপনজন হারিয়ে রিফিউজি হিসেবে আমাদেরতো থাকতে হয়েছে, তাই এই কষ্টটা আমি বুঝি।’

এদের নাগরিকত্ব নিয়ে মিয়ানমারের প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারাতো মিয়ানমার থেকেই এখানে এসেছে এবং তাদের ভাষাওতো দুর্বোধ্য। আমাদের সাধ্যমত সবরকমের ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। আর আমি আমাদের দেশবাসীকেও বলবো- এরা বিপদে পড়ে আমাদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে, কাজেই তাদের যেন কোনো কষ্ট না হয়।

এসময় দেশে চালের মজুদদারির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘কোথাও কেউ চাল কোনরকম মজুদ রেখে এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে কি না অবশ্যই সেটা আমরা তল্লাশি করবো এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। কারণ মানুষের খাদ্য নিয়ে কাউকে আমরা খেলতে দেব না।… এখানে কারা এই খেলাটা খেলছে সেটা আমাদের বের করতে হবে।’

সরকার ইতিমধ্যেই বিদেশ থেকে চাল কিনে যেকোনো ধরনের ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ নিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যত লাগে (চাল) আমরা কিনে নিয়ে আসবো। কিন্তু ইনশাল্লাহ মানুষকে খাদ্য নিয়ে কষ্ট পেতে দেব না।’

তিনি বলেন, চালের দাম বাড়ার কোন যৌক্তিকতাই আমি দেখি না। এখানে কারা এই খেলাটা খেলছে সেটা আমাদের বের করতে হবে। কারণ বাংলাদেশের একটা দুর্ভাগ্য যে কখনো কখনো কিছু মানুষ, মানুষকে নিয়েই খেলে।

শেখ হাসিনা বলেন, সারা বাংলাদেশের কোথায় কোন গোডাউনে কতটুকু চাল আছে এবং কৃষকদের ঘরে ও মিল মালিকদের কাছে কোথায় কত চাল আছে তার একটা হিসাব আমরা নিচ্ছি।

এক্ষেত্রে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এই ধরনের কর্মকাণ্ড (মজুদদারি) করছে তারা কারা, তাদের যেন খুঁজে বের করে দেন।
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/৭:০০এএম/১৫/৯/২০১৭ইং)