• ঢাকা
  • শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ১২:২০ পূর্বাহ্ন

প্রধানমন্ত্রী থাকি বা না থাকি একটি মানুষকেও না খেয়ে মরতে দেবনা : প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ৩০, ২০১৭, ৮:৪২ PM / ১৭১
প্রধানমন্ত্রী থাকি বা না থাকি একটি মানুষকেও না খেয়ে মরতে দেবনা : প্রধানমন্ত্রী

সেলিম আহমদ,সুনামগঞ্জ :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে জন-জীবন বিপর্যস্থ করে তুলেছে। পূর্বেও ফ্লাশ ফ্লাড হয়েছে। ১৯৯৮ সালে বন্যা হয়েছিল। তলিয়ে গিয়েছিল দেশের ৭০ ভাগ ফসল। তখনও কাউকে না খেয়ে মরতে দেয়া হয়নি। এ বছরও কাউকে না খেয়ে মরতে হবেনা। খাদ্যবান্ধব কর্মসুচী বাড়ানো হয়েছে। ওমমএস এর চাল প্রতিটি ইউনিয়নে ডিলার নিয়োগের মাধ্যমে ঘরে ঘরে খাদ্য পৌঁছে দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে উৎপাদনে স্বয়ং সম্পুর্ন। যা ক্ষতি হয়েছে তা পুরন করা সম্ভব। গো খাদ্যের কোন সমস্যা হবেনা,সরকার প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেবে। বাঁধ নির্মাণে অর্থ বরাদ্ধ, নির্মাণ আর পরিক্ষা-নিরীক্ষা করতে পাহাড়ী ঢলে ফসল তলিয়ে যায়। বাঁধ নির্মাণে কারো কোন গাফিলতি থেকে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাওরাঞ্চল জীব-বৈচিত্রে ভরপুর, এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। দেশে পর্যাপ্ত খাদ্যে মজুদ আছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার একটি পরিবারও না খেয়ে থাকবেনা। যতদিন অভাব থাকবে, ততদিনই খাদ্য পৌঁছে দেয়া হবে। আজ রোববার সুনামগঞ্জের হাওর এলাকা পরিদর্শনে শেষে শাল্লা উপজেলার শাহীদ আলী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হাওরবাসীর মাঝে ত্রান বিতরনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন তিনি বলেন, হাওর অঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত জীবনযুদ্ধে থাকে। খাল-বিল আমার অঞ্চল গোপালগঞ্জ কাজেই হাওরাঞ্চল সুনামগঞ্জের মানুষের কষ্ট আমি বুঝি। গোপালগঞ্জের সাথে সুনামগঞ্জের নামের মিল আছে। আমি প্রধানমন্ত্রী থাকি বা না থাকি একটি মানুষকেও না খেয়ে মরতে দেবনা। এসব এলাকায় বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা হবে। এর আগে পাহাড়ী ঢল ও অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থ হাওরাঞ্চল পরিদর্শন এবং কৃষকদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরনের জন্য সকাল ১০.০৩ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি শাল্লা উপজেলা সদরস্থ শাহীদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় হ্যালিপেড মাঠে অবতরণ করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু ফসলের ওপর নির্ভরশীল না থেকে মাছের উৎপাদন বাড়াতে হবে। মাছ উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে মাছের সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতের ব্যবস্থা যেন নেয়া হয়, সে ব্যবস্থা করা হবে। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের হাওরগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারণ হাওরে যে পানি জমা হয়, এই পানিই সারা বছর নদীতে যায়। এই পানি এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে সম্পৃক্ত। হাওরাঞ্চলের উন্নয়নে সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাওর এলাকার নদীগুলো যেন ভরাট না হয়ে যায়, সেজন্য নদীগুলো ড্রেজিং করা হবে। হাওর এলাকায় খাল কাটা হবে এবং এসব খাল যেন বেশি পানি ধারণ করতে পারে, সে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাওর উন্নয়ন বোর্ড সরকারের এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। তিনি বলেন, হাওর, চর ও পাহাড়ি এলাকায় আবাসিক স্কুল করতে আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলেছি। কারণ এসব এলাকার ছেলে-মেয়েদের দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। তাই স্কুলগুলো আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের আর কষ্ট করে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হবে না। তারা স্কুলেই থেকে যেতে পারবে। এজন্য হাওর এলাকায় আবাসিক স্কুল করে দেয়ার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ,খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা। ভাটির জনপদের উন্নয়নে তার সরকারের নানা পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাওর এলাকায় যাদের ঘরবাড়ি নেই তাদেরকে টেকসই বাড়ি বানিয়ে দেবো। জীববৈচিত্রের হাওর এলাকাকে সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলবো। কৃষকরা যাতে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হন সেজন্য বিকল্প কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি। পর্যাপ্ত পরিমাণ হাঁস প্রক্রিয়াজাত করণকেন্দ্র ও খাচার মধ্যে মাছ চাষের ব্যবস্থা করে দেবো। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পোনাও ছেড়ে দেবো হাওর ও জলাশয়ে। খাদ্যের কোন ঘাটতি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের খাদ্য যথেষ্ট আছে। খাদ্য বান্ধব কর্মসুচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে ও ১৫ টাকা দরে ওএমএস এর চাল দিচ্ছি। ভিজিএফ এর সংখ্যা বাড়িয়ে দ্বিগুন করবো। একটা মানুষও যাতে না খেয়ে মারা যায় সেজন্য দেশকে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ করে গড়ে তুলবো। আমরা ভিক্ষা করে কারো কাছ থেকে খাবার আনবোনা। স্বাধীন বাংলাদেশকে জাতির জনক মর্যাদার আসনে উপবিষ্ট করে গেছেন। তাই হাওরের মানুষ মনে করে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলে কোন মানুষ না খেয়ে মারা যাবেনা। হাওরবাসীর খবর প্রতিটি মুহুর্তে তিনি নিচ্ছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজ আপনারা যেভাবে ফসল হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়েছেন আমিও তেমনি সবহারা নি:স্ব। শত্রুরা আমার বাবাকে আমার মাকে হত্যা করেছে। একই দিনে মেজো ফুফু সেজো ফুফু তাদের স্বামী ও সন্তানদেরকে খুন করেছে। আমার পরিবারের ২৮ জন মানুষ খুন হয়েছে। তাই আমি আপনাদের কষ্ট বুঝি। আমি ৬ বছর দেশে আসতে পারিনি। জাতির জনকের লক্ষ্যই ছিল যারা দরিদ্র অসহায় ও নি:স্ব তাদের পাশে দাড়ানো,তাদের মুখে হাসি ফুটানো। দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্যই বঙ্গবন্ধু বারবার কারাঘারে গেছেন। ২ বার তাকে ফাঁসি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আজকে বাবা মা হারিয়েও আমি আপনাদের পাশে আছি। সরকার আপনাদের পাশে আছে। জাতির জনক জনগনের পাশে থাকার চিন্তা চেতনা নিয়েই দেশ স্বাধীন করেছেন। তার একটাই লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের মানুষ যাতে কষ্টে না থাকে। একটা মানুষও যেন গৃহহারা না হয়। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দু:খী মানুষের সংগঠন হিসেবে তাদের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করে যাবে। আমি প্রতিনিয়ত হাওরবাসীর খবর নিচ্ছি। সকলই নেমে গেছে। মন্ত্রীরা ও দলীয় নেতৃবৃন্দরা সবই সক্রিয় আছে। আমরা নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করছি। কেউ কেউ দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। দাম বাড়িয়ে মজুতদারী করবেন আমরা তা বরদাশত করবোনা। হাওরবাসীর জীবন জীবিকার জন্য এক ফসলকে বহুমুখী উৎপাদনে উন্নীত করার জন্য সরকার কাজ করে যাবে। বিনা পয়সায় ঘর তৈরী করে দেবো। প্রতি জেলায় একটা মানুষও যাতে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত না হয় সেজন্য তাদেরকে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে মুক্তি দিয়ে কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। জেলার সকল কর্মচারীদের এক দিনের বেতন দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি দূর করবো। সারা ভাটি অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্থ ৮ লাখ ৫০ হাজার কৃষক পরিবারকে পূণর্বাসনের জন্য ৩৮৫টা ত্রাণ বিতরন কেন্দ্রের মাধ্যমে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হবে। ৪২২৪ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। যখনই প্রয়োজন হবে তখনি বরাদ্ধ বাড়ানো হবে। দুর্যোগ লাঘবে বিনামূল্যে সার বীজ ও কৃষি উপকরণ পাবে হাওরবাসী। কৃষি ঋন আদায় স্থগিত ও সুদ অর্ধেক মওকুফ করা হবে। হাওর এলাকায় যত খাদ্য ও গবাদী পশুর প্রয়োজনীয় খাদ্যও সরকার দেবে। তিনি বলেন, আমি জানি অর্থ বরাদ্ধ,পরিকল্পনা,তারপর বাঁধ নির্মাণ করতে করতে সময় চলে যায়। সময়মতো যাতে বরাদ্ধ পরিকল্পনা ও সে অনুযায়ী কাজ হয় তার জন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহন করবো। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা সম্বন্ধে তিনি বলেন,প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিনিয়ত আমাদের দেশে আসে আর যায়। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের যুদ্ধ করেই আমাদের বাঁচতে হয়। কিভাবে দুর্যোগকে মোকাবেলা করে বাঁচতে হবে যাতে প্রাণহানী না হয়,ফসলের ক্ষতি না হয়,মানুষের ক্ষতি না হয় সেদিকে নজর রেখে দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি আরো বলেন বিআর-২৮/বিআর ২৯ ফলনে ১৩০ থেকে ১৫৫ দিন সময় লাগে। এতে করে পাহাড়ী ঢলে ফসল তলিয়ে যায়। পানিতে সহনশীল বীজ কম উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হবে। সভা শেষে ক্ষতিগ্রস্থ ১ হাজার কৃষকদের মধ্যে চাল ও নগদ টাকা বিতরন করেন প্রধানমন্ত্রী। সভায় উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ ৫ নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ্, সুনামগঞ্জ-মৌলভীবাজার সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট শামছুন নাহার বেগম শাহানা রব্বানী, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুট, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য আয়ুব বখত জগলুলসহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ।

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম ০৮.৩০পিএম/৩০//২০১৭ইং)