• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৭:১৭ অপরাহ্ন

পৃথিবীর ভয়ঙ্কর ১০ জঙ্গি হামলা


প্রকাশের সময় : মার্চ ২৯, ২০১৭, ৩:৪২ PM / ৩৮
পৃথিবীর ভয়ঙ্কর ১০ জঙ্গি হামলা

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

কাবুল থেকে নিউ ইয়র্ক, প্যারিস থেকে ব্রাসেলস। বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে জঙ্গিরা। ধর্মের নাম করে নিরীহ মানুষ হত্যার ভয়ঙ্কর খেলায় মেতে উঠেছে তারা। জঙ্গি হামলার কালো থাবা আঘাত হেনেছে বাংলাদেশেও।

জঙ্গিদের নির্বিচার নৃশংস ও বর্বরোচিত হামলায় শুধু মৃত্যু হয় না মানুষের, গুমরে কাঁদে মানবতা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইএস, আল কায়েদা, বোকো হারাম, আল শাবাব প্রভৃতি ধর্মীয় উগ্রবাদী ও মৌলবাদী গোষ্ঠী তথাকথিত ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বিচার মানব হত্যায় মেতে ওঠেছে।

পৃথিবীর নানাপ্রান্তে জঙ্গি হামলার লোমহর্ষক ১০টি ঘটনায় চোখ রাখা যাক।

টুইন টাওয়ার হামলা:

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ানক হামলা হয়েছে ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের উপর। এই হামলায় ২হাজার ৯শ ৯৩ জন নিহত এবং ৮হাজার ৯শ জন আহত হয়। আল কায়দার নিউ ইয়র্ক সিটি এবং ওয়াশিংটন ডিসির উপর এই হামলায় হতাহত হয় হাজারো মানুষ। ১৯ জন আল কায়দার জঙ্গি চারটি বিমান ছিনতাই করে। আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১১ এবং ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ১৭৫ বিমান দুটি নিউ ইয়র্ক সিটির টুইন টাওয়ারের উত্তর এবং দক্ষিণ টাওয়ারের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আঘাত আনে। চলন্ত বিমানের আঘাতে উঁচু বিল্ডিং দুটি দুই ঘণ্টার মধ্যে ধসে পড়ে। আঘাত প্রাপ্ত বিল্ডিং ছাড়াও আশে পাশে বিল্ডিং গুলোও ধসে পড়ে। ছিনতাই হওয়া তৃতীয় বিমান আমেরিকান ফ্লাইট ৭৭ ভার্জিনিয়া রাজ্যে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগনে আঘাত করে। চতুর্থ বিমান ইউনাইটেড এয়ারলাইন ফ্লাইট ৯৩ এর লক্ষ্য ছিল ওয়াশিংটন ডিসিতে আঘাত আনার। কিন্তু যাত্রীদের সাথে ছিনতাইকারীদের ধস্তাধস্তিতে বিমানটি পেনিস্যালভিনিয়ার এক মাঠে বিধ্বস্ত হয়। টুইন টাওয়ারের এই হামলার পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা এবং কাজে পরিণত করার পিছনে ওসামা বিন লাদেন ছিলেন বলে যুক্তরাষ্ট্র দাবী করে।

ইয়াজিদি কমিউনিটির উপর বোমা হামলা:

স্মরণকালের ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম সন্ত্রাস ও হামলা হয় ইরাকের ইয়াজিদী এবং জাজিরা শহরে। যুক্তরাজ্যের আধিপত্য থাকা অবস্থায় এটিই সবচেয়ে বড় গাড়ি বোমা হামলা। ২০০৭ সালের আগস্টের ১৪ তারিখ পর পর চারটি আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলা হয়। তিনটি গাড়ি এবং একটি তেলের ট্যাংকার প্রায় দুই টনের মত বিস্ফোরক বহন করছিল। গাড়ি বোমা এই হামলায় ৭শ ৯৬ জন নিহত এবং ১ হাজার ৫শ ৬২জন আহত হয়। গাড়ির এই বোমা বিস্ফোরণে ভবন সহ চার পাশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ধারনা করা হয় ইরাকের আল কায়দা এই হামলা করে।

সিনেমা রেক্স ফায়ার:

১৯৭৮ সালের আগস্ট মাসে ইরানের আবাদানে সিনেমা রেক্সে আগুন লাগিয়ে লাগিয়ে ৪শ ৭০জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। সিনেমা চলাকালীন দরজা বন্ধ করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ইরানের ক্ষমতাশীল সরকার ঘটনার শুরুতেই ইসলাম পন্থী জঙ্গিদের দায়ী করলেও দেশটির শাহ-এর বিপক্ষ দল দেশের ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ সাভাককে আগুন লাগানোর জন্য দায়ী করে। যদিও পরে ইসলামী দলের সম্পৃক্ততা পাওয়া গিয়েছে।

বেসলান গণহত্যা:

বেসলান স্কুলে জঙ্গি হামলা হয় ২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর। তিন দিনের জিম্মি অবস্থায় ১ হাজার ১শ মানুষকে বন্দি করে জঙ্গিরা যাদের মধ্যে ৭শ ৭৭জনই স্কুল ছাত্র। জঙ্গিদের এই হামলায় কমপক্ষে ৩শ ৮৫জন মারা যায়। ইঙ্গুস এবং চেচেন নামের ইসলাম পন্থী জঙ্গিরা রাশিয়ার উত্তর ককেশাসের নর্থ অসেটিয়া এলাকার বেসলান শহরের স্কুল নাম্বার ওয়ানে হামলা করে। চেচেনের সেনাপতি শামিল বাসাইয়েভের রিয়াদুস সালেকিন ব্যাটেলিয়াব এই হামলা চালায়। বিদ্রোহী জঙ্গি দলটি জাতিসংঘ এবং রাশিয়া থেকে চেচানিয়ায় স্বাধীনতা দাবি করছিল।

জিম্মি দশার তৃতীয় দিনে রাশিয়ার বিশেষ বাহিনী ট্যাঙ্ক, ভারী অস্ত্রপাতি নিয়ে স্কুলে প্রবেশ করে। এই জিম্মি দশায় ৩ শ ৩০ জন মারা গিয়েছে যাদের মধ্যে ১শ ৮৬ জন শিশু ছিল।

এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইটের বিস্ফোরণ:

এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইটের বিস্ফোরণ যুক্তরাষ্ট্রের ৯/১১ র হামলার পূর্ব পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিমান বিস্ফোরণের ঘটনা। এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৮২ কানাডা-যুক্তরাজ্য-দিল্লির পথে চলাচল করতো। এই বিমানটি আইরিশের আকাশ সীমানায় ১৯৮৫ সালে ২৩শে জুন বিস্ফোরিত হয়। ভূমি থেকে ৩১ হাজার ফিট উপরে বিমানে বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বিমানে থাকা কোন যাত্রী এবং কর্মী আর বেঁচে ছিলেন না। বিমানটির ধংসস্তুপ আটলান্টিক সাগরে পতিত হয়। 747 নামের জাম্বু জেটে এটিই প্রথম হামলা। বিমানে ৩শ২৯ জন যাত্রী ছিল। এদের মধ্যে ২শ৬৮জন কানাডার, ২৭ জন ব্রিটেনের এবং ২৪জন ভারতীয় নাগরিক ছিলেন। কানাডার এত নাগরিক একসাথে কখনোই এই ধরনের হামলার শিকার হননি। এয়ার ইন্ডিয়ার এই হামলার সময় নারশিয়া বিমান বন্দরেও বোমা হামলা হয়। তদন্তকারীরা বলেন, নারশিয়াতে বিমানে বোমা তোলার আগেই বোমাটি বিস্ফোরিত হয়।

কানাডার নিরাপত্তা বাহিনী ভারতের শিখ জঙ্গি গোষ্ঠী বাব্বার খালসাকে এই হামলার জন্য দায়ী করে। ভারতের শিখ জঙ্গিদের গোল্ডেন ট্যাম্পেল থেকে উঠিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে এই হামলা করে জঙ্গিরা।

ইস্তাম্বুলে বিমানবন্দরে হামলা:

গুলি আর বোমা বিস্ফোরণে মুহূর্তেই কেঁপে উঠে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দর। ২৮ জুন, ২০১৬ তারিখটি এই বিভীষিকার সাক্ষী হয়ে থাকল। ইস্তাম্বুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এই ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় নিহত হয় ৪৭ জন এবং আহত হয় ২৩৯ জন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, টার্মিনালের দুটি জায়গায় আলাদা হামলা চালায় জঙ্গিরা। প্রথম বিস্ফোরণ ঘটে আন্তর্জাতিক টার্মিনালের এক তলায়, দ্বিতীয়টি দোতলায় এবং তৃতীয়টি গাড়ি পার্কিংয়ে। পুলিশ পাল্টা আক্রমণ করার কিছু সময়ের মধ্যেই প্রথম আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। এতে পুরো বিমানবন্দরে নেমে আসে মৃত্যু-আতঙ্ক। জঙ্গি হামলার পর পরই বন্ধ করে দেওয়া হয় বিমানবন্দরের কার্যক্রম।

প্যারিসে আত্মঘাতী হামলা:

২০১৫ সালের ১৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় ফ্রান্সের প্যারিস ও সেন্ট-ডেনিসে ধারাবাহিক ও সমন্বিত সন্ত্রাসী আক্রমণ হয়। ফ্রান্সের বাইরে তিনটি আলাদা আত্মঘাতী বোমা হামলা এবং প্যারিসের কাছাকাছি চারটি ভিন্ন স্থানে গণহত্যা ও আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এ হামলায় অন্তত ১২৮ জন নিহত হয়, যার ৮৯ জন নিহত হয় বাতাক্লান থিয়েটারে। আহত ৪১৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এতে সাত আক্রমণকারীও মারা যায়। এই সন্ত্রাসী হামলা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সে ঘটা ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ছিল। প্রথমটি ঘটল একটি কনসার্টে। শহরের কেন্দ্রস্থলে বাটাক্লঁ কনসার্ট হলে। কনসার্ট দেখতে ওই হলে জড়ো হয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ।

যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডোয় বন্দুকধারীর হামলা:

‘পালস ক্লাব’, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের অরল্যান্ডো শহরের একটি বিনোদন কেন্দ্র। ২০১৬ সালের সবচেয়ে আলোচিত ও ঘৃণিত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে এখানে। এ বছর ১২ জুন অরল্যান্ডো শহরে সমকামীদের একটি নাইট ক্লাবে ব্যাপক গোলাগুলি ঘটে। এ হামলায় কমপক্ষে ৫০ হন নিহত ও ৫৩ জন আহত হয়। হামলার সময় ওই ক্লাবটিতে ১০০ জনেরও বেশি মানুষ অবস্থান করছিল। হামলার পরে ক্লাবটি থেকে বেশকিছু মানুষ দৌড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও অনেকেই ভিতরে আটকা পড়ে যায়। স্থানীয় সময় দিবাগত রাতে এ হামলা হয়। হামলার তিন ঘণ্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হামলাকারীকে হত্যা করে। ওই হামলাকারীর নাম ওমর মতিন। পুলিশ এ ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা বলে উল্লেখ করে।

লন্ডনে ভয়ঙ্কর সিরিজ বোমা হামলা:

২০০৫ সালের ৭ জুলাই। মধ্য লন্ডনের তিনটি আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন ও একটি বাসে আত্মঘাতী সিরিজ বোমা হামলায় নিহত হয় ৫২ জন। আহত হয় সাত শতাধিক মানুষ। ব্রিটেনের মাটিতে এটাই ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। ৭ জুলাই স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে লন্ডনের রাসেল স্কয়ারের আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেন স্টেশনে প্রথম হামলা চালানো হয়। এতে নিহত হয় ২৬ জন। প্রায় কাছাকাছি সময়ে এজওয়ার ও অ্যাল্ডগেটে পৃথক দুটি হামলায় যথাক্রমে ছয় ও সাত জন নিহত হয়। এর প্রায় এক ঘণ্টা পর তাভিস্টক স্কয়ারে একটি দ্বিতল বাসে বোমা হামলা চালানো হয়। এতে নিহত হয় ১৩ জন। লন্ডনে বোমা হামলাকারী চার জঙ্গির সঙ্গে চরমপন্থি সংগঠন আল-কায়েদার সংযোগ ছিল।

পাকিস্তানের স্কুলে নৃশংস গুলিবর্ষণ:

২০১৪ সালের শেষ দিকে পাকিস্তানের পেশোয়ারে সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি স্কুলে বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালায় তালেবান জঙ্গিরা। এতে নিহত হয় ১৩০-এর বেশি শিক্ষার্থী। তাদের বয়স ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে বলে কর্তৃপক্ষ জানায়। জঙ্গি হামলায় একই বয়সী আরও অন্তত ১২০ জনের বেশি স্কুলশিক্ষার্থী আহত হয়। শুধু পাকিস্তান নয়, বিশ্বব্যাপী চলা সন্ত্রাসবাদের মধ্যে এটি ছিল ভয়ঙ্করতম। সেদিন দুপুরের আগে ৮ থেকে ১০ জন জঙ্গি সামরিক পোশাকে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে ঢুকে পড়ে। খবর পেয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা স্কুলের দিকে অগ্রসর হলে শুরু হয় তুমুল গোলাগুলি। প্রায় ৮ ঘণ্টার অভিযানের পর স্কুলটির নিয়ন্ত্রণ নেন সেনা সদস্যরা।

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম /০৩.৪৩ পিএম/২৯//২০১৭ইং)