• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ১০:৫৯ অপরাহ্ন

দেশের অর্থনীতি চাঙা বৈশাখে


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১৩, ২০১৭, ১২:৫৭ PM / ৩২
দেশের অর্থনীতি চাঙা বৈশাখে

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

ফুটপাত থেকে শুরু করে অলিগলির দোকান কিংবা বিলাসবহুল বিপণিবিতানে বৈশাখী পোশাক কেনাকাটার উৎসব চলছে। অনলাইনেও দেদার চলছে বৈশাখের কেনাকাটা। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদার করতে কার্ড ছাপিয়ে কিংবা উপহার পাঠিয়ে তাদের গ্রাহকদের বৈশাখী শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।
সরকারি কর্মচারীরা দুই বছর ধরে বৈশাখে উৎসব ভাতা পাচ্ছেন। অনেক বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারাও পিছিয়ে নেই। তাঁরাও বৈশাখী ভাতা পাচ্ছেন। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবার মঙ্গল শোভাযাত্রা করার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এভাবে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে বর্ষবরণের ব্যাপ্তি বাড়ায় বৈশাখকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধরনের গতি এসেছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।
২১ লাখ সরকারি কর্মচারী এবার ৭০০ কোটি টাকার বৈশাখী ভাতা তুলেছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে হিসাবটি মিললেও পয়লা বৈশাখ ঘিরে সারা দেশে কত টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য হয় তার কোনো পরিসংখ্যান কারও কাছে নেই।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ  বলেন, তিন-চার বছরে বৈশাখকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের কলেবর বেড়েছে। একসময় রমনা বটমূল ও রবীন্দ্রসরোবরে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হতো। এখন পাঁচ তারকা হোটেলেও বৈশাখী উৎসব হয়। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও বড় আকারে বৈশাখী মেলা হচ্ছে।
অবশ্য টাকার অঙ্কে বৈশাখী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিমাপ করতে চান না নাজনীন আহমেদ। তিনি বলেন, বৈশাখ সর্বজনীন উৎসব। এটি ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমানোর উৎসব। কারণ বৈশাখী উৎসবে পোশাক, মুড়িমুড়কি, তালপাখা, মাটির পুতুল ও হাঁড়ি-পাতিলের মতো হরেক রকমের দেশীয় পণ্যের কেনাবেচা হয়। এসব পণ্যের অধিকাংশই গ্রামাঞ্চলে উৎপাদিত। তাই বৈশাখী ব্যবসার ব্যাপ্তি বাড়ায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হচ্ছে। এটি দেশের মানুষের আয়বৈষম্য দূরীকরণ ও দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করবে।
বর্ষবরণের উৎসবে নতুন পোশাকের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি থাকে। গত কয়েক দিন রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি ও যমুনা ফিউচার পার্কের দেশীয় ফ্যাশন হাউস ঘুরে দেখা গেছে, বৈশাখী পোশাক কিনতে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য নগরীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে বৈশাখী পোশাক নিয়ে বসেছেন অনেক হকার।
দেশীয় ফ্যাশন হাউসের আড়ং, অঞ্জন’স, রঙ বাংলাদেশ, সাদাকালোর কর্তাব্যক্তিরা জানান, ঈদুল আজহার চেয়ে বৈশাখে পোশাকের বিক্রি বেশি হয়। এ জন্য পয়লা বৈশাখে প্রস্তুতি আগের চেয়ে বেড়েছে। সাদা-লালের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বিভিন্ন থিমভিত্তিক পোশাক তৈরিতে ঝুঁকছে ফ্যাশন হাউসগুলো।
বৈশাখ সামনে রেখে বসুন্ধরা সিটিতে নতুন বিক্রয়কেন্দ্র খুলেছে আড়ং। সব মিলিয়ে তাদের বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ১৭। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির বিপণন বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক তানভীর হোসেন বলেন, গত বছরের চেয়ে এবারের বৈশাখে ব্যবসা ভালো হচ্ছে। পোশাকের পাশাপাশি অন্যান্য সরঞ্জাম বিক্রি হয় বৈশাখে। অন্য সময়ের চেয়ে বৈশাখে মাটির থালা-বাসনের বিক্রি সবচেয়ে বেশি হয়।
ফ্যাশন প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফ্যাশন উদ্যোক্তা সমিতি (এফইএবি) ফ্যাশন হাউসগুলোর বিক্রিবাট্টা নিয়ে বছর পাঁচেক আগে একটি জরিপ করেছিল। সেটির সূত্র ধরে সমিতি বলছে, ফ্যাশন হাউসগুলোয় চলতি বছর ৭ হাজার কোটি থেকে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার বেচা-বিক্রি হতে পারে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশই হবে রোজার ঈদে। বাকি ২৫ শতাংশ পয়লা বৈশাখে। সেই হিসাবে প্রায় এক হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে বর্ষবরণে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে এফইএবির আজহারুল হক বলেন, ‘গত শুক্রবার থেকে বৈশাখের কেনাবেচা ভালোভাবে শুরু হয়েছে। আশা করছি, গতবারের চেয়ে এবার ২০ শতাংশ ব্যবসা বেশি হবে।’ তিনি বলেন, ফ্যাশন হাউসগুলোর বৈশাখী পোশাকের ২০ শতাংশ কাপড়ই প্রত্যন্ত এলাকার ক্ষুদ্র তাঁতিদের কাছ থেকে আসছে। তাই বৈশাখের ব্যবসা যত বাড়বে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা হবে এবং সেটি হচ্ছে।
বিক্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি অনলাইনেও বৈশাখী পোশাকের বেচাকেনা ভালো হচ্ছে বলে জানা গেল। বর্তমানে হাজারখানেক ই-কমার্স ওয়েবসাইট এবং ১০ হাজার ফেসবুক পেজের মাধ্যমে পোশাক কেনাবেচা হয়। জানতে চাইলে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি রাজীব আহমেদ বলেন, তিন বছর ধরে পয়লা বৈশাখে ভালো ব্যবসা হচ্ছে। অনলাইনের মাধ্যমে শাড়ি ও পাঞ্জাবি বেশি কেনেন ক্রেতারা। সাধারণ সময়ে দিনে ২০ হাজার অর্ডার পাওয়া গেলেও বর্তমানে ২৫-৩০ হাজার পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে ঐতিহ্যের সঙ্গে সংযোগ না থাকলেও ঢাকাসহ বড় শহরে বর্ষবরণে বৈশাখ উদ্যাপনে পান্তা-ইলিশ অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। অসময়ে বাড়তি ইলিশের জোগান দিতে দেড়-দুই মাস আগে থেকে মাছ মজুত করেন ব্যবসায়ীরা। তারপর বৈশাখের আগে দাম বাড়িয়ে দেন। সুপারশপগুলো ইলিশ বিক্রি করতে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিচ্ছে পত্রপত্রিকায়।
বৈশাখী ঐতিহ্যের সঙ্গে ইলিশের সংযোগ না থাকলেও মিষ্টির সঙ্গে আছে। বহু আগে থেকেই পয়লা বৈশাখে হালখাতা করেন ব্যবসায়ীরা। হালখাতায় ক্রেতা ও গ্রাহকদের মিষ্টিমুখ করান তাঁরা। হালখাতা না থাকলেও মিষ্টি খাওয়ানোর প্রচলন আছে। সব মিলিয়ে পয়লা বৈশাখে মিষ্টির দোকানের ব্যবসা যায় বেড়ে। পুরো ঢাকায় পাঁচ-ছয় শ মিষ্টির দোকান আছে। এমন তথ্য দিয়ে বাংলাদেশ মিষ্টি উৎপাদক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, পয়লা বৈশাখে মিষ্টি বিক্রি দুই থেকে তিন গুণ বেড়ে যায়। অনেক দোকানেই ১০-১২ মণ পর্যন্ত মিষ্টি বিক্রি হয় এক দিনেই।
এদিকে পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে অনেকে বৈশাখী ছুটি কাটাতে কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও সিলেটে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। কক্সবাজারের প্রায় সব হোটেল-মোটেল ইতিমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে বলে জানালেন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি তৌফিক উদ্দিন আহমেদ।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, পয়লা বৈশাখে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের বড় কারণটি পরিষ্কার। সেটি হলো—মানুষের আয় বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য উৎসবে বিদেশি জিনিস কেনার একটা প্রবণতা থাকে। তবে লোকজন নববর্ষে সচেতনভাবে দেশীয় পণ্য ব্যবহার করেন। এ জন্য ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প বিশেষভাবে উপকৃত হয়।

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম /০১.৫৪ পিএম/১৩//২০১৭ইং)