• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৯:৩৫ অপরাহ্ন

দারিদ্রে ঝরছে মেধা : এসএসসিতে সর্বোচ্চ সাফল্য পেলেও ভবিষ্যৎ লেখাপড়ায় শঙ্কা!


প্রকাশের সময় : জুন ২, ২০১৮, ৩:০৫ PM / ৩৩
দারিদ্রে ঝরছে মেধা : এসএসসিতে সর্বোচ্চ সাফল্য পেলেও ভবিষ্যৎ লেখাপড়ায় শঙ্কা!

ঢাকারনিউজ২৪.কম, কুড়িগ্রাম : ভূমিহীন পিতা আলসারে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় শায়িত। তার ঔষধের খরচ, পেটের খাবার, নিজের পড়াশুনা অপরদিকে দিনমজুর বাবার ৭ জনের সংসারে চারজনেই স্কুল-কলেজে পড়াশুনা করছে। তাদের খরচ মেটাতে পারছে না অভিভাবকরা। ফলে নিজেরাই দিনমজুরের কাজে লেগে পরেছে। তারপরও আটকে থাকেনি পড়াশুনা। বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও কঠোর পরিশ্রম আর মেধার জোড়ে ছিনিয়ে এনেছে সাফল্য। এদের জীবন যেন গল্পকেও হার মানিয়েছে।

মোঃ শাওন আহমেদ :
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের চর সুভারকুটি গ্রামের সন্তান শাওন আহমেদ। বাবা ফারুক আহমেদ একজন আলসারের রুগী। গত দু’বছর ধরে তিনি অসুস্থ্য। শারিরীক দুর্বলতার কারণে কাজকর্ম করতে পারেন না। ২০শতক বাড়িভিটা ছাড়া তাদের নিজস্ব জমি নেই। দুই ভাইবোনের সংসারে বাবা কর্মে অক্ষম হওয়ার পর মা ছালেহা বেগম ১৩ শতক জমি বন্ধক নেন। সেই জমিতে সবজি চাষ করে; তা বিক্রি করে চলে সংসারের চাকা। কখনো খেয়ে কখনো বা না খেয়ে দিন পার করতে হয়েছে তাদেরকে। বাবার অসুস্থ্যতার কারণে শাওনকেও বেচে নিতে হয় শ্রমের কাজ। এই বয়সে কখনো কাপড়ের দোকানে, কখনো মটর সাইকেল মেকারী বা কখনো বা দিনমজুরী করে সংসারে বাবার ঔষধ আর মাকে সহযোগিতা করেছে। তার ফাঁকে ফাঁকে চলেছে পড়াশুনা। মেধার জোড়ে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় কুড়িগ্রাম রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে বাবা-মায়ের চোখে আলোর দিশা হয়েছে সে। বর্তমানে মোটর মেকানিকের সহকারি হিসেবে কর্মে নিয়োজিত শাওনের নিজস্ব কোন ইচ্ছে নেই। সে শুধু চায় আরো পড়াশুনা করতে।

মো: মজনু হোসেন :
চার ভাই, বাবা-মা আর দাদীকে নিয়ে মজনুদের ৭ জনের টানাটনির সংসার। বুকে সুপ্ত ইচ্ছে আছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার কিন্তু দিনমজুর পিতার পক্ষে স্কুলের লেখাপড়া চালানোটাই ছিল কষ্টকর। তারপরু নিজের অদম্য ইচ্ছের বোধহয় জয় হল। বিদ্যুৎ বিহিন বাড়ীতে হারিকেনের আর ল্যাম্পের আলোয় চালিয়ে নিতে হয়েছে পড়াশুনা। কখনো কেরোসিনের অভাবে পড়াশুনা বন্ধ হয়ে গেছে। দিনমজুর বাবা সংসার টানতে না পারায় কলেজে পড়া বড় দুই ভাইসহ শ্রম দিতে হয়েছে মাঠে-ময়দানে। পরীক্ষার ফরম ফিলাপের টাকা দিনমজুরী করে জোগার করেছে মজনু। শত বাঁধা-বিপত্তির মধ্যেও চলতি এসএসসি পরীক্ষায় কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। তার ইচ্ছে ভবিষ্যতে প্রভাষক হবার। কিন্তু শুরুতেই যাদের জীবন আটকে পরেছে অভাবের যাতাকলে। তাদের পক্ষে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়াটাই এখন কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/২:৫২পিএম/২/৬/২০১৮ইং)