• ঢাকা
  • সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ন

‘দর্শক গল্প দেখতে চায়, নায়ক নায়িকার ফিটনেস নয়’


প্রকাশের সময় : জুলাই ২৮, ২০১৯, ১১:১৮ AM / ৩৪
‘দর্শক গল্প দেখতে চায়, নায়ক নায়িকার ফিটনেস নয়’

সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি : সাধারন দর্শক সিনেমা হলে গিয়ে এক্সক্লুসিভ গল্প ও সেই গল্পের নিখুঁত গাঁথুনি দেখতে চায়, নায়ক নায়িকাদের ফিটনেস বা ফ্যাশন শো নয়। ৯০ দশক পর্যন্ত বেশ ভালো মানের সিনেমা তৈরি হয়েছে দেশে। তখন অতো ফিটনেস বা ফ্যাশন নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা ছিলনা। সুজাতা থেকে শুরু করে লিমা পর্যন্ত নায়িকারা কিংবা আজিম থেকে শুরু করে জসিম পর্যন্ত নায়কেরা নিজেদের অভিনয় গুণ দিয়েই দর্শক হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। সাধারণ পোশাক ও সাধারণ সাজেই তারা দাপুটে অভিনয় করেছেন। আমরা এখনো তাদের সেইসব সিনেমাগুলো দেখলে চোখ ফেরাতে পারিনা। এখনো সেইসব ছবিতে অভিনয় শিল্পীরা আমাদের হাসালে হাসি, কাঁদালে কাঁদি। অথচ এখন জিম ডায়েট করে ফ্যাশনেবল পোশাকে পর্দায় উপস্থিত হয়েও দর্শকদের কেনো হলে টানতে পারেন না শিল্পীরা? কারণ, এখন কেউ অভিনয় করেনা। শুধু ফিটনেস আর ফ্যাশন দেখাতে গিয়ে অভিনয়টাকে ধুলিস্যাৎ করে ফেলেছে তারা। আর রইল মেকিং এর কথা। আধুনিকতার নামে মেকিং এর ক্ষেত্রেও চলছে একই সমস্যা- যাকে বলে গজামিল। জীবন নির্ভর ও টাইটফিট গল্প নেই, এক ডায়ালগ এর সাথে পরেরটির মিল নেই, শিল্পীদের থেকে সর্বোচ্চ ভাল কাজটুকু আদায় করার মতো সাহস নেই মেকারদের। উল্টো নায়ক নায়িকা নামে এখনকার কিছু ‘ছাল নাই কুত্তার তার বাঘা নাম’ টাইপের শিল্পীদের হাব ভাবের কাছে জিম্মি হয়ে কোনোমতে শুটিং শেষ করেই সিনেমা মুক্তি দিয়ে দেন মেকাররা(পরিচালক/প্রযোজকরা)। আর নাহয় চিন্তা করে দেখুন ৯০ এর দশকের অনেক সুপার ডুপার হিট সিনেমার একই পরিচালক এখন যখন সিনেমা বানায়, তা ফ্লপ হয় কেনো? সবকিছুতে সিনেমা হলের দোষ দেয়া যায় না। আগে নায়ক নায়িকা বলতেই পরিচালকের পা ছুঁয়ে প্রথম ক্যামেরার সামনে কাজ শুরু করত। আর এখন উল্টো ফ্যাশনেবল লুকওয়ালা নায়ক নায়িকাদের চেয়ার, ছাতা, খাবার এগিয়ে দিতে হয় মেকারদের। কেননা তারা জিম্মি। ‘একজন শাকিব খানকে নিলে সিনেমা হিট’, ‘শাকিব খান কোনো কারণে সিনেমা থেকে সরে গেলে সব শেষ’ প্রযোজকদের এমন মানসিক সমস্যার বলি হয়ে গুরু থেকে অনেকটা জিম্মি হয়ে বাধ্য লোকেদের মতো নায়ক নায়িকাদের নানা অন্যায় আবদার, বেয়াদবি সহ্য করে পরিচালকদের হাতে নেয়া সিনেমার কাজটুকু শেষ করতে হয়। আর কোনো কোনো সিনেমায় তো পর্দায় একজনকে দেখিয়ে অন্যজনের ডাবিং (কণ্ঠ) শুনা যায়। কারণ কি? নায়ক/নায়িকা অন্য সিনেমা নিয়ে ব্যাস্ত? ডাবিং এর সিডিউল দিতে পারেনি তারা? তাহলে সিনেমাটা হাতে ধরে নস্ট করল কেনো? শিল্পী সত্তাই যে ইন্ড্রাস্ট্রিতে নেই, সেখানে দর্শক ঠকানো সিনেমা ছাড়া আর কি তৈরি হতে পারে? নিজেকে দিয়ে বুঝি, একটি ভালো গল্প ও সেই গল্পের নিখুঁত গাঁথুনি যে কোনো কম/বেশি বাজেটের নাটক/সিনেমার প্রতি আমাদের কতটা টানে। আজো একটু আগে বিছানায় শুয়ে মোবাইল থেকে ইউটিউবে একটা সিনেমা দেখে পুরোটা মুহূর্ত অঝোরে কাঁদলাম। সিনেমাটা যখন মুক্তি পেয়েছে তখন হয়ত আমার জন্মও হয়নি। সার্থক সেই নায়ক নায়িকা তথা সিনেমার সকল শিল্পী, কলা কুশলী, মেকার। আমার মতে- নায়ক নায়িকা নয়, চলচ্চিত্র অঙনের প্রতিটি শিল্পী যতক্ষণ না নিজেরা শিল্পী সুলভ আচরন করছেন, ততক্ষণ এই শিল্পকে জাগিয়ে তেলা অসম্ভব।
লেখক : সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১১:১৬এএম/২৮/৭/২০১৯ইং)