• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৬:৪৬ অপরাহ্ন

চীনের সঙ্গে গোপনে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছিল বিএনপি


প্রকাশের সময় : মে ৪, ২০১৭, ৮:২৬ AM / ৫৮
চীনের সঙ্গে গোপনে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছিল বিএনপি

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

ভারতের সঙ্গে দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তির অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার কখনো দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি করেনি, করবেও না। বরং বিএনপিই সরকারে থাকতে চীনের সঙ্গে গোপনে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছিল। এমনকি তারা ওই চুক্তির ব্যাপারে দেশের জনগণ ও সংসদকে একটি কথাও জানতে দেয়নি।

গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে—এ ধরনের বিবৃতি সম্পূর্ণ অসত্য, মনগড়া, অবিবেচনাপ্রসূত এবং বাংলাদেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা মাত্র। আমরা ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি/সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি তার সবই দেশের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে ও দেশের উন্নয়নে। ’

সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভারত সফরকালে সম্পাদিত ১১টি চুক্তি, ২৪টি সমঝোতা স্মারক ও দুটি এসওপির (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর) বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত পথ ধরেই বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে দেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছি। দেশকে দ্রুত উন্নয়নের দিকে ধাবিত করতে এবং দারিদ্র্য নিরসনে যেসব চুক্তি/সমঝোতা স্মারক সম্পাদিত হয়েছে, তা দ্রুতই আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব। ’

একই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত সফরকালে যেসব চুক্তি/সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে তার সবগুলোর শিরোনাম ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কোনো চুক্তি/সমঝোতা স্মারকই দেশের স্বার্থবিরোধী নয়। তাই ভারতের সঙ্গে দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে—এ ধরনের বিবৃতি সম্পূর্ণ অসত্য, মনগড়া, অবিবেচনাপ্রসূত এবং বাংলাদেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা মাত্র।

একই প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়টি আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পাদনে অত্যন্ত আন্তরিক এবং তৎপর। ভারত সফরকালে দ্রুত এই চুক্তি সম্পাদনের জন্য আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জোর আহ্বান জানাই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন যে তাঁর সরকার ও আমার সরকার ক্ষমতায় থাকতেই তিস্তার পানিবণ্টনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে। ’

প্রধানমন্ত্রী সংসদে জানান, মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা পদক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা প্রদানের প্রয়াসে ভারত সরকার বেশ কয়েকটি ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—অতিরিক্ত ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা সন্তানকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতের পাঁচ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা প্রদান এবং প্রতিবছর ১০০ জন মুক্তিযোদ্ধার জন্য ভারতে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান। সংসদ নেতা গণহত্যা দিবসের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি আদায়ের প্রচেষ্টায় ভারতের সহযোগিতা কামনা করেন।

বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা বিষয়ে চুক্তি কিংবা সমঝোতা বিষয়ে মূল প্রশ্নকর্তার সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের সঙ্গেই আমাদের নানা চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক রয়েছে। প্রতিরক্ষা বিষয়ে চীন, রাশিয়া, কুয়েত, কাতারসহ অনেক দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক রয়েছে। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে চীনের সঙ্গে দেশের মানুষকে একটি কথাও না জানিয়ে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছিল। এমনকি সংসদকেও কোনো কিছু জানায়নি। ’

জাসদ দলীয় সদস্য নাজমুল হক প্রধানের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে সব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানে সরকার বদ্ধপরিকর। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুসারে সরকার তথা নির্বাহী বিভাগ সব ধরনের সহায়তা দিয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সংবিধান ও সংশ্লিষ্ট আইন দ্বারা নির্ধারিত বিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করতে সাংবিধানিকভাবে বাধ্য।

একাধিক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, ‘আইপিইউ সম্মেলনে বিশ্বের সংসদসমূহ ও জনপ্রতিনিধিদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ও সমর্থনের বিষয়টিই প্রতিফলিত হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন, এই সফল আন্তর্জাতিক অ্যাসেম্বলি দেখে ঘটে পানি থাকলে তাঁরা আর এসব কথা বলবেন না। ২০১৪ সালে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে যে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে, তা বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে উপস্থিত থেকে সমর্থন দিয়েছেন। ’ তিনি আরো বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচন আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় মাইলফলক হয়ে থাকবে। ’

সরকারি দলের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় সফল আইপিউ সম্মেলনের কথা তুলে ধরে বলেন, আইপিইউ ও সিপিএর মতো দুটি বড় আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। সব দেশ ২০১৪ সালের নির্বাচন গ্রহণ করেছে বলেই তারা বাংলাদেশকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে।

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম ০৮.২৪এএম/০৪//২০১৭ইং)