• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫০ পূর্বাহ্ন

কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে পাইলটের শেষ কথোপকথন


প্রকাশের সময় : মার্চ ১৩, ২০১৮, ৪:২৩ PM / ৪৭
কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে পাইলটের শেষ কথোপকথন

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ডেস্ক : ঢাকা থেকে নেপালের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ইউএস বাংলার একটি বিমান দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ৫০ জনের প্রাণহানির তথ্য পাওয়া গেছে এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে আরো ২১ যাত্রী।

বিধ্বস্তের পর থেকেই যে প্রশ্নটি আসছে তা হল- বিমানটি বিধ্বস্তের কারণ কি? কার ভুলে এতগুলো মানুষের প্রান গেল? নেপালের ইংরেজি দৈনিক কাঠমান্ডু পোস্ট কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে পাইলটের সর্বশেষ কথোপকথনের অডিও রেকর্ডের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে ককপিটে পাইলটের বোঝার ভুল বা বিভ্রান্তির কারণেই বিধ্বস্ত হয় বিমানটি।

বিমানটি অবতরণের আগে ইউএস বাংলা ফ্লাইটের পাইলটের সঙ্গে কন্ট্রোল রুমের চার মিনিট কথোপকথন অনুযায়ী প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমানবন্দরের রানওয়ে ০২ (দক্ষিণের শেষ প্রান্তের) ও রানওয়ে ২০ (উত্তরের শেষ প্রান্ত) নিয়েই দেখা দেয় বিভ্রান্তি।

কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে পাইলটের শেষ কথোপকথন :
কাঠমান্ডু পোস্ট এর প্রতিবেদন অনুসারে, কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে পৌঁছার পর রানওয়ের দক্ষিণ দিক (রানওয়ে ০২) দিয়ে অবতরণের কথা ছিল বিমানটির। কিন্তু বিমানটি আগে থেকে ঠিক করা দিক দিয়ে না নেমে উত্তর দিক (রানওয়ে ২০) দিয়ে অবতরন করতে চাইছিল। বিমানবন্দরের কন্ট্রোল রুমের সাথে পাইলট আবিদ সুলতানের শেষ কয়েক মিনিটের কথোপকথন থেকে মনে হচ্ছে, উত্তর দিক (রানওয়ে ২০) দিয়ে অবতরণ না করতে পাইলটকে সতর্ক করা হয়েছিল এবং বিমানটিকে আগের সিদ্ধান্তেই (রানওয়ে ০২ দিয়ে অবতরণ) অটল থাকতে বলা হয়েছিল।

পাইলট তখন জবাব দেন, ‘আচ্ছা। তাইলে আমরা ডানদিকে ঘুরছি।’ কয়েক সেকেন্ড পর পাইলট আবার বলেন, ডানে এসেছি… রানওয়ে ০২ (দক্ষিণ দিক) এর জন্য অপেক্ষা করছি।

কন্ট্রোল রুম জবাব দেয়, ‘ভালো। কিন্তু ল্যান্ড করবেন না। ট্রাফিক এখনো ঠিক নেই। আরেকটি বিমান এইদিকে আসছে।’

এই সময় নিচে থাকা নেপালি পাইলটরা কন্ট্রোল রুমকে এই বলে সতর্ক করে দিচ্ছিলেন যে ফ্লাইট ২১১ এর পাইলটকে বিভ্রান্ত মনে হচ্ছে। নেপালি পাইলটরা বলছিল, ‘পাইলটকে বিভ্রান্ত মনে হচ্ছে। বিমানটির যেকোন ক্ষতি এড়াতে রাডারের সাহায্য প্রয়োজন, কারণ পাহাড়গুলো (বিমানবন্দরের চারপাশে অসংখ্য পাহাড় আছে) স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না।’

প্রতিবেদনে অনুসারে, এ সময় কন্ট্রোল রুম থেকে উত্তরে বলা হয়, ‘বাংলাস্টার ২১১, রানওয়ে খালি করা হয়েছে। আপনি রানওয়ে ০২ নাকি ২০, কোন রানওয়েতে অবতরণ করতে চান? পাইলট জবাবে বলেন, ‘আমরা রানওয়ে ২০তে অবতরণ করতে চাই।’ কন্ট্রোল রুম এরপর ওই অবস্থানে থাকা বিমানটি সরিয়ে নেয়। এরপর পাইলটকে জিজ্ঞেস করা হয় তিনি রানওয়ে দেখতে পাচ্ছেন কিনা। প্রাথমিকভাবে পাইলট বলেন, তিনি রানওয়ে দেখতে পাচ্ছেন না। এরপর কন্ট্রোল রুম থেকে পাইলটকে ডানে ঘুরতে বলা হয়। এই পর্যায়ে পাইলট জানান, তিনি রানওয়ে দেখতে পাচ্ছেন।

এই পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম রানওয়ে ০২ (দক্ষিণ দিক) খালি করে দেওয়ার কথা জানায়। নেপালের বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক সঞ্জীব গৌতম বলেন, ‘রানওয়ে ০২তে অবতরণের আগে বিমানটি রানওয়ের উত্তর দিকে (রানওয়ে ২০) দুইবার চক্কর দেয়। বিমানটি নেপাল এয়ারলাইনসের হ্যাঙ্গারের ওপর দিয়ে উড়ে যায় এবং অল্পের জন্য কন্ট্রোল টাওয়ারের সাথে ধাক্কা খায়নি।’

এর কিছু সময় নিরব থাকার পর রেডিও কথোপকথনে শোনা যায়, কন্ট্রোল রুম থেকে বলা হচ্ছে, ‘আমি আবারও বলছি, ঘুরুন।’ কন্ট্রোলারের এই মুহূর্তের শব্দ শুনে মনে হচ্ছে তিনি তখন টাওয়ারের সাথে বিমানটির প্রায় ধাক্কা খাওয়ার মুহূর্তটি দেখেছেন। রেডিও কনভারসেশনে এরপর কিছুক্ষণ নিরবতা দেখা যায়। এরপরই কন্ট্রোল রুম থেকে ‘আগুন’ বলে চিৎকার করা হয়। এরপরই রানওয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এরপরই ২টা ১৮ মিনিটে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে দেখানো হয়। বিএস-২১১ মডেলের ওই বিমানটি বেলা ১২টা ৫১ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৬৭ জন যাত্রী ও ৪ জন ক্রু নিয়ে কাঠমান্ডুর উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

একজন কর্মকর্তা জানান, বিমানটি থেকে কোনো জরুরী অবস্থার কথা জানানো হয়নি। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছিল পাইলট বিভ্রান্ত অথবা বিমানে গুরুতর কোনো সমস্যা হচ্ছে। বিমানটি অবতরণের সময় অন্যান্য বিমান থেকেও কন্ট্রোল রুমকে জানানো হচ্ছিল যে ফ্লাইট ২১১ এর আচরণ স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।’

যদিও ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের প্রধান নির্বাহী ইমরান আসিফ এই ঘটনার জন্য কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে দায়ী করেছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘কন্ট্রোল রুম থেকে ভুল বার্তা দেওয়া হয়েছিল। আমাদের পাইলটের কোনো ভুল ছিল না।’

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/কেএস/৪:২০পিএম/১৩/৩/২০১৮ইং)