• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৯:২৪ পূর্বাহ্ন

এবার ডুবে গেলো পাগনার হাওর


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২৪, ২০১৭, ১:১৭ PM / ৩৬
এবার ডুবে গেলো পাগনার হাওর

 

ঢাকারনিউজ২৪.কম, সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার পাগনার হাওরের বাঁধ ভেঙে ১০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। আজ সোমবার ভোরে উরারবন্দ নামক স্থানের বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় হাওরটি। এটি ছিল জেলার সর্বশেষ সুরক্ষিত বড় হাওর। এর আগে শনিবার রাতে বাঁধ ভেঙে তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর বোরো জমির ফসল ডুবে যায়। জেলার বড় এই দুটি হাওর ডুবে যাওয়ায় এলাকাবাসী চরম অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাগনার হাওরটিতে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা ও নেত্রকোণার খালিয়াজুরি উপজেলার অনেক কৃষকের বোরো জমি রয়েছে। চৈত্রের শেষে সিলেট অঞ্চলে বোরো ফসলের ওপর বিপর্যয় শুরু হলে জামালগঞ্জের ফেনারবাঁক ইউনিয়নের পাগনার হাওরের ১০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী জানান, শতাধিক শ্রমিক রোববার রাতেও বাঁধে কাজ করেছেন। বাঁধ রক্ষায় ৫০ জন পাহারাদারও নিয়োগ ছিলেন। কিন্তু সোমবার ভোরে বৃষ্টির সময় উরারবন্দ বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে। গ্রাম পুলিশ, শ্রমিক ও পাহারাদারদের নিয়ে শেষ চেষ্টা করেও বাঁধ রক্ষা করা যায়নি।
ফেনারবাঁক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু তালুকদার জানান, হাওরের এত বড় দুর্যোগে পাউবোর কোনো অফিসারকে বাঁধে পাওয়া যায়নি।
পাগনার হাওরের ধান সবে মাত্র পাকতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে বাঁধ ভেঙে সব তলিয়ে যায়।
এর আগে ৩১ মার্চ দিরাই উপজেলার বরাম হাওরের তুফানখালি বাঁধ ভেঙে বরাম হাওর এবং পরদিন একই উপজেলার বৈশাখীর বাঁধ ভেঙে চাপতির হাওর, উদগল, টাংনি, গোরমার হাওর। এর পর একে একে জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার বৃহত্তম নলুয়ার হাওর, জেলার বৃহত্তম দেখার হাওর, জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওর, শাল্লার ছায়ার হাওর ও বেড়ামোহনাসহ জেলার সবকটি হাওর।
৩০ মার্চ থেকে অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে একে একে জেলার সবকটি হাওরের ফসল তলিয়ে গেছে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, সুনামগঞ্জ জেলায় এ বছর ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। প্রশাসন বলছে, ৮২ শতাংশ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কৃষকেরা বলছেন, ৯০ শতাংশ। এ অবস্থায় রক্ষা পেয়েছিল শনির হাওর। এটি ধানের খনি বলে কৃষকমহলে পরিচিত।

তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামের মানুষের জমি আছে শনির হাওরে। প্রায় ২২ হাজার একর জমির মধ্যে তাহিরপুরের বাসিন্দা কৃষকের জমি আছে প্রায় ১৬ হাজার একর।
অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রক্ষা বাঁধ ভেঙে কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জসহ বিস্তৃর্ণ হাওর এলাকা ডুবে যায়। ফলে কৃষকদের কয়েক হাজার কোটি টাকার ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত সপ্তাহে শুরু হয় মাছ ও হাঁসসহ জলজ প্রাণির মড়ক। প্রাথমিকভাবে ধানগাছ পঁচে অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন হওয়ার কারণে মাছ ও জলজ প্রাণি মরছে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু হাওরের পানিতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছাকাছি মেঘালয়ের একটি অসসম্পূর্ণ ইউরেনিয়াম খনি থেকে ইউরেনিয়াম মিশে ভয়াবহ বিপর্যয় হতে পারে- এ খবর প্রকাশের সঙ্গে নড়েচড়ে বসে সরকার।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল হাওরের পানির নমুনা সংগ্রহ করতে সুনামগঞ্জের কয়েকটি হাওর পরিদর্শন করছেন।
এ ছাড়া সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে আণবিক শক্তি কমিশনের একজন সিনিয়র সদস্য ও অভিজ্ঞ বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে আরো একটি দল হাওরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। সুনামগঞ্জের হাওরে মাছ এবং জলজ প্রাণি মারা যাওয়ার ঘটনায় তেজস্ক্রিয়তার কোনো প্রভাব আছে কি না—তা পরীক্ষা করতে শনিবার রাতেই সুনামগঞ্জে পৌঁছায় আনবিক শক্তি কমিশনের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল।
সুনামগঞ্জের দেখার হাওরের পানি পরীক্ষা শেষে রোববার সকালে আনবিক শক্তি কমিশনের প্রতিনিধি দলের প্রধান ড. দীলিপ কুমার সাহা সাংবাদিকদের জানান, সুনামগঞ্জের হাওরের পানিতে প্রাথমিকভাবে তেজস্ক্রিয়তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং স্বাভাবিকভাবে যে ধরনের তেজস্ক্রিয়া পরিবেশে থাকে তার চেয়েও অনেক কম রয়েছে।
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১:১৫পিএম/২৪/৪/২০১৭ইং)