• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০৬:৪৭ পূর্বাহ্ন

এখনও জঙ্গি আতঙ্ক কাটেনি আশকোনায়


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২১, ২০১৭, ৯:৪৪ AM / ২৩৬
এখনও জঙ্গি আতঙ্ক কাটেনি আশকোনায়

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

রাজধানীর বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকা আশকোনা। উত্তরা এলাকা যেভাবে রাজধানীবাসীর কাছে পরিচিত ঠিক ওইভাবে পরিচিত না হলেও সাম্প্রতিক জঙ্গি আস্তানা আর হামলার কারণে আশকোনা শুধুমাত্র রাজধানী নয়; সারাদেশে আলোচিত এক নাম। গত ডিসেম্বর থেকে শুরু করে চলতি মাসের শুরুর দিক তিনটি জঙ্গি হামলার ঘটনায় এ এলাকা এখন আতঙ্কের। জঙ্গি আতঙ্ক এখনও এলাকার মানুষকে তাড়িয়ে বেড়ায়।

ধারাবাহিক ঘটনায় মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে জঙ্গি আতঙ্ক কাজ করছে। বিশেষ করে নতুন ভাড়াটিয়ারা এ আতঙ্কের কারণে নানা সমস্যায় পড়ছেন। বাসার মালিকরা বাড়িভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করছেন। সরেজিমন ওই এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ডিসেম্বরের ২৩ তারিখ দিবাগত রাতে আশকোনার সূর্য ভিলায় জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পান কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা। রাতেই বাড়ি ঘিরে ফেলেন তারা। এরপর ভেতরে থাকা জঙ্গিদের আত্নসমর্পণ করার আহবান জানানো হয়। আহবানে সাড়া দিয়ে ৪ জন আত্নসমর্পণ করলেও বাকি একজন সুসাইড ভেস্ট দিয়ে আত্নঘাতী বিস্ফোরণ ঘটান। এতে তিনি মারা যান। এছাড়াও অভিযানে নব্য জেএমবির নেতা তানভির কাদরির ছেলে নিহত হয়। মূলত এ অভিযানে আলোচিত নব্য জেএমবির প্রধান মুসার স্ত্রী তৃষা মনি ও জাহিদের স্ত্রী আত্নসমর্পণ করেন। এ অভিযানের নাম দেয়া হয় অপারেশন রিপল ২৪।

এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে আলোচনায় আসে আশকোনা। দেশে ও দেশের বাইরে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয় ঘটনাটি।
এরপর ১৭ মার্চ র‌্যাবের নির্মানাধীন র‌্যাবের সদর দপ্তরে আত্নঘাতী হামলার চেষ্টা করা হয়। জুম্মার নামাজের পরপর এ ঘটনায় হামলাকারী দেহ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। অল্পের জন্য রক্ষা পান র‌্যাব সদস্যরা। ওই ঘটনাও আশকোনায়। এ ঘটনায় ইরাক-সিরিয়া ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস দায়ও স্বীকার করে। র‌্যাব ক্যাম্পে আত্নঘাতি হামলার চেষ্টার ঘটনাও দেশ ও দেশের ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী গণমাধ্যম খবরটি প্রকাশ করে। এ ঘটনাতেও আশকোনা ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে।

ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ২৪ মার্চ পুলিশের চেকপোষ্টে আত্নঘাতী হামলার চেষ্টা করে জঙ্গিরা। এতে পুলিশ সদস্য হতাহত না হলেও আত্নঘাতী জঙ্গি নিহত হয়। এ ঘটনাও আইএস দায় স্বীকার করে। এতে আশকোনা আলোচনায় আসে।

দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত ইন্টার পার্লামেন্টারি সভার আগে জঙ্গিরা এ হামলার চেষ্টা করে বলে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মত দেন। এ ঘটনার পর থেকে পুলিশও সতর্ক। প্রায়ই এ এলাকায় ব্লক রেইড দিচ্ছে পুলিশ। ধারাবাহিক জঙ্গিদের হামলা ও পুলিশের তৎপরতায় এলাকাতে এক প্রকার আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বিশেষ করে অনেক ভাড়াটিয়া এ ঘটনাতে বাসা ছেড়ে দিয়েছেন আবার অনেক ভাড়াটিয়াকে ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক অবলম্বন করছেন বাড়ির মালিকরা।

আশকোনা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মজিদ বলেন, জঙ্গি কর্মকান্ডের পর এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। অনেক ভাড়াটিয়া এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। আবার যারা রয়েছেন তারাও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
তিনি বলেন, বিমানবন্দর কেন্দ্রিক লাগোয়ো এলাকায় বিশেষ করে যারা বিমানবন্দরে চাকরি করেন কিংবা উত্তরা এলাকায় চাকরি করেন তারা বেশির ভাগ থাকেন। এছাড়াও এলাকাতে অপেক্ষাকৃত কম বাড়ি ভাড়ার কারণে অনেকে থাকেন। কিন্তু এ ঘটনার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে এক প্রকার আতঙ্ক কাজ করছে। অনেকের যেমন নতুন ভাড়াটিয়া পেতে সমস্যা হচ্ছে আবার অনেক ভাড়াটিয়া চলেও যাচ্ছেন।

ইস্রাফিল আলম নামে এক বাসিন্দা বলেন, এলাকাটি বর্তমান সময়ে জমে উঠছে আর এমন মুহূর্তে জঙ্গি ঘটনায় এলাকাতে নতুন ভাড়াটিয়া আসতে চাচ্ছে না। যারা আসছেন অনেকটা অসহায় হয়ে আসছেন।

তিনি বলেন, যারা মতিঝিলে কিংবা সচিবালয়ে চাকরি করেন তারাও এ এলাকাতে থাকেন। কেননা সবাই ট্রেনে যাতায়াত করে। আর ট্রেনে ট্রাফিক জ্যাম বলতে কিছু নাই। কিন্তু এমন সময় কয়েকটি ঘটনায় মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক ঢুকে গেছে।

তিনি আরও বলেন, প্রায় প্রতিরাতে পুলিশ অভিযান চালায়। যেখানে সারারাত মানুষের অবাধ যাতায়াত ছিল সেখানে সন্ধ্যার পর তেমন লোকজন থাকে না। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বের হয় না।

বিমানবন্দর থানার ওসি নুরে আজম মিয়া বলেন, যেহেতু ওই এলাকা কেন্দ্রিক কয়েকটি ঘটনা সুতরাং আতঙ্ক থাকা স্বাভাবিক। তবে আমরা নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছি। কোন ধরনের যেন অপতৎপরতা না থাকে সে ব্যাপারে কাজ করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই। কোন ধরনের অপতৎপরতা দেখলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে জানানোর আহবান জানান তিনি।

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম ০৯.৪৫এএম/২১//২০১৭ইং)