• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১০:৪২ অপরাহ্ন

একাদশ সংসদ নির্বাচন! বাস্তবতা ও প্রেক্ষাপট!


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ১৯, ২০১৮, ১০:৩৭ AM / ১০২
একাদশ সংসদ নির্বাচন! বাস্তবতা ও প্রেক্ষাপট!

গোলাম মাওলা রনি : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের রাজনৈতিক মিত্রদের একটাই কথা- যেকোনো মূল্যে আগামী সংসদ অর্থাৎ একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করতে হবে। দলীয় শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে প্রান্তিক পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পর্যন্ত বলাবলি করছেন, আগামী নির্বাচনে পরাজয়ের অর্থই হলো সমূলে বিনাশ হওয়ার আশঙ্কা। কাজেই ন্যায়নীতি, ছলবল, কূটকৌশল যা কিছু রয়েছে রাজনীতির দুনিয়ায় তার পুরোটাই আমদানি করে হলেও নির্বাচনে জিততে হবে…। হোক সেটা ইতালির কুখ্যাত মেকিয়াভেলির তত্ত্ব কিংবা ভারতের কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ চাণক্যের কোনো সূত্র, তা নিয়ে ভাবার দরকার নেই। কারণ, এই মুহূর্তে যেহেতু জয়ের বিকল্প নেই সেহেতু জয়ের জন্য যা যা করা দরকার তা-ই করতে হবে একদম চোখমুখ বন্ধ করে।

ক্ষমতাসীন দল ও জোটের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি এবং তাদের মিত্ররাও একাদশ সংসদ নির্বাচনকে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার এবং বাঁচা-মরার সংগ্রাম হিসেবে দেখছেন। এক যুগ ধরে তারা কেবল ক্ষমতার বাইরে রয়েছেন তা নয়- বরং ক্ষমতা কাহাকে বলে- উহা কত ধরনের এবং কী কী, ক্ষমতার রঙ, বর্ণ, সং-মং কেমন হতে পারে তা যেমন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন, তেমনি ক্ষমতার নানাবিধ চোখরাঙানি, হুমকিধমকি এবং চোখ উল্টানোর নৃত্যকলার দাপুর-দুপুর তাললয়ের সুধারসে সিক্ত হয়েছেন বারবার। এসবের ফলে বিএনপিতে স্পষ্টতই দু’টি শ্রেণী পয়দা হয়েছে। একশ্রেণীর নেতাকর্মী সব রকম তাপচাপ সহ্য করে অদম্যভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় অর্জন করেছেন; অপর দিকে, আরেকটি শ্রেণী কারণে অকারণে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পালিয়ে বেড়ানোর এবং মাথা নত করার দুরন্ত এক যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেছেন।

বিএনপির অদম্য দলটি মনে করছে সামনের সময়টি কেবলই তাদের। কারণ, যুদ্ধের ময়দানে টিকে থাকার যে শক্তি ও কৌশল তারা রপ্ত করে ফেলেছেন, তা আগামী নির্বাচনে ক্ষমতাসীনেরা অক্ষরে অক্ষরে টের পাবেন। অন্য দিকে, হতোদ্যম দলটি মনে করে যে, আগামীতে ও বর্তমানে ক্ষমতাসীনেরা নির্বিঘেœ ক্ষমতায় চলে যাবে। কাজেই তাদের সাথে সমঝোতা করে যদি কিছু জোটে সেটাই সর্ববিবেচনায় মঙ্গল। অযথা ঝক্কিঝামেলা করে ক্ষমতাসীনদের টেক্কা দেয়ার ক্ষমতা যেহেতু বিএনপির নেই, সেহেতু গৃহপালিত অথবা সেমি গৃহপালিত রূপ ধারণ করে সংসদে ৩০-৪০টি আসন, দু-চারটি মন্ত্রীর পদ এবং ১০-১২টি সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদ পেলে মন্দ কী! ক্ষমতাসীনদের সাথে টেক্কা দিতে গিয়ে যদি পরাজিত হতে হয়, তবে সমূলে বিনাশ অনিবার্য। সে ক্ষেত্রে তাদের সাথে তাল মিলিয়ে যদি আপাতত অস্তিত্ব রক্ষা করা যায়, তবে অদূরভবিষ্যতে সুযোগ বুঝে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভবপর হবে।

একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং তাদের প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপি ছাড়া অন্যান্য দলও নানা রকম হিসাব-নিকাশ করে চলেছে। জাতীয় পার্টি, জামায়াত, সিপিবি, জাসদ, বাসদ, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, জাকের পার্টি প্রভৃতি রাজনৈতিক দল ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, এনজিও, ব্যবসায়ী গ্রুপ, মানবাধিকার সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন, পীর ও মাজারকেন্দ্রিক ভোটারেরা, ফেসবুক, টুইটার প্রভৃতি সামাজিকমাধ্যমকেন্দ্রিক ভোটার ছাড়াও সংবাদপত্র এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম আগামীর নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের চাবিকাঠি হিসেবে এতটাই শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে, যা অতীতে কেউ কখনো কল্পনাও করেনি।

কাজেই দেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল যদি তাদের অভ্যাসমতো রাজনীতির সাধারণ যোগ-বিয়োগ কষে এগোতে থাকে তবে নির্বাচনে বিপর্যয় একেবারে অনিবার্য হয়ে পড়বে। কারণ উদ্ভূত পরিস্থিতি, সাম্প্রতিক বছরগুলোর নানা ক্লেদ, খেদোক্তি এবং দশম সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট আমাদের দেশীয় রাজনীতির ভূ-অভ্যন্তরে অগ্ন্যুৎপাতের জ্বলন্ত লাভার বিশাল সাগর সৃষ্টি করেছে, যা সর্বশক্তি নিয়ে আগামীর নির্বাচনে মাটি ফুঁড়ে হঠাৎ করেই বের হয়ে আসবে নতুন নতুন জ্বালামুখ দিয়ে। রাজনৈতিক দল, সুধীসমাজ, সাধারণ জনগণ ছাড়াও রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগ-অনুবিভাগে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আমাদের বন্ধুরাষ্ট্রগুলো একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য স্থির করে ফেলেছেন। ফলে গত চার বছরের সীমাহীন আনুগত্য, দলবাজি ও স্বার্থবাদী গ্রুপটি সরকারের শেষ সময়ে কেমন ছটফটানি শুরু করে দিয়েছে, তা কমবেশি সবার নজরে চলে এসেছে। এবারের নির্বাচন কেন্দ্র করে প্রচলিত রাজনীতির মাঠ গরম করা কোনো কর্মসূচির দিতে কোনো রাজনৈতিক দলই আগ্রহ দেখাচ্ছে না। অন্য দিকে, নির্বাচনের আগে সচরাচর যেসব দেশী ও বিদেশী প্রতিষ্ঠান নানামুখী তৎপরতা চালাত, তাও এবার দৃশ্যমান নয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সব পক্ষ তাদের সর্বোচ্চ মেধা ও কূটকৌশল ব্যবহার করে এবারের নির্বাচনে জয়লাভের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সর্বমহলের বুদ্ধির খেলা প্রতিযোগিতার পেছনে অবশ্য কতগুলো বাস্তব এবং অতিপ্রাকৃত বিষয় লুকায়িত রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করেছে, গত চার বছরে বাংলাদেশের রাজনীতির ভাগ্যাকাশে কারো কারো জন্য এত বিশাল পূর্ণিমার চাঁদ উদিত হয়েছে, যা তাদের মানবীয় মন-মস্তিষ্ক কল্পনাও করতে পারেনি। অন্য দিকে, ঘোর অমানিশার ভরা জোয়ারে অনেকের সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে তাদের এমন অবর্ণনীয় দুঃখদুর্দশায় ফেলেছে, যা তারা কল্পনাও করতে পারেনি। অমাবস্যা-পূর্ণিমার বাইরে কারো জীবনে বয়ে গেছে অপ্রত্যাশিত কালবৈশাখীর ঝড়ঝাপটা এবং সুনামির মহা প্রলয়। অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি এবং একই রূপে বঞ্চিত হওয়ার কারণে কিছু মানুষের আত্মবিশ্বাস ও উচ্চাশা যেমন গগনে পৌঁছে গেছে, তেমনি বঞ্চিত হতে হতে কিছু মানুষ নিজেদের হতভাগ্য বানিয়ে পাতালপুরিতে বসবাসের জন্য অভিযাত্রা শুরু করে দিয়েছে।

মানুষ যখন তার পরিশ্রম অনুযায়ী ফল পায় না অথবা বিনা পরিশ্রমে ফল ভোগ করতে থাকে তখন তারা স্বভাবতই নিয়তিনির্ভর হয়ে পড়ে। যারা নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করেন তারা ধরেই নেন যে, ভাগ্যদেবতা কোনো কারণ ছাড়াই তাদের অকাতরে সবকিছু দিয়ে দিয়েছেন। ফলে তারা তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম, দায়িত্ব-কর্তব্য এবং পরিশ্রম থেকে বিমুখ হয়ে অদ্ভুত এক মনমানসিকতার ধারক ও বাহক হয়ে পড়েন। অনুরূপভাবে বঞ্চিতরা সাধারণত আত্মসমালোচনা না করে কেবল নিয়তির ওপর সব দায় চাপিয়ে হয় পরিত্রাণের জন্য প্রার্থনা নতুবা প্রতিপক্ষের ধ্বংসের জন্য অভিসম্পাত করতে থাকেন। বাংলাদেশের রাজনীতির পক্ষ ও বিপক্ষের দল ও গোষ্ঠী প্রকৃতির সেই অমোঘ নিয়মের জালে কতটা বন্দিত্ব বরণ করেছে তা আমি বলতে না পারলেও এ কথা দিব্যি করে বলতে পারি, বিএনপি এবং তাদের সহযোগীরা স্বপ্নেও কল্পনা করেননি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারবে এবং সেই নির্বাচনকেন্দ্রিক সরকার টানা চার বছর নির্বিঘ্নে দেশ শাসন করে পঞ্চম বছরে পা দেবে। অন্য দিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের মিত্ররা স্বপ্নেও ভাবেনি, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ফলাফল টানা পাঁচ বছর ভোগ করা যাবে।

উপরোল্লিখিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গত চারটি বছরের বেশির ভাগ সময় দেশের রাজনৈতিক পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তিগুলো অতিমাত্রায় নিয়তিনির্ভর হয়ে অলস দিন কাটিয়েছে। সরকার ভেবেছে, তারা নিকট অতীতের মতো আগামী দিনগুলোতে নির্বাচন নামের দাবার ঘুঁটির চালে ক্ষমতার কিস্তি মাত করে অনায়াসে সময় পার করে দিতে পারবে। বিভিন্ন উপনির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর নির্বাচনে সরকার বিগত ৫ জানুয়ারির মন্ত্র প্রয়োগ করে অভূতপূর্ব সফলতা পেয়ে নিজেদের ব্যাপারে ক্রমেই প্রবল থেকে প্রবলতর আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল। আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতি অলৌকিকভাবে গত চারটি বছর ক্ষমতাসীনদের পক্ষে ছিল। জাতিসঙ্ঘ, আইপিইউ বা আন্তর্জাতিক পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ পার্লামেন্ট, রেড ক্রস প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংস্থার নেতৃত্ব লাভ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নমনীয় মনোভাব, চীন, ভারত, রাশিয়া ও সৌদি আরবের বন্ধুত্ব ক্ষমতাসীন সরকারকে অনেকটা নিশ্চিত, ভাবনাহীন এবং আত্মপ্রত্যয়ী করে তোলে।

সরকারের আত্মপ্রত্যয়ী অবস্থানের প্রতিকূলে দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের উপায় খুঁজে না পেয়ে ক্রমেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। অনেকে নিয়তিনির্ভর হয়ে আসমানি বালা মুসিবত, ঝক্কিঝামেলা এবং ঘটনা-দুর্ঘটনার মাধ্যমে সরকার পতনের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠেছিল। অনেক বড় বড় নেতাকে আত্মপ্রত্যয় নিয়ে বলতে শুনেছি- নাহ! এভাবে চলতে পারে না- কারণ, ওভাবে অতীতে কেউ চালাতে পারেনি। ফেরাউন পারেনি, হিটলার পারেনি কিংবা মুসোলিনি, হালাকু থেকে শুরু করে হাল আমলের সাদ্দাম-গাদ্দাফিও পারেনি। এত অত্যাচার, জুলুম ও অন্যায় করে যদি কেউ পার পেয়ে যায়- তবে দুনিয়ায় কেউ ভালো কাজ করবে না। সবাই মন্দ কাজের কাজী হওয়ার জন্য পরস্পরের প্রতিযোগিতা করবে। কাজেই অপেক্ষা করেন! আল্লাহর পক্ষ থেকে ফয়সালা আসবে।

বিগত চার বছরে আল্লাহর পক্ষ থেকে সরকার পতনের কিংবা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের জন্য ধ্বংসাত্মক কোনো ফয়সালা না এলেও সাম্প্রতিক কালে হঠাৎ করে একাদশ নির্বাচনের যে অভূতপূর্ব এবং বলতে গেলে অপ্রত্যাশিত জোয়ার এসেছে, তাতে নিয়তিবাদীরা বেশ বিপদেই পড়েছেন। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে একাদশ সংসদ নির্বাচনটি হবে তুমুল প্রতিযোগতিামূলক ও অংশগ্রহণমূলক, যেখানে বিগত দিনের মতো বিনাভোটের নির্বাচন, সিল পেটানো, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, ইচ্ছেমতো রেজাল্টশিট আগেই তৈরি করে তা সময়মতো ঘোষণা দেয়া, একতরফা নির্বাচন, ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাচন কমিশন ও সরকারি প্রশাসন যন্ত্রকে হুকুমের গোলাম বানিয়ে যাচ্ছেতাই করার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই ভোটের মালিক অর্থাৎ ভোটারেরা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সাহসী ও উদ্যমী হয়ে উঠছেন যা মহলবিশেষকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে।

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়ের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণেও সম্ভাব্য নির্বাচনের সময় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস বলে উল্লেখ করেছেন। এ অবস্থায় সব কিছু যদি ঠিকঠাকমতো এগোতে থাকে তবে আগামী জুলাই-আগস্ট মাস থেকেই সারা দেশে নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়ে যাবে। এবারের নির্বাচনে মানুষের আচরণ এবং মনতাত্ত্বিক সিদ্ধান্ত যুগপৎভাবে এক অপূর্ব রসায়ন সৃষ্টি করবে। মানবমনের চিরায়ত চরিত্র হলো তারা প্রাপ্তির চেয়ে অপ্রাপ্তি এবং সম্মানের চেয়ে অসম্মানিত হওয়ার স্মৃতিকে মারাত্মকভাবে মনে রাখে। অর্থাৎ আপনি যদি কোনো মানুষকে প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে এক লাখ টাকাও দান করেন এবং বিপরীতে লোকটির এক টাকার স্বার্থহানি বা স্বার্থ থেকে বঞ্চিত করেন তাহলে সময় ও সুযোগমতো লোকটি দিব্যি আপনার লাখ টাকার দান ভুলে যাবে এবং আপনাকে বাগে পেলে আপনার গলায় পাড়া দিয়ে তার প্রাপ্য এক টাকা আদায় করে নেবে। একইভাবে আপনি যদি কাউকে একবার অপমান করেন তবে সে সুযোগ পেলেই প্রতিশোধ নেবে। কাউকে অপমান করার পর আপনি যদি লোকটিকে শতবার দুধ-মধুর সাগরে অবগাহন করিয়ে স্বর্ণকোমলখচিত পোশাক পরিয়ে রাজসিংহাসনে বসিয়ে দেন, তবুও লোকটি তার অপমানের স্মৃতি ভুলবে না, বরং লোকটির সুসময় এবং সৌভাগ্য যত বেশি প্রবল হবে ততই তার অতীত অপমানের স্মৃতি দগদগে ঘা আকারে তাকে অস্থির করে তুলবে।

উল্লিখিত প্রেক্ষাপটের আলোকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের রূঢ় বাস্তবতা হবে রাজনীতির সাধারণ হিসাব-নিকাশের বাইরে। জনগণের দেনা-পাওনা, শাসকের শাসন-শোষণ, বিচারপ্রার্থীর হতাশা-বোবাকান্না, ক্ষমতাধরদের উল্লম্ফন এবং উচ্চস্বর, অত্যাচারিতের ক্রন্দন, দুর্নীতিবাজদের উল্লাসনৃত্য, ভদ্রলোকদের অসহায় কাষ্ঠহাসি ইত্যাদি সবকিছু একাকার হয়ে নির্বাচনের মাঠকে এসিডবৃষ্টিতে কর্দমাক্ত করে দেবে- আর সেই মাঠের এসিড টেস্টে উত্তীর্ণ হয়ে যারা জনগণের সমর্থন, সহানুভূতি এবং সহযোগিতা লাভ করবেন, তারাই আগামীর বিজয়মাল্যে ভূষিত হবেন বিপুল গৌরবে।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১০:৩৫এএম/১৯/১/২০১৮ইং)