• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন

অহঙ্কারই পতনের মূল


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭, ৮:০৪ PM / ৪০
অহঙ্কারই পতনের মূল

 
ছটকু আহমেদ : সুদের ব্যবসা করে বিদঘুটে মেকআপ ও জটাধারী আম্মাজান নামধারী নূতন এবং তার মেয়ে অহঙ্কারী বুবলি। যদিও বুবলির অহঙ্কারের চেয়ে বেশি দেখা গেছে তার সুদের টাকা নিয়মিত না দেওয়ার জন্য ক্যাডার বাহিনী নিয়ে করা নিষ্ঠুর অত্যাচার। যার শিকার হয়ে কেউ খুন হচ্ছে, কোনো বউ তার স্বামীকে সেন্ডেল পেটা করছে, কেউ গলায় দড়ি দিয়ে সুইসাইড করছে, কারও পেটের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, কারও ঘরবাড়ি সব জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এমনকি অত্যাচারিত মানুষের নির্ভরতার প্রতীক থানা পুলিশকেও সে হাত করে নিষ্ঠুর ব্যবহার করছে। বিশাল গাড়ির বহর নিয়ে ক্যাডার বাহিনী এভাবে সুদ আদায় করা আমাদের দেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো দেশে আছে বলে আমার জানা নেই। যদিও এটি এ দেশের ছবি আর আমরা ছবিকে বলি সমাজের আয়না। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, যারা সুদ দিচ্ছে না, তাদের না দেওয়ার মতো কোনো অভাবী পরিবেশ দেখা যায়নি। বিশেষ করে নায়কের বাবা সাদেক বাচ্চু মেয়ের সাতুই করছে ঘরবাড়ি ফুল দিয়ে সাজিয়ে অথচ সুদের টাকা দিচ্ছে না। বাসায় বিশাল সোফা সেট, সিএনজি গাড়ি অথচ বিপদে পড়ে মেয়ের বিয়ের জন্য যে টাকা নিয়েছে তা শোধ দেওয়ার কোনো ইচ্ছাই তার নেই। তাই এদের ওপর অত্যাচারটা খুব একটা বেদনাদায়ক দর্শকের কাছে হয়ে ওঠেনি। মানুষকে দুঃখ দিতে হলে তার একটা পরিবেশ তৈরি করার লেন্থ দিতে হয় সেসবের তোয়াক্কা এ ছবিতে নেই। যেহেতু ডিজিটাল যুগ, সুতরাং ঝটপট কান্না দর্শকের চোখে আনতে হবে। কিন্তু মানুষের মনটা ডিজিটাল নয়, বিবেকটা ডিজিটাল নয়, আবেগটাও ডিজিটাল নয়। আর চোখে পানি ঝরাতে হলে মনে আঘাত লাগাতে হয়। যাক, এরকম লিখলে মহাভারত হয়ে যাবে, শর্টকাটে গল্পের কথায় আসি। এ রকম এক অত্যাচারিত মানুষের আহাজারি_ এমন একজন আসবে যে এই নিষ্ঠুরতার জবাব দেবে এবং যথারীতি বহুল ব্যবহৃত এ সংলাপের শেষে নায়ক শাকিব খান ইন করে এক নির্জন রাস্তায় আর তার সামনে লাইন করে অনেক সিএনজি এগিয়ে আসে এবং তারা সিএনজি থামিয়ে শাকিবকে বলে, পথ ছেড়ে দে। মনে হলো শাকিবের জন্য এতগুলো ছাগলের পালের মতো সিএনজি রাস্তা দিয়ে যেতে পারছে না। কিন্তু পরে বোঝা গেল তারা ছাগলের পাল নয়, সিএনজি লুটেরা। তারা একসঙ্গে এতগুলো সিএনজি চুরি করে মিছিল করে যাচ্ছে। সেই এনালগ কালের কাহিনীর মতো হিরো ইন করলে একটা ফাইট দিতে হবে সেটা এই ডিজিটাল যুগেও এরা বাদ দিতে পারেনি। সবাইকে মেরে শাকিব ড্রাইভারদের সিএনজি ফিরিয়ে দেয়। তারপর শুরু হয় কমেডির নামে একটা বিশ্রী ভাঁড়ামির দৃশ্য। দিনে বাবা-মাকে সম্মান করে সিএনজি ড্রাইভার [সেকেন্ড নায়িকা] তমা মির্জার মামা, রাতে মদ খেয়ে বাবা-মাকে লাথি মেরে ও ঘাড় ধরে ঘর থেকে বের করে দেয়, যা সুদখোর বুবলিদের অত্যাচারের চেয়েও নিষ্ঠুরতা। এমনকি এই মামার ভাগি্ন ঘর থেকে পালিয়ে আসা যুবতী তমাকেও গভীর রাতে বের করে দেয়। আর পরদিন সকালে গ্রাম থেকে আসা এই সুন্দরী তমাকে দেখা যায় ফলের দোকানে ফল বেচছে। এক রাতেই সে আশ্রয় পেয়ে যায়, এমনকি ফলের দোকানে চাকরিও পেয়ে যায়, সঙ্গে সুন্দর ফিটিং ছাপা মার্কা সালোয়ার-কামিজ। এরপর যথারীতি কাহিনীর ভিত নড়বড়ে হতে শুরু করে। একবার তমার দিকে পাল্লা একবার বুবলির দিকে, একবার ভাড়ামো একবার শাকিবের ফাইট। সেই সঙ্গে শাকিব ছাড়া প্রতিটি চরিত্রের যাত্রা প্যাটার্নের সুতীব্র কানফাটা চিৎকারে উচ্চারিত সংলাপ। আর তাতেই অহঙ্কারের পতন অনিবার্য হয়ে গেছে। এ রকম একটা জগাখিচুড়ি মার্কা গল্পের কথা বলে পাঠকের বিরক্তি উৎপাদন করার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। শুধু একটা কথা বললেই তা সহজে অনুমেয় হবে। নায়িকা শাবনূরের বাসায় তার সব পরিচালকের একটা দাওয়াত ছিল। সেখানে পরিচালক দেবাশিষ উপস্থিত সবাইকে এই ঈদে তার সিনেমার দেখার গল্প বলছিলেন। এক হল থেকে দেবাশীষ যখন ছবি দেখে বের হচ্ছে তখন পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান মানিক হলে ঢুকছে ছবি দেখার জন্য। মানিক দেবাশীষকে জিজ্ঞেস করেছিল ছবি কেমন? দেবাশীষ বলেছিল, যাও হলে গিয়ে দেখো, আমি যে কষ্ট করেছি সেটা তুমিও কর।
ছবি দেখা এখন কষ্টসাধ্য করে ফেলা হচ্ছে দর্শকের কাছে। ছবির মোড়াল বলে কিছুই নেই। লজিক নেই। চরিত্রের যথাযথ পরিস্ফুটন নেই। লোকেশন দেখলে বোঝা যাবে না এটা কোনো এলাকার গল্প। যা মনে হচ্ছে তাই দেখিয়ে দর্শককে জিম্মি করে টাকা দিয়ে টিকিট কিনে ছবি দেখতে আসার উপহার হিসাবে প্রদান করা হচ্ছে মাথা ধরা আর একরাশ বিরক্তি।
পরিশেষে একটা কথা না বললেই নয়- ভাই শহাদাত হোসেন লিটন, আমি জানি সুপারস্টার নিয়ে কাজ করতে গেলে তাদের মর্জি রক্ষা করতে গিয়ে ছবির যথার্থ মেকিং করা যায় না। কিন্তু আপনি তো একজন বড় মেকার।(সমকাল)
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/৮:০২পিএম/১৪/৯/২০১৭ইং)