• ঢাকা
  • সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ১২:৩৩ পূর্বাহ্ন

অমার্জনীয় অপরাধ আত্মঘাতী হামলা


প্রকাশের সময় : মার্চ ৩১, ২০১৭, ৭:৩৩ PM / ৬৬
অমার্জনীয় অপরাধ আত্মঘাতী হামলা

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

আত্মহত্যা ও প্রচলিত আত্মঘাতী হামলা ইসলামের দৃষ্টিতে অমার্জনীয় অপরাধ। ইসলাম আত্মহত্যা ও আত্মঘাতী হামলার অনুমতি দেয় না। আত্মহত্যা যেকোনো পরিস্থিতিতেই হোক না কেন, ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মহত্যাকারী ও আত্মঘাতী হামলাকারীর পরিণতি হলো জাহান্নাম। আত্মঘাতী হামলা জান্নাতে যাওয়ার পথ নয়। এটি জাহান্নামের পথ প্রশস্ত করে।

ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায়, ইসলামের সুদীর্ঘ ইতিহাসে আত্মঘাতী হামলার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম আত্মঘাতী হামলা হয় রাশিয়ায়। ১৩ মার্চ ১৮৮১ সালে রাশিয়ার উইন্টার প্যালেসের সামনে দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের বহরের ওপর আত্মঘাতী হামলা হয়। গার্ভানুস্কি নামের এক ব্যক্তি হামলা করে। এটি ছিল বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম আত্মঘাতী হামলা। (সূত্র : https://aoav.org.uk/2013/a-short-history-of-suicide-bombings/)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানিরা আমেরিকান মেরিনের যুদ্ধযান ধ্বংস করার জন্য ব্যাপক হারে আত্মঘাতী হামলা করে। যুদ্ধ চলাকালে তিন হাজার ৪৬০টির মতো আত্মঘাতী হামলা পরিচালনা করে জাপানি সৈনিকরা। নিকট অতীতে তামিল টাইগাররাও অসংখ্য আত্মঘাতী হামলার মাধ্যমে প্রতিপক্ষের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। চলমান বিশ্বে বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন প্রান্তরে আত্মঘাতী হামলা হয়েছে এবং হচ্ছে। এসব হামলা কারা করছে, তা রহস্যজনক। দুঃখজনকভাবে সাম্প্রতিক আত্মঘাতী হামলার সূত্র জড়িয়ে দেওয়া হয় ইসলাম ও মুসলমানদের সঙ্গে। এটা করা হচ্ছে বিশ্বমিডিয়া মুসলমানদের অনুকূলে না থাকার কারণে। এর পক্ষে দুর্বল যুক্তি হলো, কিছু ঘটনায় মুসলমানদের জড়িত থাকার সন্দেহ করা হচ্ছে।

আশ্চর্য বিষয় হলো, যারা এই হামলা আবিষ্কার করেছে, যারা সবচেয়ে বেশি আত্মঘাতী হামলা পরিচালনা করেছে, সে জাতি হয়ে গেল সভ্য, শান্ত! আর দুই-একজনের সন্দেহজনক সংশ্লিষ্টতার কারণে ঢালাওভাবে দোষারোপ করা হচ্ছে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহকে!

যা-ই হোক, প্রচলিত আত্মঘাতী হামলায় দেখা যায়, যাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়, তার মৃত্যু নিশ্চিত না হলেও হামলাকারীর মৃত্যু নিশ্চিত। আত্মঘাতী হামলার এ পদ্ধতি শরিয়তের দৃষ্টিতে আত্মহত্যার শামিল। ইসলামী শরিয়তের বিধান মতে, প্রচলিত আত্মঘাতী হামলা তো দূরের কথা, আত্মহত্যাও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও অমার্জনীয় অপরাধ। এমনকি অন্যায়ভাবে অন্যকে হত্যা করাও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। সুতরাং আত্মঘাতী হামলার সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।

সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও খুনখারাবির ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘কেউ যদি কাউকে হত্যা করে এবং তা অন্য কাউকে হত্যা করার কারণে কিংবা পৃথিবীতে অশান্তি বিস্তারের কারণে না হয়, তবে সে যেন গোটা মানবতাকে হত্যা করল। ’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৩২)

হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘একজন মুসলমানকে হত্যা করা পুরো দুনিয়া ধ্বংস করার নামান্তর। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৩৯৫)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমার পরে তোমরা পরস্পরকে হত্যা করে কুফরির দিকে ফিরে যেয়ো না। ’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ৬৬৬৮)

এমন অসংখ্য আয়াত ও হাদিসে মানুষের প্রাণের নিরাপত্তার জন্য খুনখারাবির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে।

আত্মহত্যার বিরুদ্ধে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ো না। মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সদাচরণকারীদের ভালোবাসেন। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯৫)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা কোরো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। আর যে ব্যক্তি সীমা লঙ্ঘন কিংবা জুলুমের বশবর্তী হয়ে এরূপ করবে, তাকে খুব শিগগিরই আগুনে দগ্ধ করব। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৯-৩০)

অন্যায়মূলক যেকোনো হত্যার অবৈধতাও এ আয়াত থেকে প্রমাণিত। (মা’আরেফুল কোরআন)

আত্মঘাতী হামলাকারীদের বিরুদ্ধে রাসুল (সা.)-এর হুঁশিয়ারি

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড় থেকে নিক্ষেপ করে হত্যা করবে, সে জাহান্নামে যাবে। সব সময় সে সেখানে অবস্থান করবে। সব সময় তা থেকে পতিত হতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে, দোজখেও তার হাতে বিষ থাকবে। সেখানেও সে তা পান করতে থাকবে এবং চিরকাল সেখানে থাকবে। আর যে ব্যক্তি অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সেরূপ অস্ত্র দোজখেও তার হাতে থাকবে। সর্বক্ষণ সে নিজের পেটে ওই অস্ত্র দ্বারা আঘাত করতে থাকবে এবং সর্বক্ষণ এরূপ করতে থাকবে। ’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ৫৪৪২, মুসলিম শরিফ, হাদিস : ১০৯)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বস্তু চিবিয়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামেও তা চিবাতে থাকবে এবং সব সময় নিজেকে ধ্বংস করতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি নিজেকে গর্ত ইত্যাদিতে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামেও সেভাবেই করতে থাকবে। আর যে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামেও সেরূপ করতে থাকবে। ’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ১২৯৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৯৬১৬)

হজরত সাবেত ইবনে জাহ্হাক (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বস্তু দ্বারা আত্মহত্যা করবে, সে চিরদিন জাহান্নামের আগুনে ওই বস্তু দ্বারা শাস্তি পেতে থাকবে। ’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ৫৭৫৪, মুসলিম শরিফ, হাদিস : ১১০)

হজরত জুন্দুব (রা.) সূত্রে বর্ণিত, এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, “তোমাদের আগের লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি আঘাতের ব্যথা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তি সম্পর্কে বলেন, ‘আমার বান্দা নির্ধারিত সময়ের আগেই তার নিজের জীবনের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সুতরাং আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম’। ’’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ৩২৭৬, মুসলিম শরিফ, হাদিস : ১১৩)

হজরত জাবের ইবনে সুমরা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে এমন একজন লোকের লাশ আনা হলো, যে তীরের মাধ্যমে আত্মহত্যা করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তার জানাজা পড়েননি। ’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ৯৭৮)

উপরোক্ত আয়াত ও হাদিস থেকে  স্পষ্টভাবে জানা যায়, আত্মহত্যা ও আত্মঘাতী হামলা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এ ধরনের জঘন্য অপরাধে যারা জড়িত, তারা এপার-ওপারে আল্লাহর কঠিন আজাবে পতিত হবে।

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম /০৭.২৪ পিএম/৩১//২০১৭ইং)