• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৮:৩২ পূর্বাহ্ন

অনাথ শিশুটি…(গল্প)


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ১৪, ২০১৯, ৯:০৬ PM / ৩৪
অনাথ শিশুটি…(গল্প)

সোহানুর রহমান সোহান : মাগো…….. জানো মা আমি কে?
আমি তোমার গর্ভের সেই হতভাগা সন্তান। যাকে তুমি আজ থেকে প্রায় সতেরো বছর আগে একটা নর্দমায় বাক্স বন্দি করে ফেলে এসেছিলে।যাকে তুমি জন্ম দিয়েছো ঠিকই কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে মৃত্যুর হাতে তুলে দিয়েছিলে।
মাগো আমার জন্মদাতা পিতা না হয় অমানুষ ছিল।ও না হয় একটা নরপশু ছিল।কিন্তু তুমি তো মা।তুমি কিভাবে এ কাজ করলে।কেন আমাকে অনাথ করলে।কেন আমাকে নর্দমায় ফেলে আসলে?

জানো মা,সেদিন তুমি আসার পরে আমার সাথে কি হয়েছিল?
আমি যখন চোখ খুলে দেখলাম চারদিক অন্ধকার। তোমাকে কাছে না পেয়ে আমি হতাশ হতে লাগলাম। আমি তো তখনো তোমাকে ডাকতে শিখিনী। তাই আমি প্রচন্ড চিৎকার করে কান্না করতে লাগলাম। যেন, আমার চিৎকার শুনে তুমি দৌরে ছুটে আসো।

আমার চিৎকার শুনে তুমি আসলে না ঠিকই কিন্তু রাস্তার কিছু কুকুর ঠিকই এসেছিল। আমি তো মনে করেছিলাম সেই কুকুরগুলো আমাকে আমার মায়ের কাছে নিয়ে যাবে।কিন্তু না,তারা আমাকে খেতে এসেছিল।
জানো মা,আমাকে দেখে না ওই কুকুরগুলোর মুখে লালা এসে গিয়েছিল।তারা আমাকে খাবার জন্য বাক্স টাকে উল্টাতে পাল্টাতে লাগলো। তারা আমাকে মজা করে খাবার জন্য খেক খেক করতে লাগলো।

কিন্তু ভাগ্যিস, আমি আল্লাহর রহমতে বেচে গেলাম।
একজন বৃদ্ধ বুড়ো লোক এই কান্ডগুলো দেখে আমার কাছে দৌরে ছুটে আসলো। সে চিৎকার করে করে কুকুর গুলোকে তাড়াতে লাগলো। তার কিছুক্ষণ পরেই সেখানে শত শত লোকের ভিড় জমে গেল।আমি তখনো জীবিত ছিলাম।মানুষ গুলো সবাই আমাকে নিয়ে আফসোস করতে লাগলো। অনেকে আমার জন্য কেদেও দিয়েছিলে।

তারা আমাকে নর্দমা থেকে একটু দুরে একটা এতিমখানায় দিয়ে আসলো।
সেখানকার একজন ভদ্র মহিলা আমার লালন-পালনের দায়িত্ব নিলো।

জানো মা,সেই ভদ্র মহিলাটা না আমার জন্য অনেক করেছে।
আমি যখন ক্ষুদায় কান্না করতাম,সে আমাকে তার বুকের দুধ খাওয়াতো।সময়মত গোসল করাতো,সময়মত খাবার দিত,কান্না করলে বুকে জরিয়ে নিতো।সে অনেক করেছে আমার জন্য।অনেক করেছে…..

ওই ভদ্র মহিলাটা আমার মত আরও অনেক অনাথ শিশুকে লালন-পালন করেছে।সবাইকে তার নিজের সন্তানের মত দেখেছে।সবাইকে একটু একটু করে তার নিজের দুধ খাইয়েছে।সবাইকে পরিমিত খাবার দিয়েছে।আমরা সবাই তাকে মা বলে ডেকেছি।

কিন্তু আল্লাহ আমার ভাগ্যে সেই মা টাকেও বাচিয়ে রাখলো না।আমার যখন দশ বছর তখন সে পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়।আমার মত অনেককে সে এতিম করে চলে যায়।সবাই তার ভালোবাসা থেকে ছিন্ন হয়ে যাই।

তারপর অনেক কষ্ট করে বড় হতে লাগলাম আমি।এতিমখানার খাবার, এতিমখানার পোশাক, সব কিছুই একটা নিয়মতান্ত্রিক ভাবে চলতে লাগলো।এখানে থেকেই আমি মানুষের মত মানুষ হতে লাগলাম ।এতিমখানা-মাদ্রাসায় ছিলো আমার ছাত্রাবাস। সেখানকার শিক্ষক, সহপাঠী, বই-পুস্তক সব কিছুই আমার চিরচেনা।

জানো মা, আমি আজ অনেক বড় হয়ে গিয়েছি।
আল্লাহর সেই ত্রিশ পাড়া কুরআন কে মুখুস্থ করে ফেলেছি।গত বছর কুরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছি।অনেক বড় পুরষ্কার পেয়েছি আমি।মাদ্রাসার সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে।সবাই আমাকে খুব আদর করে।

মাগো,তুমি তো আমায় ভুলে গিয়েছো।কিন্তু বিশ্বাস কর…..
আমি তোমাকে ভুলি নি।প্রতিদিন আমি নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে তোমাকে ভিক্ষা চাই।আল্লাহ যেন তোমার কাছে আমাকে ফিরিয়ে দেয়।
জানো মা প্রতিদিন আমি সময় পেলে সেই নর্দমার পাশে গিয়ে দাড়িয়ে থাকি।আর ভাবি, আদ ও কি আমার মা আমাকে খুজতে আসবে।আদ ও কি, সে আমার ব্যাপারে মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।

মাগো,পারলে একটু দয়া করে আমার খোজ নিতে এসো।একটু কষ্ট করে,সেদিনের বাক্স বন্দি করা ছেলেটার ব্যাপারে মানুষকে জিজ্ঞাসা করো।
আমার বাক্স বন্দির ব্যাপারটা অনেকেই জানে।হয়তো বা কেউ একদিন তোমাকে আমার কথা বলে দিবে।
প্লিজ মা,একটু এসো আমার খবর নিতে।

যেখানেই আছো, ভালো থেকো মা….।
আজ ও তোমার অপেক্ষায় আছি………..।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএইচএ/এসডিপি/৯:০৫পিএম/১৪/১/২০১৯ইং)