• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন

কন্যা, শোকাহত আমি


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০১৯, ১:৪৭ PM / ৪৪
কন্যা, শোকাহত আমি

হাসানুজ্জামান কল্লোল
______________________________
কন্যা, শোকাহত আমি- সত্যি দুঃখিত…
পূর্নিমার রাতে যখন শোককে আলোকিত করে দৃঢ় পায়ে হাটছি
যখন শহীদমিনারের জন্য আমাদের ভালবাসা বর্ণমালার গর্বিত শরীর ছুয়ে
চাঁদের আলোর মত গলে পড়ছে,
তখন খুব কাছে চুড়িহাট্টার গলিতে গলে পড়ছে আগুনে পোড়া সন্তানসম্ভবা নারী,পৃথিবী নাদেখা শিশুর কোমল হৃদপিন্ড আর
তাদের জন্যই পাশে থাকা এক পুরুষের
ভালোবাসার অালিংগন!
রোহান আর একবছর পরেই হতো
টগবগে একুশের যুবক-
আলতাফ মাহমুদের মত কোন গৌরবের গান তার সবুজ কন্ঠ গেয়ে ওঠার জন্য
হতেই পারতো চন্চল!!
দেখো – এক মা গ্রীক ভাস্কর্যের মত পুড়ে তামাটে হয়ে কী অদ্ভুত মায়ায় জড়িয়ে আছে ঝলসে যাওয়া রাজপুত্রের মত
সন্তানের পবিত্র দেহ!
বাবার দূর্বল হাত পুত্রের আঙুল ধরে থাকার বদলে ধরে আছে পোড়া-দেহবাহী সন্তানের পাথরের মত ভারী নির্মম খাটিয়া!
আমাদের দ্রোহ থেকে পাওয়া শোকের শক্তিকে
পুড়িয়ে দিয়ে মাতাল আগুন ছড়িয়ে পড়লো অসম্ভব দ্রুত – বেড়ে ওঠা নস্ট মানুষখেকো গাছের মত! স্মৃতির মিনার থেকে ফেরা কালোসাদা শাড়ীগুলো যেন ক্লোরোফিলহীন পাতার মত নির্জীব আজ !
বিশ্বব্যাপে ছড়িয়ে পড়া মাতৃভাষার
স্বরলিপিতে আমরা যখন করতে চাইলাম আনন্দের কোরাস,
আমার কন্যার জন্য একযুগ আগে লেখা একুশের কবিতা বদলে যখন নুতন,
তরতাজা সম্ভাবনার কবিতা লিখতে
মগজে ভরেছি কালি,
তখন কিসের অভিসম্পাতে পুড়ে গেল
একটি গলি- চু ড়ি হা ট্টা
এই গলি ছিল এতই সংকীর্ণ , এখানের জীবনগুলো হয়ত এতই সংকুচিত, অজ্ঞ, আর
অভিশপ্ত ছিল যে শহীদ মিনারের নির্মল আলো,
বায়ু, জল; আইল্যান্ডে ফুটে থাকা শিমুল, পলাশের লাল-লাল ফুটন্ত পাপড়িগুলো-
নগররক্ষীদের দায়িত্বশীল ঝলমলে চোখ
এমনকি ঈশ্বরের প্রতিভু
এখানে আসতে খুব বেশী ইচ্ছুক ছিলেন না !

আজ ক্রন্দনের স্রোতধারায় ভিজে গেছে কবির সাদা কাগজ- শোকে
প্লাবিত ঢাকার অসহায় মানচিত্র !
কাব্য, তোমার জন্য চেয়েছিলাম লিখবো, কবিতা
কিন্তু একুশের রাত্রির প্রাণহারি শিখা
আমায় কোন গৌরবগাথা লিখতে দিলোনা!

কন্যা, শোকাহত আমি -সত্যি দূঃখিত!