• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০১:০১ পূর্বাহ্ন

৪৫ বছরেও বাড়েনি সংসদের আসন


প্রকাশের সময় : মে ৫, ২০১৭, ৮:৪৭ AM / ৫১
৪৫ বছরেও বাড়েনি সংসদের আসন

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

স্বাধীনতার পর গত ৪৫ বছরে অনেক কিছু বদলেছে। ১৯ থেকে জেলা হয়েছে ৬৪টি। চারটি বিভাগ হয়েছে আটটি। এ সংখ্যা আরো বাড়তে যাচ্ছে। সিটি করপোরেশন, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন, পৌরসভাও অনেক বেড়েছে। জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের সীমানা অনুসারে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সাধারণ যে ৩০০ আসন নির্ধারিত হয়েছিল তা আজও অপরিবর্তিত। সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ১৯৭২ সালে ১৫টি করা হয়। এ সংখ্যা এখন ৫০। তবে সংবিধান সংশোধন না করলে চলতি সংসদের মেয়াদ শেষে সংরক্ষিত আসন বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

ছোট কিছু রাজনৈতিক দল মাঝেমধ্যে সংসদের আসন বাড়ানোর দাবি জানালেও বড় দলগুলোর এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই। এই বাস্তবতার মধ্যে আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। তার আগে আগস্টের মধ্যে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময়, সেপ্টেম্বরের মধ্যে খসড়া প্রণয়ন, অক্টোবরের মধ্যে ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার প্রাথমিক তালিকা অনুমোদন এবং এ সম্পর্কে দাবি/আপত্তি আহ্বান, নভেম্বরের মধ্যে এসংক্রান্ত শুনানি গ্রহণ এবং ডিসেম্বরে সীমানা চূড়ান্ত করবে। তার আগে সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দল, সুধীসমাজ ও গণমাধ্যমের মতামত গ্রহণ করতে পারে ইসি।

এ বিষয়ে ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুলাহ্  বলেন, ‘আগামী ১৪ মে ইসির বৈঠকে সীমানা পুনর্নির্ধারণসহ অন্যান্য কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। তার পরই বলা যাবে কবে আমরা কোন কাজ শুরু করব এবং কবে নাগাদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসতে পারব। ’

ইসি সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এবার খুব বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। শুধু নতুন উপজেলা ও ইউনিয়নগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে সীমানা রদবদল হতে পারে।

এর আগে ২০১৩ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন সর্বশেষ জাতীয় সংসদের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হয়। তখন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের পক্ষে বলা হয়,  জাতীয় সংসদে স্বাধীনতার সময় যে আসন ছিল এখনো তাই আছে। শুধু নারীদের সংরক্ষিত আসন বাড়ানো হয়েছে। ৪০ বছরে ভোটার সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হলেও আসন বাড়েনি। দলটি সংসদের আসন ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫০ করার প্রস্তাব দেয়। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) প্রস্তাব রাখে ৫০০ আসনের। দলটির পক্ষে বলা হয়, বিদ্যমান ৩০০ আসন রেখে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ২০০ প্রতিনিধি নিয়ে সংসদের উচ্চ কক্ষ গঠন করতে হবে। তার আগে ড. এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে জাতীয় পার্টির পক্ষে সংসদের আসন ৩৫০ করার প্রস্তাব রাখা হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সংসদের আসন বাড়ানোর এখতিয়ার রাখে না। এর জন্য সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন।

আগের সীমানা বিন্যাস : স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের সীমানা অনুসারে সম্পন্ন হয়। নির্বাচন কমিশন ১৯৭২ সালের ২০ ডিসেম্বর এসংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করে। এরপর দেশের প্রথম আদমশুমারির প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে নির্বাচন  কমিশন ১৯৭৬ সালের ১৯ মার্চ ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণ সম্পর্কিত দাবি, আপত্তি, পরামর্শ চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এর আলোকে কয়েকটি জেলার আসনসংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধি করে ১৯৭৮ সালের ২৭ নভেম্বর গেজেট প্রকাশ করা হয়। এই সীমানা অনুসারে ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। ১৯৮১ সালে দ্বিতীয় আদমশুমারির প্রতিবেদন প্রকাশের পর তৃতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১৯৮৪ সালে বৃহত্তর ছয় জেলায় ছয়টি আসন কমিয়ে বৃহত্তর তিন জেলায় পাঁচটি ও পার্বত্য এলাকায় একটি আসন বাড়ানো হয়। সে সময় বড় জেলাগুলোকে ভেঙে ৬৪ জেলা করা হয়। ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের আগে দুটি আন্তঃজেলা নির্বাচনী এলাকা সৃষ্টি করা হয়। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০১ সালের আদমশুমারির প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদন অনুসারে জনসংখ্যার ভিত্তিতে ড. এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসি ব্যাপকভাবে সীমানা পুনর্বিন্যাস করে। নির্বাচন কমিশন তখন এই নীতি গ্রহণ করে যে, কোনো জেলার আসনসংখ্যা দুটির কম হবে না। প্রতি তিন লাখের কাছাকাছি জনসংখ্যার জন্য একটি করে আসন নির্ধারিত হয়। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ৩৩ জেলার ১২৫টি নির্বাচনী এলাকার পরিবর্তন ঘটে। ওই সময় পার্বত্য তিনটি জেলা বাদে দেশের ৬১ জেলার সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়। ঢাকায় ১৩টি থেকে আসন হয় ২০টি।

‘নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ অধ্যাদেশ- ১৯৯৬-এর’ ৮ ধারায় বলা হয়েছে, ‘আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাসমূহের সীমানা (ক) প্রত্যেক আদমশুমারীর সমাপ্তির পর, অনুরূপ আদমশুমারীর পরে অনুষ্ঠিতব্য সংসদের সাধারণ নির্বাচনের উদ্দেশ্যে; এবং (খ) কমিশন লিখিতভাবে উল্লেখপূর্বক ভিন্নরূপ নির্দেশ না দিলে, সংসদের প্রত্যেক সাধারণ নির্বাচনের পূর্বে নতুনভাবে চিহ্নিত হবে। ’

এ ছাড়া ৬(২) ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচনী এলাকাগুলোর সীমানা, প্রশাসনিক সুবিধার বিষয় বিবেচনাক্রমে এমনভাবে চিহ্নিত করতে হবে, যাতে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা নিবিড় হয় এবং এটা করার সময় সর্বশেষ আদমশুমারির প্রতিবেদনে প্রদত্ত জনসংখ্যা বণ্টনের বিষয়টি যতদূর সম্ভব যথাযথভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে।

কিন্তু কাজী রকিবের কমিশন এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে ১৯টি জেলার ৫৩ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে। ঢাকায় দুটি নির্বাচনী এলাকার আংশিক পরিবর্তন ঘটানো হয়। ২০০৮ সালে নির্ধারিত সীমানা অপরিবর্তিত থাকে বাকি ৪৫টি জেলার ২৪৭টি আসনের ক্ষেত্রে।

রকিব কমিশন সর্বশেষ আদমশুমারি অনুসারে সীমানা নির্ধারণ না করায় সে সময় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত ২৯টি প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডাব্লিউজি) অভিযোগ করে, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইসি যথাযথভাবে আইন অনুসরণ করেনি। এর ফলে আসনগুলোতে ব্যাপকভাবে ভোটার সংখ্যার তারতম্য ঘটে গেছে। ইডাব্লিউজির সদস্যরা তখন এমনও মন্তব্য করেন যে যেহেতু নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করার সুযোগ নেই, সে ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে উচ্চ আদালতে রিট করা দরকার। আরো বলা হয়, উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও সংসদীয় আসনগুলোর সীমানা পুনর্নির্ধারণে ভবিষ্যতে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা জরুরি।

সংশ্লিষ্ট অনেকেরই ধারণা, জনসংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে গেলে ঢাকার আসন আরো বাড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে গ্রাম এলাকার আসন কমবে। ড. এ টি এম শামসুল হুদা কমিশনের সদস্যরা তাঁদের বিদায়বেলায় এ কারণেই বিদ্যমান আইন সংশোধন করে ঢাকা ও অন্যান্য মহানগর এলাকার আসন অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম ০৮.৪৫এএম/০৫//২০১৭ইং)