সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি : ‘নারী-পুরুষের সমতায় উন্নয়নের যাত্রা, বদলে যাবে বিশ্ব, কর্মে নতুন মাত্রা’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পালিত হচ্ছে এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১৭।
দিবসটি উপলক্ষ্যে ঢাকারনিউজ২৪.কম এর বিশেষ আয়োজন আমাদের আজকের সাক্ষাৎকার বিভাগের অতিথি নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনের এমপি ও জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকার স্ত্রী ডালিয়া লিয়াকত। যিনি শুধু জনপ্রতিনিধি স্বামীর পরিচয়েই নয়, একজন সফল নারী সংগঠক হিসেবে নারীদের কল্যাণে কাজ করে ইতিমধ্যেই জয়ীতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম হলেও বুঝ হবার বয়স থেকেই আশ-পাশের অসহায় মানুষগুলোর দুঃখে-কষ্টে যে আবেগাপ্লুত হতেন, নিজের মুখের খাবার দরিদ্রের মুখে যিনি তুলে দিতেন। পারিবারিকভাবেই যার ইচ্ছে ছিল চিকিৎসক হবার। কিন্তু অসহায় মানুষের প্রতি তার আত্মীক অনুভুতি শেষ পর্যন্ত তাকে পরিচিত করে তুলেছে সফল নারী সংগঠক হিসেবে। ইতিমধ্যেই যার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে জয়িতা সম্মাণনা তুলে দেয়া হয়েছে।
জয়িতা সম্মাণনা সম্পর্কে বলুন?
ডালিয়া লিয়াকত : ডিসেম্বর-২০১৬তে নারায়ণগঞ্জের যে ৫জন সফল নারীকে জয়িতা হিসেবে সম্মাননা দিয়েছে সোনারগাঁ উপজেলা প্রশাসন, তাদের মধ্যে আমিও রয়েছি। সমাজ উন্নয়নে অবদানের জন্য জাতীয় মহিলা সংস্থার সোনারগাঁ উপজেলা সভাপতি, সোনারগাঁ নারী ফোরামের উপদেষ্টা মন্ডলীর সভাপতি এবং মহিলা সমবায় সমিতির সম্মানীত উপদেস্টা হিসেবে আমাকে এ সম্মাণনা প্রদান করা হয়।
শিক্ষাজীবন :
নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মরগ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এসএসসি, নারায়ণগঞ্জ সরকারী মহিলা কলেজ থেকে যথাক্রমে এইচএসসি(৮৬’), ডিগ্রী(৮৮’) সম্পন্ন করে ঢাকার ইডেন কলেজে ভর্তি হলেও আর এগুয়নি আমার পড়াশোনা। সফল রাজনীতিক ও জন প্রতিনিধির সহধর্মীনি হলেও তিনি ছিলেন ভিন্ন জগতের এক শান্তশিষ্ট আবেগতাড়িত মানুষ। যে সমসাময়িক অনেক সহপাঠীদের মতো নয়, ছিলেন শুধুই কবিতাপ্রেমী। যে কবিতা আবৃত্তি শেখার জন্য ছুটে যেতেন কলেজের বাংলার প্রভাষক আয়েশা জুলিয়াস আপার বাড়ি। এখনো যার কণ্ঠে নিয়মিত উচ্চারিত হয় শামসুর রহমান, সুকান্ত কিংবা সামসুল হকের কবিতার লাইন।
মন খারাপ হলে কার লেখা কবিতা আবৃত্তি করেন?
ডালিয়া লিয়াকত : আমার যখনি মন খারাপ হয়, আমি তখনি এই পৃথিবীতে আমার সবচেয়ে প্রিয় দাদীমণি বেগম নাগিনা জোহা (সাংসদ শামিম ওসমান/নাসিম ওসমান/সেলিম ওসমানের রত্নগর্ভা মা)’র লেখা বই- ‘কবিতা গুচ্ছ’ খুলে আবৃত্তি করি। কখনো একাই, আবার কখনো জীবন সঙ্গীকে শুনাই সেইসব আবৃত্তি। বইটি দাদীমণি নিজ হাতে আমাকে দিয়ে গিয়েছিলেন।
সাংগঠনিক কাজ?
ডালিয়া লিয়াকত : আমার ৩টি সংগঠন থেকে উন্নয়নমূলক কাজগুলোর মধ্যে এখানকার অসহায় দুস্থ নারীদেরকে বিনামূল্যে পুঁতি ও পাট দিয়ে ব্যাগ তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ফলে এখন সংগঠনের কয়েকশ’ নারী এখন এই ব্যাগ তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করছে। এছাড়া সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিনও দেয়া হচ্ছে নিয়মিত। পাশাপাশি শিক্ষিত নারীদের জন্য কম্পিউটার প্রশিক্ষণেরও উদ্যোগ নেয়া হবে শীঘ্রই। এছাড়া দুস্থ নারীদের জন্য বিনাসুদে (বিনা লাভে) ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা রয়েছে। যার আওতায় রয়েছে বর্তমানে প্রায় ২০০ নারী। এছাড়া ধর্ষণ, বাল্যবিয়ে সহ যে কোনো নারী নির্যাতন এবং নারীর অধিকার রক্ষায় আমি নিজে ব্যক্তি উদ্যোগে সংগঠনের সকল সদস্য ও প্রশাসনকে সাথে নিয়ে নির্যানকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকার পালন করি।
নারী অধিকার ও নির্যাতন সম্পর্কে বলুন?
ডালিয়া লিয়াকত : দেশের প্রতিটি স্তরে যেমন নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ঠিক তেমনি পাল্লা দিয়ে নারী নির্যাতনও বেড়েছে। আর এ নির্যাতন বন্ধ করতে হলে প্রয়োজন সরকারী উদ্যোগ। পাশাপাশি পারিবারিক সচেতনতা।
বাল্যবিয়ে আইন সমর্থণ করেন কি না?
ডালিয়া লিয়াকত : ‘‘বাল্যবিয়ে বিষয়ক প্রস্তাবিত আইনে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স আগের মতো ১৮ বছর রাখা হলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয়। এতে ক্ষেত্র বিশেষে ১৮ বছরের আগেও বিয়ে দেওয়া যেতে পারে।’’ আমি এ বিষয়টির সমর্থণ করিনা।
একজন সংগঠক যখন মা?
ডালিয়া লিয়াকত : আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়- আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর একটি ফুটফুটে মেয়ে আদ্রিতা’র মা। ঘরে-বাইরের সমস্ত কাজের পাশাপাশি আদ্রিতা’র জন্য সব সময়ই আমি চেষ্টা করি বিশেষ সময় দিতে। এই যেমন আপনারা আসার আগে অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে চৌড়ঙ্গী পার্কে কিছুটা সময় কাটিয়ে এসেছি ওর মানুসিক চঞ্চলতা ফিরিয়ে আনার জন্য। নিয়মিত জীবন-যাপনের বাইরেও এভাবেই আমরা প্রায়ই একসাথে সময় কাটাই।
সম্প্রতি জঙ্গী নারী সম্পর্কে বলুন?
ডালিয়া লিয়াকত : সম্প্রতি দেশে যেহেতু পুরুষদের মতো নারী জঙ্গী সদস্যও বেরিয়েছে, তাই আমরা শুরু থেকেই আমাদের বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এ বিষয়ে গণসচেতনতামূলক আলোচনা করে সাবধান করার চেষ্টা করি নারীদেরকে।
আপনার সকল সাফল্যে কার অবদান সবচেয়ে বেশি?
ডালিয়া লিয়াকত : আমার স্বামী লিয়াকত হোসেন খোকা এমপির কারণেই আমি আজ এতদুর। শুধু আমার জীবন সঙ্গী বলেই নয়, মানুষের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ তার মতো মানুষ দেশে খুব কম আছেন। যিনি সোনারগাঁয়ের চিত্রই বদলে দিয়েছেন। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করলেও এক সময় মানুষ যাকে চিনত না, আজ তার ভাল কাজের মধ্যদিয়েই মানুষ তাকে চিনে। ঠিক তেমনি সংসার জীবনেও তিনি আমার প্রেরণা আমার উৎসাহ।
সমাজের সর্বস্তরে লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠার আহবানের মধ্যদিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও ৮ই মার্চ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। মিসেস ডালিয়া লিয়াকতের মতো দেশের প্রতিটি স্তরে এমনি নিবেদিত প্রাণ নারী উদ্যোক্তাদের স্পর্শে নারীরা হয়ে উঠুক স্বাবলম্বী, আত্মনির্ভরশীল। আজকের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ঢাকারনিউজ২৪.কম পরিবার সেলুট জানায় জয়ীতাদের প্রতি….
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/৪:১০এএম/৮/৩/২০১৭ইং)
আপনার মতামত লিখুন :