• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১১ অপরাহ্ন

রেখার চমকে দেওয়া পাঁচ তথ্য


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ৬, ২০১৭, ২:২৪ PM / ৩৭
রেখার চমকে দেওয়া পাঁচ তথ্য

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

অনেক অপেক্ষার পর যখন বলিউডের রহস্যঘেরা অভিনেত্রী রেখার জীবনীগ্রন্থটি হাতে এল, বেশ আগ্রহ নিয়েই পড়তে বসলাম রেখা: দ্য আনটোল্ড স্টোরি বইটি। ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে বাজারে আসে। সাংবাদিক ও লেখক ইয়াসির উসমান লিখেছেন এ বই। খুব কৌতূহল ছিল এই অভিনেত্রীর বিতর্কিত জীবনের গভীরের গল্পগুলো জানার। কিন্তু শুরুতেই বই খুলে লেখকের প্রথম কয়েকটি কথা মন ভেঙে দেয়। এই বইয়ে রেখার যে জীবনের গল্প বলা হয়েছে, তা রেখার মুখ থেকে শুনে লেখক লেখেননি। বইটি লেখা হয়েছে রেখার দেওয়া বিভিন্ন সাক্ষাৎকার, রেখার সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে কাজ করা নির্মাতা, সহশিল্পী ও কুশলীদের সঙ্গে কথা বলে। লেখক ইয়াসির উসমান কথা বলেছেন রেখার পরিবার-পরিজনদের সঙ্গেও। নির্ভর করেছেন রেখা ও তাঁর পরিবারকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই ও পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ওপর।
বাবা জেমিনি গনেশানের সঙ্গে রেখাবাবা জেমিনি গনেশানের সঙ্গে রেখাভাঙা মন নিয়েই রেখার বইটি পড়তে বসা। বইয়ের প্রথম পাতা থেকেই পাঠকদের জন্য অপেক্ষা করে চমক। ‘গল্পের’ শুরুটা হয় রেখার প্রয়াত স্বামী মুকেশ আগারওয়ালকে দিয়ে। এরপর বইয়ের যত গভীরে যাওয়া হয়, ততই যেন রেখার জীবনের ক্ষতগুলো হয়ে ওঠে গাঢ়। রেখার জীবন নিয়ে লেখা সেই বইয়ের প্রতিটি অধ্যায় এ অভিনেত্রীর এক নতুন পরিচয় তুলে ধরে পাঠকদের সামনে। কখনো রেখাকে পাওয়া যায় নির্দয় এক স্ত্রী হিসেবে, কখনো এক প্রতারিত প্রেমিকা। বইয়ের কোনো অধ্যায়ে রেখা জন্ম-পরিচয়হীন এক মেয়ে। কোথাও তাঁকে পাওয়া যায় নির্যাতন ও প্রতারণার শিকার হয়ে ভেঙে পড়া এক কিশোরীরূপে কোথাও তিনি সব হারিয়েও এক শক্তিমান ব্যক্তিত্ব। মোট কথা, রেখাকে এ বইয়ে সেভাবেই পাবেন, যে পাঠক যেভাবে কল্পনা করেন এ অভিনেত্রীকে। আর যাঁরা কোনো দিনও রেখাকে নিয়ে ভাবেননি, তাঁরাও পাতায় পাতায় পাবেন নানান চমক। কিছু চমকের ধারণা এ লেখাতেই নাহয় দিয়ে দিই।
১. শুরুতেই রেখার জন্ম-পরিচয়ের অধ্যায়টির কথা বলতে হয়। রেখা অভিনয়জগতে নাম লেখানোর সময় থেকেই বদ্ধপরিকর ছিলেন, যে পিতৃপরিচয় তাঁকে বরাবরই অপমানিত করেছে, সে পরিচয়কে তিনি তাঁর নামের সঙ্গে বহন করবেন। তাই ভানুরেখা গনেশান বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন রেখা নামে। রেখার মা-বাবার বিয়ে হয়নি। তাই সমাজের প্রথাগত হিসাব-নিকাশে তাঁর মা-বাবার সম্পর্কের মতো রেখার জন্মও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। এ নিয়ে এ বইয়ে রয়েছে বিস্তর আলোচনা।
বিশ্বজিৎ ও রেখা

বিশ্বজিৎ ও রেখা২. রেখার বাবা জেমিনি গনেশান দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন। রেখা যে তাঁর সন্তান, এটা সবাই জানতেন। রেখার সঙ্গে তাঁর বাবার দেখাও হতো মাঝেমধ্যে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে জনসমক্ষে কোনো দিনও জেমিনি রেখাকে মেয়ের স্বীকৃতি দেননি। রেখাও বাবা হিসেবে কখনো বলেননি জেমিনির কথা। কিন্তু মাত্র একবারই বাবা-মেয়েকে দেখা গিয়েছিল এক মঞ্চে। সেটা ১৯৯৪ সালের কথা। সেবার জেমিনিকে আজীবন সম্মাননা দেয় ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড। মুম্বাই থেকে মাদ্রাজে উড়ে গিয়ে সেই পুরস্কার তুলে দেন রেখা। সেবারই প্রথম হাজারো দর্শকের সামনে প্রথমবার রেখাকে উদ্দেশ করে জেমিনি বলেন, ‘ডিয়ার চাইল্ড ফ্রম বোম্বে’। আবেগপ্রবণ রেখাও বাবা হিসেবে সম্বোধন করেন জেমিনিকে। সেই গল্পটাও এ বইয়ে আছে।
রেখা

রেখা৩. ১৫ বছর বয়সে সিনেমাজগতে আসা রেখা শুরুর দিকে শুটিং সেটে নানাভাবে নির্যাতন ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। পরিচালক কুলজিৎ পালের পরিকল্পনায় ছবিকে আলোচিত-সমালোচিত করতে অভিনেতা বিশ্বজিৎ (টালিউডের তারকা প্রসেনজিতের বাবা) আনজানা সফর নামের একটি ছবিতে শুটিং সেটে জোরপূর্বক রেখার সঙ্গে একটি চুমুর দৃশ্য ধারণ করেছিলেন। সেই দৃশ্যের ব্যাপারে নাকি শুরুতে ধারণা ছিল না রেখার। কিন্তু ক্যামেরা চালু হতেই বিশ্বজিৎ জাপটে ধরেন রেখাকে এবং চুমু দেন। এটা নিয়ে সে সময় অনেক বিতর্ক হয়। বইয়ে সেই বিতর্ক নিয়ে রয়েছে একটি অধ্যায়।
অমিতাভ বচ্চন ও রেখা

অমিতাভ বচ্চন ও রেখা৪. রেখার প্রেম ও প্রেমিকেরা এ বইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অল্প সময়ের প্রেম এবং হুট করেই ব্যবসায়ী মুকেশ আগারওয়ালকে বিয়ে, এরপর সাত মাস না পেরোতে সম্পর্কে ভাঙন ও মুকেশের আত্মহত্যা রেখাকে তুলে ধরে এক নির্দয় নারী হিসেবে। অন্যদিকে অভিনেতা বিনোদ মেহরার সঙ্গে প্রেম, গোপন বিয়ে ও এরপর পরিবারের কারণে বিনোদের পিছিয়ে যাওয়ার গল্পে রেখাকে পাওয়া যায় প্রতারিত প্রেমিকা হিসেবে।

৫. সবশেষ অমিতাভ বচ্চন অধ্যায়। এই বইয়ে রেখা ও অমিতাভের প্রেমের কাহিনি পড়লে মনে হবে, একটিমাত্র বই এই প্রেমকে ধারণ করতে পারবে না। নানা রং নিয়ে রেখা-অমিতাভের সম্পর্ক উঠে এসেছে বইয়ের প্রতিটি পাতায়। কখনো রেখাকে মনে হবে বেখেয়ালি, উচ্ছৃঙ্খল, অনিয়ন্ত্রিত এক প্রেমিকা। কখনো আবার অমিতাভকে মনে হবে প্রতারক ছিলেন তিনি। আবার গল্পের ‘খলচরিত্র’ হিসেবে জয়া ভাদুরিও চলে আসবেন এই গল্পে। অমিতাভের ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়ে রেখার শুধরে যাওয়া জীবন, রেখার শুটিং সেটে এসে অমিতাভের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা, হাসপাতালে ভর্তি আহত অমিতাভকে দেখতে যেতে না পারা—এমন নানা মোড় পাওয়া গেছে এই বইয়ে। তবে বলিউডের সিনেমাগুলোর গল্পের মতোই আগে থেকে সব আঁচ করে ফেলা যাবে না। রেখার জীবনের অনেক অধ্যায়ই এখনো রয়ে গেছে রহস্যের চাদরেই ঢাকা। তাই এই বইটি সেই রহস্যকে করেছে আরও একটু গাঢ়।

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম /­০২.২৩ পিএম/০৬//২০১৭ইং)