• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ১০:২৫ অপরাহ্ন

রায় নিজেরা লিখে বাস্তবায়ন করাবেন কি না সংশয় : রিজভী


প্রকাশের সময় : অগাস্ট ২৫, ২০১৮, ১:৪২ PM / ৭৪
রায় নিজেরা লিখে বাস্তবায়ন করাবেন কি না সংশয় : রিজভী

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ঢাকা : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী নেতাদের বক্তব্য শুনে মনে হয় একুশে আগস্টের রায়কে প্রভাবিত করার জন্য তারা উঠে পড়ে লেগেছেন। একুশে আগস্ট বোমা হামলা মামলার রায় নিজেরা লিখে তা আদালতকে দিয়ে বাস্তবায়ন করাবেন কি না মানুষের মনে সে সংশয়ও এখন দেখা দিয়েছে। তাদের বক্তব্য শুনে মনে হয় একটি ফরমায়াসি রায় হতে যাচ্ছে।

শনিবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে শুক্রবার ওবায়দুল কাদের বলেছেন, একুশে আগস্ট মামলার রায় হলে সঙ্কটে পড়বে বিএনপি। আগামী সেপ্টেম্বরে সে রায় হবে। তার বক্তব্যেই পরিষ্কার যে, তারা নীল নকশা অনুযায়ী একুশে আগস্টের বোমা হামলা মামলার রায় নিয়ে আগাম কাজ করছেন এবং সেজন্য একের পর এক ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কূটচাল চালছেন তারা।

এর জবাবে লিখিত বক্তব্যে রিজভী বলেন, আমরা প্রথম থেকেই দেখছি আওয়ামী লীগ একুশে আগস্ট বোমা হামলা মামলা নিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিত রাজনীতি করছে। তাদের আন্দোলনের ফসল মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের সময়ও এ মামলার চার্জশিটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাদের দলীয় লোক কাহার আকন্দকে তদন্তে কর্মকর্তা নিয়োগ দেন। তার আগেই কাহার আকন্দ পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে অবসরে গিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন, এমনকি ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তাকে পুলিশ বিভাগে ফের নিয়োগ দিয়ে এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা করা হয় ২০০৯ সালে।

তিনি বলেন, দলীয় চেতনার তদন্ত কর্মকর্তা কাহার আকন্দকে নিয়োগ দেওয়ার উদ্দেশ্যই ছিল এ মামলায় তারেক রহমানকে জড়ানো। পরে ২০১১ সালে তারেক রহমানের নাম সম্পূরক চার্জশিটে অর্ন্তভূক্ত করে শেখ হাসিনার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হয়। পূর্ব পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে চার্জশিটে তারেক রহমানের নাম অর্ন্তভূক্ত করা হয়।

রিজভী বলেন, এ জন্য নানা ধরনের ফন্দি ফিকিরের আশ্রয় নেওয়া হয়। ২০০৭ সালে ১/১১’র সময় ১৬৪ ধারায় মুফতি হান্নানের জবানবন্দিতে তারেক রহমানের নাম ছিল না। শুধু এ মামলায় তারেক রহমানের নাম বলানোর জন্য অন্য মামলায় ৪১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক ও নির্মম নির্যাতন করা হয় মুফতি হান্নানকে। পৃথিবীর কোনো দেশেই এ ধরনের নজির নেই। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে মুফতি হান্নানকে দিয়ে তারেক রহমানের নাম বলতে ও তথাকথিত স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করে কাহার আকন্দ- যার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। একই ব্যক্তির একই মামলায় দুই বার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির নজির নেই। পরবর্তীতে আদালতে আবেদন করে মুফতি হান্নান তার তথাকথিত স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যও প্রত্যাহার করে নেয় এবং তার উপর বর্বোরচিত নির্যাতনের বিবরণ দেয়।

রিজভী বলেন, মুফতি হান্নানের উপর নির্যাতন চালিয়ে তারেক রহমানকে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ফাঁসানোর জন্য পুরষ্কার স্বরুপ কাহার আকন্দের বারবার পদোন্নতিসহ চাকরির মেয়াদ বেড়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সমাবেশ শুরুর ২ ঘণ্টা আগেও জানত না সমাবেশ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে হবে। সেখানে মুফতি হান্নান কীভাবে দুদিন আগেই জেনেছিল সমাবেশ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে হবে? কার সিদ্ধান্তে সমাবেশস্থল মুক্তাঙ্গন থেকে সরিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে নেওয়া হয়েছিল?

বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, মুফতি হান্নান সভার স্থান পরিবর্তনের সংবাদ পেয়েছিল তাহলে কে তাকে এ সংবাদটি দিয়েছিল? মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিতে গ্রেনেড নিক্ষেপের কথা বলা হয়েছে কিন্তু বন্দুক ব্যবহারের কথা নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় ও সিকিউরিটি অফিসার নাজিব আহমেদ বলেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার বুলেট প্রুফ গাড়িতে অসংখ্য গুলি করা হয়েছে। এ বন্দুক ও গুলি আসল কোথা থেকে?

তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সালের ১১ জুন বর্তমান আইজিপি ও তৎকালীন সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি জাবেদ পাটোয়ারির তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালায় হরকাতুল জিহাদ, মুফতি হান্নানই পরিকল্পনাকারী, মওলানা তাজউদ্দিন গ্রেনেড সরবরাহকারী, হামলার পরিকল্পনা হয় ১৯ আগস্ট। জাবেদ পাটোয়ারীর তদন্ত প্রতিবেদনে কোথাও তারেক রহমান বা বিএনপির নাম নেই। যা ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেররা নীলনকশা পূরণে তাদের নিজেদের আইজিপির প্রতিবেদনকেও অগ্রাহ্য করাও দূরভিসন্ধিমূলক।

রিজভী বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা তদন্ত করতে তৎকালীন বিএনপি সরকার মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআইকে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এফবিআইকে তদন্ত কাজে কোনো প্রকার সহায়তা করা হয়নি এমনকি শেখ হাসিনাকে বহনকারী গাড়িটিও দেখতে দেওয়া হয়নি। কেন তারা সুষ্ঠু তদন্ত করতে দিল না? এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। এ মামলায় তারেক রহমানকে জড়ানো সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও গভীর ষড়যন্ত্রমূলক। আওয়ামী প্রধান শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরদের বর্তমান বক্তব্যেই সেগুলো এখন পরিষ্কার। তারা একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে প্রভাবিত করতেই বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানেক নিয়ে বেসামাল বক্তব্য রাখছেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে এ জাতীয় বক্তব্য সুদুর প্রসারি ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিতবাহী।

বিএনপির অন্যতম এই মুখপাত্র বলেন, যে দেশের প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয় এবং জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়, সেখানে নিম্ন আদালত কতটুকু স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে সে প্রশ্ন সারা দেশের মানুষের। বেগম খালেদা জিয়াও ন্যায় বিচার পাননি। বিরোধীদল শূন্য আগামী নির্বাচন করতেই সরকার সর্বনাশা খেলায় মেতে উঠেছে। মানুষের ক্ষোভের ধাক্কায় আসন্ন পতনের ভয়ে সরকারের বুকে ধড়ফড়ানি শুরু হয়েছে বলেই উদ্ভট বক্তব্য রাখছে। সামনে হয়ত আরও নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করবে সরকার। কিন্তু যতই ষড়যন্ত্র ও মহাপরিকল্পনা করেন না কেনো ওবায়দুল কাদের আপনাদের পতন ঠেকানো যাবে না। আপনাদের পতনের ভূমিকম্প শুরু হয়েছে।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/১:৩৮পিএম/২৫/৮/২০১৮ইং)