• ঢাকা
  • সোমবার, ১৭ Jun ২০২৪, ১১:১৭ পূর্বাহ্ন

বাংলায় প্রথম ঈদের গান রচয়িতা কবি নজরুল


প্রকাশের সময় : মে ২৪, ২০২৪, ১১:৫৯ PM / ৪৯
বাংলায় প্রথম ঈদের গান রচয়িতা কবি নজরুল

রণজিৎ মোদক : “ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ” বাংলার কোকিল কণ্ঠশিল্পী আব্বাস উদ্দিনের কণ্ঠে গাওয়া ইসলাম ধর্ম নিয়ে প্রথম ঈদের গান। আর গানটি লিখেছেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৩২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতাস্থ এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে প্রকাশিত হয়। রেকর্ড নম্বর হলো : এন-৪১১১। আজ পবিত্র ঈদুল ফিতর। প্রতিটি ঈদে এ গান রমজান মাসে রোজার শেষে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার মূহুর্তে মুসলমানদের হৃদয়ে ধ্বনিত হয়। একটি গানেই স্মরণীয় বরণীয় আব্বাস উদ্দিন ও কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

আজ কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মাদিন। বহুমূখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি কল্পনায় নয় বাস্তবতায় বিশ্বাসী ছিলেন। পরাধীন ভারতের স্বাধীনতা পিয়াসী কবি। তাই তিনি তাঁর ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় শক্তি জাগ্রত করার জন্য গাইলেন “বল বীর, উন্নত মম শির”। কবিকে সবাই বিদ্রোহী কবি বলেন।

মূলতঃ নজরুল প্রেমের কবি, মানবতার কবি, সাম্যের কবি। কবি নজরুল বিধি-বিধানের শিকল ছিঁড়ে সাম্যের খুঁজে দুর্বার গতিতে ছুটে চলা এক পথিক। সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কবি ছিলেন কাব্য জগতের অনন্ত সাগরে ধ্যানী সাধক। কবি তার “কবি-রাণী” কবিতায় বলেছেন, “তুমি আমায় ভালবাসো তাই তো আমি কবি।” ভালোবাসতে গিয়ে তিনি তার আপনজনদের কাছ থেকে শুধু আঘাত-ই পেয়েছেন। আঘাত সহ্য করার ক্ষমতাও ছিলো তাঁর। তাই তিনি “আপন-পিয়াসী” কবিতায় বলেন, আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন/ খুঁজি তারে আমি আপনায়।” ধর্মের বিধি-বিধান পারেনি তাঁকে থামাতে। তিনি খাঁটি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও মুসলমান হওয়ার চেয়ে একজন খাঁটি মানুষ হতে চেয়েছিলেন। ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় তিনি সবাইকে আপন করে নিতে চেয়েছেন। তাঁর জীবনটা ছিলো বাস্তবতায় মোড়ানো।

তবে আপনি কোনদিক থেকে দেখবেন? বিদ্রোহী- কবিকে বৃটিশ সরকার তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করলেন। শ্রেষ্ঠ রণসঙ্গীত রচয়িতায় পুরস্কৃত করলেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু। তারুণ্যের কবিকে বরণ করে নিলেন তরুণ সমাজ। শ্যামা সঙ্গীতে শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করলেন কবি নজরুল। নারীর সম-অধিকার স্থানে স্পষ্ট ভাষায় গেয়ে উঠেন, “বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণ কর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।” শ্রমজীবি মানুষের জন্য তিনি ছিলেন দরদী মানুষ। কুলি-মজুর কবিতায় তা স্পষ্ট প্রতীয়মান। কবি চেয়ে ছিলেন, পবিত্র কোরআন শরীফ বাংলা ভাষায় কবিতার ছন্দে লিখবেন কিন্তু দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে কবির কবিতা-গান আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে তরান্বিত করে। মুক্তিসেনাদের মাঝে শক্তি সঞ্চার করে।

কবি তাঁর যৌবন বয়সে বাহু করে বাংলা দেশের বিভিন্ন জেলায় এসেছেন। ১৯২৪ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ও কবি নজরুল মানিকগঞ্জে জেলা কংগ্রেস সম্মেলনে এসে কবিতা-গানে মাতিয়ে ছিলেন। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জেও কবি কয়েকবার আসেন। যা এখন ইতিহাস হয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১৯৭২ সালে ২৪ মে অসুস্থ কবি নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি সম্মানে রাজধানী ঢাকায় নিয়ে আসেন।

কবি আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তাঁর কবিতা, গান, হামদ নাত, গজল চিরদিন আমাদের প্রেরণা যোগাবে। জাতীয় কবি হাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতি সংসদের প্রতিষ্ঠাতা বন্ধুবর কবি হুমায়ুন কবীর দীর্ঘদিন যাবত কবিকে ভালবেসে দায়িত্ব পালন করছেন। নজরুলকে নিয়ে জাতির স্বার্থে আরো গবেষণা করা প্রয়োজন।