• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন

প্রতারনা করে বিয়ে ও যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতন, হাফেজ মামুনের বিরুদ্ধে মামলা


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২, ২:১৩ PM / ৪৯
প্রতারনা করে বিয়ে ও যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতন, হাফেজ মামুনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রতারণা করে অন্যের স্ত্রীকে ভাগিয়ে রেজিস্ট্রেবিহীন বিয়ে করে দীর্ঘদিনের সংসারে তাকে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে স্ত্রীর মর্যাদা না দেয়া সহ যৌতুকের দাবিতে শারীরিক মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে এক হাফেজ এর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগি সেই নারী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার মাতুয়াইল কবরস্থান সংলগ্ন আছিয়া ভিলার ৪র্থ তলার ফ্ল্যাটে ‘ইক্করা দ্বীনিয়া মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোডিং’ রয়েছে। মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হাফেজ মো. মামুন। সে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার পাখিমারা গ্রামের ইউনুছ এর ছেলে।

সম্প্রতি এই হাফেজ এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন তার স্ত্রী মেরিজা বেগম (৩৯)।

অভিযোগে জানা গেছে, পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানার গুরছাকাটি গ্রামের চান্দু গাজীর মেয়ে মেরিজা। নারায়ণগঞ্জের পাগলায় এক ছেলে ও স্বামী সহ বসবাস করতেন। চাকরি করতেন একটি এনজিওতে। এনজিও সূত্রে ঢাকার রায়েরবাগের হাফেজ মামুন এর সাথে তার পরিচয়। একজন হাফেজ হয়েও উচ্চ বিলাসী জীবন যাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেরিজাকে দিয়ে তার প্রথম স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করেন তিনি। এরপর নিজের প্রথম স্ত্রী-সন্তানের কথা মেরিজার কাছে গোপন রেখে এবং ইসলামের বিধি বিধান ও নিকাহ্ রেজিষ্ট্রি আইন না মেনে তাকে নিজ হাতে লেখা মাত্র ৫০ টাকার একটি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ২০১৩ সালের নভেম্বরে বিয়ে করেন হাফেজ মামুন।

৯ বছরের সংসার জীবনে মেরিজার ৮ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নামে মেরিজাকে দিয়ে বিভিন্নজনের থেকে ঋণের টাকা আনেন হাফেজ মামুন। যা পরিশোধ করেনি এখনও। এরই মধ্যে বাবার বাড়ি ও আত্মীয়দের থেকে আরও টাকা এনে দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে হাফেজ মামুন।

অপরদিকে মেরিজা দেশের আইন অনুযায়ী বিয়ে রেজিস্ট্রির জন্য চাপ প্রয়োগ করলে এবং পারিবারিকভাবে স্ত্রীর মর্যাদা দাবি করলে দীর্ঘ ৯ বছরের সংসার জীবনের সমাপ্তি করতে উঠেপরে লাগেন হাফেজ মামুন। স্ত্রী সন্তানের ভরন পোষণ বন্ধ করে এবং তাদের ভবিষ্যতের ব্যবস্থা না করে স্ত্রী মেরিজা ও তার ঔরষজাত সন্তানকে বিদায় করে দিয়ে নিজে প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে মাদ্রাসার সাথে একই ফ্ল্যাটে বসবাস শুরু করেন হাফেজ মামুন।

মামুনের এমন ব্যবহারে মেরিজা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন এবং সব হারিয়ে প্রায় হতাশাগ্রস্ত মেরিজা নারায়ণগঞ্জে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জজ কোর্ট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

হাফিজ মানুন সম্পর্কে মেরিজা বলেন- ‘মামুন এই মাদ্রাসার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে নামে-বেনামে চাঁদাবাজি করে। এছাড়া সে মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মা-বোনদের সাথে নানা অজুহাতে যোগাযোগ করে প্রেম নিবেদনসহ শারিরীক সম্পর্ক তৈরি করার প্রস্তাব দিয়ে থাকে।’

এদিকে, সরেজমিনে গিয়ে হাফেজ মানুনকে পাওয়া যায়নি। তার মাদ্রাসার চিত্র দেখলে বুঝার উপায় নেই এটি বাসাবাড়ি না মাদ্রাসার মতো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফ্ল্যাটের এক রুমে মামুন তার প্রথম স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকেন, অন্য দুটি রুমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও থাকার ব্যবস্থা করেছেন। তাদের কাছে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার কোন ধরনের অনুমোদিত কাগজপত্র নেই বললেই চলে।

ভুক্তভোগি মেরিজা হাফিজ মানুনের এ ধরনের প্রতারনার জন্য স্থানীয় থানা পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেছেন। সেই সাথে এত বড় প্রতারনার জন্য তার শাস্তি দাবী করেছেন।

এ বিষয়ে হাফিজ মামুনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি ইসলামের বিধি মোতাবেক বিয়ে করেছি। তবে রেজিষ্ট্রি করিনি। আমার স্ত্রী ও আত্মীয় স্বজন আমার ২য় বিয়ের বিষয়টি জানতেন না। বর্তমানে তারা জেনে যাওয়ায় আমি সমস্যায় পড়ি এবং তাদের চাপের মুখে পড়ে বলেছি মেরিজাকে ছেড়ে দিবো। আর টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন- আমি টাকা যা নিয়েছি তা পরিশোধ করেছি। বর্তমানে আর্থিক অবস্থা ভালো নেই বলে মেরিজার সংসার চালানোর খরচ দিতে আমার সমস্যা হচ্ছে।