• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৯ পূর্বাহ্ন

নাসিমের স্থানে কে আসবেন তা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও শরিক দলগুলোর মধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনা


প্রকাশের সময় : জুন ১৯, ২০২০, ১১:১৯ AM / ৫৪
নাসিমের স্থানে কে আসবেন তা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও শরিক দলগুলোর মধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনা

মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। একাদশ সংসদে মন্ত্রিসভা গঠনের পর চাওয়া-পাওয়ার গরমিল নিয়ে শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে টানাপোড়েন শুরু হয়। কিন্তু মোহাম্মদ নাসিম তা ভালোভাবে সামলে নেন, সবার অভিমান ভাঙিয়ে জোটের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে থাকেন।
দিবস ও ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি নিয়েও মাঠে সরব ছিলেন তিনি। শরিকদের চাঙ্গা রাখতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশাপাশি নিজের ধানমণ্ডির বাসভবনে নিয়মিত আলোচনায় বসতেন।

সবশেষ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও করোনা সংকট নিয়েও নানা কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। এর মধ্যে তার চলে যাওয়া নেতাদের মধ্যে একধরনের উদ্বেগ তৈরি করেছে। তাদের শঙ্কা, এ সময়ে ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয় ও কার্যক্রম গতি হারাতে পারে।

নাসিমের মৃত্যুর পর তার স্থানে কে আসবেন তা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও শরিক দলগুলোর মধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। শরিক দলের কয়েকজন আগ্রহী। তবে জোটের পরবর্তী মুখপাত্র আওয়ামী লীগ থেকেই আসছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা ইতোমধ্যে শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগও করতে শুরু করেছেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খানন মেনন বুধবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, ‘১৪ দলে মোহাম্মদ নাসিমের শূন্যতা ও অভাববোধ থাকবেই। কারণ প্র্যাকটিক্যালি যদি বলেন তিনিই এটাকে (১৪ দলকে) ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছিলেন এবং যতটুকু কার্যকর ছিল, সেটা বলা যায় তিনিই করে রেখেছিলেন।’

জোটের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে মেনন বলেন, এখন এটা নির্ভর করবে ১৪ দল কীভাবে এগোবে এবং আওয়ামী লীগ এটাকে (জোট) নিয়ে কীভাবে ভাববে তার ওপর।

এক প্রশ্নে মেনন জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে সাজেদা চৌধুরী ১৪ দলের সমন্বয়ক আর মোহাম্মদ নাসিম মুখপাত্র ছিলেন। কিন্তু পরে তিনি (নাসিম) আসলে দুটোই হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি। তিনি বলেন, নতুন মুখপাত্র কে হচ্ছে তা নিয়ে এখনও আলোচনা হয়নি।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, জোটকে সমন্বয়ের দায়িত্ব আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞ কোনো নেতাকেই দেয়া হবে। তবে করোনা সংকটের কারণে কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে। সূত্র বলছে, আনুষ্ঠানিক আলোচনা না হলেও বিষয়টি নিয়ে ভেতরে ভেতরে চিন্তাভাবনা চলছে। কাকে দেয়া হবে, তিনি কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবেন- ইত্যাদি বিবেচনা চলছে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের ফোন পেয়েছেন শরিক দলের এমন একাধিক নেতা যুগান্তরকে বলেন, দুই-তিনজন ফোন দিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্য এই দায়িত্ব নিতে বেশি আগ্রহী। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির এক নেতাও রয়েছেন এই তালিকায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ১৪ দলের দেখাশোনার দায়িত্ব নিশ্চয়ই যোগ্য একজনকে দেয়া হবে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবেন। ধীরেসুস্থে গণতান্ত্রিকভাবেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক যুগান্তরকে বলেন, ১৪ দলের মুখপাত্র কে হচ্ছেন তা এখনও চূড়ান্ত নয়। তবে এটা আওয়ামী লীগের বাইরে যাওয়ার সুযোগ কম। ১৪ দলের কাজের সমন্বয়ের জন্য আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেই মোহাম্মদ নাসিমের মতো যোগ্য কাউকে নির্বাচন করা হবে।

২০০৪ সালে ২৩ দফার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠন করা হয় ১৪ দলীয় জোট। সে সময় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম দিয়ে জোটের কার্যক্রম শুরু হয়। শরিকদের নিয়ে নানা ঘাত-প্রতিঘাত পাড়ি দিয়ে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জেতে আওয়ামী লীগ।

কিন্তু একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা কমিয়ে দেয়া, সরকারের মন্ত্রিসভায় শরিকদের কাউকেই না রাখা, সংসদের বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের প্রস্তাব এবং বিভিন্ন সময়ে সরকারে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না দেয়া- ইত্যাদি কারণে তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের প্রথম থেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন শরিক দলের নেতারা।

বিভিন্ন সময় কিছু বক্তব্যে জোটের ঐক্যে ফাটলের ইঙ্গিত মিলছিল। কিন্তু বিষয়গুলো এককভাবে নিয়ন্ত্রণ ও সমাধান করে আসছিলেন মোহাম্মদ নাসিম।
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/কেএস/১১:১৮এএম/১৯/৬/২০২০ইং)