• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩১ অপরাহ্ন

নবী-রাসূলের পরিচয় এবং তাঁদের প্রতি বিশ্বাস


প্রকাশের সময় : মে ১৯, ২০১৭, ১১:৪০ PM / ৩৬
নবী-রাসূলের পরিচয় এবং তাঁদের প্রতি বিশ্বাস

 

মাওলানা মিরাজ রহমান : মানুষের হিদায়েতের জন্য আল্লাহ তাআলা যে সব মহামানবকে মনোনীত করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, তাঁদেরকেই পরিভাষায় ‘নবী-রাসূল’ বলা হয়। ‘রাসূল’ শব্দের অর্থ প্রেরিত পয়গাম্বর। শরীয়তের পরিভাষায়, আল্লাহ্র বিধি-বিধান সৃষ্টির কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত ও প্রেরিত ব্যক্তিকে ‘রাসূল’ বলা হয়। [শরহু আকাইদিন নাসাফ্যিয়াহ, পৃষ্ঠ-১৪, কাওয়াদিুল ফিক, পৃষ্ঠ-৩০৭] রাসূল শব্দের বহুবচন রুসুল। কুরআন ও হাদিসে শব্দটি একবচন ও বহুবচন উভয়ভাবেই ব্যবহৃত হয়েছে।

পক্ষান্তরে নবী বলা হয়, আল্লাহর পক্ষ হতে সত্য স্বপ্ন অথবা ইলহাম অথবা ফিরিশতা প্রেরণের মাধ্যমে যার প্রতি বিশেষ ধরনের অহি নাজিল হয়েছে এরূপ মনোনীত মহামানবকে নবী বলা হয়। [শরহু আকাইদিন নাসাফ্যিয়াহ, পৃষ্ঠ-৫২১]

নবী ও রাসূল-এর মধ্যে পার্থক্য এই যে, যে সব পয়গাম্বরের প্রতি আলাদা কিতাব নাজিল করা হয়েছে এবং যাঁদেরকে নতুন শরিয়ত দেওয়া হয়েছে তাঁদেরকে রাসূল বলা হয়। আর প্রত্যেক পয়গাম্বরকেই নবী বলা হয়, তাঁকে নতুন কিতাব ও নতুন শরীয়ত দেওয়া হোক বা না হোক। [শরহু আকাইদিন নাসাফ্যিয়াহ, পৃষ্ঠ-১৪, তালিমুল ইসলাম, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা-১২]

যে সকল নবীর প্রতি কিতাব নাজিল হয়নি তাঁরা পূর্ববতী রাসূলগণের প্রচারিত শরিয়তের অনুসরণ করে দীনের কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক রাসূলই ন্যায়পরায়ণ, নিষ্পাপ ও বুদ্ধিসম্পন্ন ছিলেন। তাঁরা সবাই ছিলেন আদর্শ মানব। তাঁদের উন্নত চরিত্রে মানবীয় গুণাবলীর পূর্ণ বিকাশ ঘটেছে। তাঁরা নিঃস্বার্থভাবে মানুষের কল্যাণে সাধনা করেছেন। সত্যের প্রচার ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁদের ব্রতী। তাঁরা যা বলেছেন ও করেছেন সবই আল্লাহ্র নির্দেশে। নিজ খেয়াল খুশী মতো অথবা স্বীয় স্বার্থসিদ্ধির জন্য তাঁরা কখনো কোনো কিছু করেননি। তাঁদের মধ্যে সর্বপ্রথম পয়গাম্বর বা নবী হলেন হজরত আদম (আ.) এবং সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ পয়গাম্বর হলেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)। পৃথিবীতে যত নবী-রাসূল প্রেরিত হয়েছেন তাঁদের কয়েকজনের নাম আল-কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- ১. হজরত আদম (আ.), ২. হজরত নূহ্ (আ.), ৩. হজরত ইদ্রীস (আ.) ৪. হজরত হুদা (আ.), ৫. হজরত সালিহ্ (আ.), ৬. হজরত ইরবাহিম (আ.), ৭. হজরত ইসমাঈল (আ.), ৮. হজরত ইসহাক (আ.) ৯. হজরত লূত, ১০. হজরত ইয়াকব (আ.), ১১. হজরত ইঊসুফ (আ.), ১২. হজরত শুআইব (আ.), ১৩. হজরত মূসা (আ.), ১৪. হজরত হারুন (আ.), ১৫. হজরত ইল্ইয়াস (আ.), ১৬. হজরত ইয়াসা (আ.), ১৭ হজরত দাঊদ (আ.), ১৮. হজরত সুলায়মান (আ.), ১৯. হজরত আইউব (আ.), ২০. হজরত ইউনুস (আ.), ২১. হজরত যুলইকফ্ল (আ.), ২২. হজরত যাকারিয়া (আ.), ২৩. হজরত ইয়াহইয়া (আ.), ২৪. হজরত ইসলা (আ.) ও ২৫. হজরত মুহাম্মদ (সা.)।

হজরত আবূ যার গিফারী (রা.) বলেন, একবার আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! নবীগণের সংখ্যা কত? উত্তরে তিনি বললেন, একলক্ষ চব্বিশ হাজার। তন্মধ্যে তিনশ তের অপর বর্ণনা মতে তিনশ পনের জন্য হলেন রাসূল। [মিরকাত, মোল্লা আলী কারী (রহ.), ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৭৫]

নবী-রাসূল গণের উপর ঈমান আনা ফরজ। আল-কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোনো তারতম্য করি না। (সূরা বাকরা, ২ : ২৮৫)

অবশ্য হজরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ পয়গাম্বর। তাঁর পর আর কোনো নবী-রাসূল এ পৃথিবীতে আসবেন না। কারণ তাঁর সময়ই দীন পূর্ণতা লাভ করে।

উল্লেখ্য যে, নবুওয়াত ও রিসালাত একমাত্র আল্লাহ তাআলার দান। কারো চেষ্টা ও পরিশ্রমের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। মানুষের মানুষরূপে জন্মগ্রহণ করা যেমন আল্লাহর দান তেমনি নবুওয়াত এবং রিসালাতও তাঁর অনুগ্রহ মাত্র। কুরআনে করীমের বিভিন্নআয়াতে এই সত্যটির ঘোষাণা দেওয়া হয়েছে, আল্লাহ্ ফিরিশতাগণের মধ্য হতে মনোনীত করেন বাণীবাহক এবং মানুষের মধ্য হতেও। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা হাজ্জ, ২২ : ৭৫)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ্ তাঁর রিসালতের ভার কারো উপর অর্পণ করবেন তা তিনিই ভালো জানেন। (সূরা আনআম, ৬ : ১২৪)

নবী-রাসূলগণ সকলেই আল্লাহর বান্দা। তাঁদের কাউকে আল্লাহ্ বা আল্লাহ পূত্র বলে বিশ্বাস করা শিরকের অন্তর্ভূক্ত। বস্তুত যারা এরূপ আকীদা পোষণ করে তারা জাহান্নামী। খ্রীস্টান সম্প্রদায় যারা হজরত ঈসাকে (আ.) আল্লাহ বা আল্লাহ্র পুত্র বলে প্রচার করতো, আল-কুরআনে তাদের সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, যারা বলে আল্লাহ্ই মারইয়াম তনয় মাসীহ তারা তো কুফরীই করেছে, অথচ মাসীহ্ বলেছির, হে নবী ইসরাঈল, তোমরা আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্র ইবাদত কর। কেউ আল্লাহর শরীক করলে আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করবেন। আর তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। যারা বলে আল্লাহ্ তো তিনের মধ্যে একজন, তারা তো কুফরী-ই করেছে, যদিও এক আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। তারা যা বলে তা হতে নিবৃত্ত না হলে তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে তাদের উপর অভ্যই মর্মন্তুদ শাস্তি আপতিত হবেই। (সূরা মায়িদা, ৫ : ৭২-৭৩) (প্রিয়.কম)

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১১:৩৫পিএম/১৯/৫/২০১৭ইং)