• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৬:৫২ পূর্বাহ্ন

ঢাকার দুই সিটির সিইওদের হাইকোর্টে তলব


প্রকাশের সময় : মে ৫, ২০১৯, ১০:৫৬ PM / ১৭৬
ঢাকার দুই সিটির সিইওদের হাইকোর্টে তলব

 

রাজধানীর ধুলোবালিপ্রবণ এলাকাগুলোতে দিনে দুইবার পানি ছিটাতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন কী ব্যবস্থা নিয়েছে, আদৌ পানি ছিটানো হয় কিনা সে বিষয়ে জানতে দুই সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে তলব করেছেন হাইকোর্ট।
আগামী ১৫ মে হাজির হয়ে তাদের এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন আদালত। শুনানিতে আদালত সিটি কর্পোরেশনের কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, চোরকে চোর বলতে লজ্জা লাগে? যারা দুর্নীতিবাজ তাদের দুর্নীতিবাজ বলবেন, না হলে দেশ রক্ষা হবে না।

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান এবং বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এসব মন্তব্য করেন।

সেই সঙ্গে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে বলেছেন, তিনি যেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিবেশ অধিদফতরের জন্য পর্যাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটের পদায়ন করার বিষয়ে কথা বলেন।

আদালতে রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী নুরুন্নাহার।

শুনানির শুরুতে আদালতের আদেশ চেয়ে রিটকারীর পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন যে তিনটি প্রতিবেদন দিয়েছে তা ঘুরেফিরে প্রায় এক। আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে কিংবা অগ্রগতির বিষয়ে সেখানে কিছুই বলা হয়নি। মূলত সিটি কর্পোরেশনের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের চার্ট তুলে দেয়া হয়েছে।

সিটি কর্পোরেশনের আইনজীবী নুরুন্নাহার তখন বলেন, ওই প্রতিবেদনে পানি ছিটানোর বিষয়ও উল্লেখ রয়েছে।বিচারক তখন প্রতিবেদনের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এখানে তো বলা হয়নি কে, কখন, কোথায় পানি ছিটাচ্ছে। আমরা তাহলে কীভাবে বুঝব আদৌ পানি ছিটানো হচ্ছে কিনা! আদালত বলেন, আমরা তো রাস্তায় চলি। কোথাও পানি ছিটানো হয়েছে দেখি না। পানি ছিটানো হয় শুধু ভিআইপি সড়কে। এখন আপনি একটা দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের চার্ট এনে হাজির করেছেন। একই জিনিস তিনবার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দিয়েছেন। সেই যে গল্পের কুমিরের বাচ্চার মতো। তাই আমরা যথাযথ ব্যক্তিদের কাছ থেকেই শুনতে চাই।

আদালত বলেন, চোরকে চোর বলতে লজ্জা লাগে? যারা দুর্নীতিবাজ তাদের দুর্নীতিবাজ বলবেন, না হলে দেশ রক্ষা হবে না।

শুনানির একপর্যায়ে রিটকারীর পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ পরিবেশ অধিদফতরের ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্কটের তথ্য তুলে ধরে বলেন, পর্যাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় পরিবেশ অধিদফতর আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে কাজ করতে পারছে না। বর্তমানে সাত বিভাগে মাত্র সাতজন ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে পরিবেশ অধিদফতরের। ঢাকায় মাত্র একজন। এই একজনের পক্ষে এই বিশাল এরিয়ার কাজ পরিচালনা সম্ভব না।

আদালতও এর সঙ্গে সহমত প্রকাশ করলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বাশার বলেন, পরিবেশ অধিদফতর আদালতের যে কোনো আদেশ বাস্তবায়নে খুব আন্তরিক। কিন্তু তাদের জনবল সঙ্কট রয়েছে।

বিচারক তখন বলেন, জনবলের সীমাবদ্ধতা তো সব জায়গাতেই রয়েছে। সুপ্রিমকোর্টেরও জনবল সঙ্কট রয়েছে। যাই হোক, আমরা এখনই ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়ে কোনো আদেশ দিচ্ছি না। তবে আপনি পরিবেশ সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিবেশ অধিদফতরের জন্য পর্যাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট পদায়নের বিষয়ে কথা বলুন এবং আগামী শুনানিতে আমাদের জানান।

আদেশের পর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, দুই সিটি কর্পোরেশনের দুই চিফ এক্সিকিউটিভকে আগামী ১৫ মে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে যে, আদালতের আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে কমপ্লায়েনস কেন দিতে পারছে না।

এর মধ্যে তিনবার প্রতিবেদন দিলেও তাদের আইনজীবী সঠিকভাবে দিতে পারছেন না। সর্বশেষ যেটা দিয়েছে সেটি আগেও দেয়া হয়েছে। আর লিখে দিয়েছে অমুক অমুক ড্রাইভার এ কাজ করবে।কাজটা আদৌ হয়েছে কিনা কিংবা এ কাজটা এখানে হচ্ছে কমপ্লায়েন্সে সেটা দেখাতে হবে। ওগুলো কিচ্ছু নাই। ফলে আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সিটি কর্পোরেশনের কমপ্লায়েন্স দেখে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার পরে সাংবাদিকদের বলেন, সিটি কর্পোরেশনের প্রতি নির্দেশনা ছিল দিনে দুইবার করে পানি ছিটাতে। যেন ধুলাটা অন্য জায়গায় ছড়াতে না পারে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে যেসব কাগজপত্র দাখিল করা হয়েছে, সেখানে তাদের রুটিন ওয়ার্ক তুলে ধরা হয়ছে। আদালত এতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি।

আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কাজগুলো সম্পাদন হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে কাগজপত্র দাখিল করতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। এ কারণে ১৫ মে দুই সিটি কর্পোরেশনের দুই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন।

ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে গণমাধ্যমে ২১ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে একটি রিট আবেদন করা হয়।

ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২৮ জানুয়ারি আদালত রুলসহ আদেশ দেন। ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ রোধে প্রশাসনের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

বন ও পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, পরিচালক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, নির্বাহী কর্মকর্তা, ডিএমপি কমিশনার, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউকের চেয়ারম্যানসহ ১১ বিবাদীকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

পাশাপাশি ‘ধুলোবালিপ্রবণ’ এলাকাগুলোতে দিনে দুইবার করে পানি ছিটাতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/কেএস/১০:৫৫পিএম/০৫/০৫/২০১৯ইং)