• ঢাকা
  • বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০৪:২৩ পূর্বাহ্ন

গাঁজা মাপার পাল্লা দিয়ে এখন মাপেন চাল-ডাল!


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ৮, ২০১৯, ৩:২৮ PM / ৪৫
গাঁজা মাপার পাল্লা দিয়ে এখন মাপেন চাল-ডাল!

ফরিদুল ইসলাম(রঞ্জু), ঠাকুরগাঁও : একবার মাদক ব্যবসার সাথে জড়ালে সেখান থেকে নাকি বের হওয়া অনেক কঠিন। এর রয়েছে নানাবিধ কারণ। কাঁচা পয়সা হাতে পাওয়া,মামলায় জর্জরিত হয়ে মামলা চালানোর খরচ উঠানোসহ অনেক কিছু।সেভ দ্যা চিলড্রেনের তথ্যমতে মাদক নিরাময়কেন্দ্রে চিকিৎসা নেবার পর শতকরা ২০-২৫ ভাগ মাদকসেবী ভালো হয়। তাদেরও আবার মাদকে জড়িয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে দীর্ঘদিন। কিন্তু মাদক বিক্রেতার ক্ষেত্রে এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়না কোথাও। একবার এই ব্যবসায় জড়ালে শতকরা ১০ ভাগ ফিরে আসে কিনা সন্দেহ আছে।বিগত দিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধৃত ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে কিছুদিন জেল খাটার পর বেরিয়ে এসেই আবার ব্যবসা শুরু করেছে।অনেকে রিমান্ডে থাকার পর জেল খেটে ২-৩ বছর ভালোই ছিল।কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে সে ঠিকই আবার সেই ব্যবসায় জড়িয়ে যাচ্ছে।সেখান থেকে তাদের বের করে নিয়ে আসাও সামাজিক,রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের ভেতরই পরে।কিন্তু চক্ষু লজ্জায় এসব বিষয়ে মাথা ঘামাননা কেউ।পাছে লোকে কিছু বলে।কিন্তু কেউ ভাবেনা মাদক ব্যবসায়ী ভালো হলে সমাজের,তরুণ,যুবাদের কতটুকু লাভ।
যে প্রসঙ্গে লেখা, ঠাকুরগাঁও রেল ষ্টেশন বস্তির বৃদ্ধা মুসলিমা রানী(৬৫),এক সময় যেই দাড়িপাল্লা দিয়ে নিয়মিত মাপতেন গাঁজা,আজ সেই দাড়িপাল্লা দিয়ে মাপছেন চাল,ডালসহ তরিতরকারী।সত্যিই অবাক হবার মতই বিষয়।কথা প্রসঙ্গে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে যাবার কষ্টের ইতিহাস বলছিলেন।তার মা পারুল বেগম ও ছোট ভাই কুট্টি করতেন গাঁজার ব্যবসা।সে সময় তিনি শাড়ি বিক্রি করে বেড়াতেন বাড়ি বাড়ি গিয়ে।কিছুদিন পর রাজমিস্ত্রির হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করেন।কিন্তু সমাজ তাকে ভালো থাকতে দেয়নি।মা,ভাইয়ের পাপ এসে তার ঘাড়ে চড়ে বসে।বিনা দোষে আসামী হন তিনটি মাদক মামলার।মিথ্যে মামলা গুলোই তার জীবনের পথ পাল্টে দেয়।নিজেও বনে যান মাদক বিক্রেতা!অনেকটা জেদের বসেই এই পথে আসেন।স্বামী ছিলেন ঠাকুরগাঁও রোডের মাংসের কসাই যাকে মোস্তফা কসাই বলেই সবাই চেনে।গোলাম মোস্তফা একটা সময় শারীরিক অক্ষমতায় কাজ বাদ দিয়ে দেন।স্বামী-স্ত্রী,তিন মেয়ে আর এক ছেলের সংসার তার উপর এসে পড়ে।একদিকে পারিবারের চাপ অন্যদিকে অসংখ্য মামলায় জর্জরিত মুসলিমা রানী ওরফে মুসলি আর গাঁজার ব্যবসা ছাড়তে পারেননি।দীর্ঘ ১০-১২ বছর একটানা চালিয়ে যান এই অবৈধ ব্যবসা।শেষের দিকে এসে বেচারা স্বামীও মারা যান আর তিন মেয়ের বিয়ে হলেও জামাইরা মুসলির উপর ফেলে রেখেছেন মেয়েদের।তিন মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে পড়েন অথৈ সাগরে।ব্যবসা ছাড়ার চেষ্টা করেও পারেননি কোন ভাবেই।মাস সাতেক আগে ছোট ভাই কুট্টি দেশে চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে পুলিশের হাতে ক্রসফায়ারে মারা যায়।চোখ খোলে তার। ছোট ভাইয়ের মৃত্যু শোক আর ভয় থেকে চিন্তা করেন ভিন্ন কিছু করতে।মাস ছয়েক আগে কিছু জমানো টাকা আর লোন করা টাকায় বাড়ির সামনে শুরু করেন ছোট্ট একটা মুদির দোকান।এখন সে আর পাল্লা দিয়ে গাঁজা মাপেনা,মাপে চাল,ডাল,মসলা,তরিতরকারী।দোকান চলুক আর নাই চলুক কষ্টের মাঝে তার মিষ্টি হাসি,বাবা ভালো আছি।মাস শেষে সাংবাদিকরা আর চাঁদা নিতে আসেনা।পুলিশ আসেনা ধরে নিয়ে যেতে।তোমাদের দোয়ায় ভালোই আছি।তার এই পরিবর্তনের পরও দুটি আক্ষেপ আছে তার।কেউ যেন তাকে ফাসিয়ে না দেয়।আর কিছুদিন আগে রেল কতৃপক্ষ জানিয়ে দিয়ে গেছে রেলের জায়গা ছেড়ে দিতে হবে।এখন তার একটাই দুশ্চিন্তা সত্যি সত্যিই যদি রেল কতৃপক্ষ জায়গা ছাড়িয়ে নেয়, অসহায় এই বৃদ্ধা তিন মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে কোথায় মাথা গুঁজবে।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/৩:২৭পিএম/৮/১/২০১৯ইং)