• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৬:৪৮ পূর্বাহ্ন

ক্যারিয়ার ফটোগ্রাফিতে গড়তে চাইলে


প্রকাশের সময় : মার্চ ২৮, ২০১৭, ১:১৩ PM / ৫২
ক্যারিয়ার ফটোগ্রাফিতে গড়তে চাইলে

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

সৃজনশীল পেশা ফটোগ্রাফি। আজকাল অনেক উচ্চ শিক্ষিত তরুণ-তরুণীও পেশায় বৈচিত্র্যের খোঁজে ফটোগ্রাফিতে ঝুঁকছেন। সৃজনশীল মনোভাব আর কঠোর পরিশ্রম করার আত্মবিশ্বাস থাকলে এ পেশায় সফলতা ধরা দিতে পারে হাতের মুঠোয়। ইদানিং মিডিয়ার ব্যাপ্তি দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় দক্ষ ফটোগ্রাফারের চাহিদা বেড়েছে।

কাজের ধরণ ও পরিধি
একজন সৃজনশীল এবং দক্ষ ফটোগ্রাফারের কাজের ক্ষেত্রে ব্যাপ্তি অনেক বেশি। ফটো সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে বর্তমানে সুপরিচিত এবং আর্থিকভাবে সচ্ছল অনেকেই। একজন ফটো সাংবাদিকের প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেট্রনিক মিডিয়া, নিউজ এজেন্সি, ফটো এজেন্সিতে কাজের সুযোগ আছে। সাংবাদিকতা ছাড়াও গ্ল্যামার ফটোগ্রাফি, প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি, ওয়েডিং ফটোগ্রাফি, ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফি, চলচিত্রে স্টিল ফটোগ্রাফি করার সুযোগ রয়েছে। ফটো কম্পিটিশন এবং ফটো এক্সিবিশনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। এ ছাড়া মহল্লা বা পাড়ায় স্টুডিও স্থাপন করেও প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায় এই পেশায়।

প্রস্তুতি
আগেই বলা হয়েছে যাদের মধ্যে সৃজনশীলতা রয়েছে তারাই পেশা ফটোগ্রাফি বেছে নিতে পারেন। আমাদের চলমান জীবনে কতো ঘটনাই তো ঘটে, এইসব ঘটনা থেকে বিশেষ মুহূর্ত বেছে নেওয়ার আলাদা ক্ষমতা থাকতে হবে একজন ফটোগ্রাফারের। একটি দৃশ্য থেকে সাধারণ মানুষ যা না দেখে একজন ফটোগ্রাফারকে তার সৃজনশীলতার মাধ্যমে ওই দৃশ্য থেকে আলাদা কিছু বের করে আনার যোগ্যতা থাকতে হবে। এ পেশায় ধৈর্য থাকাটা জরুরি। আর প্রেস ফটোগ্রাফি করার জন্য শারীরিক সুস্থতা প্রয়োজন। কেননা প্রেস ফটোগ্রাফারকে হরতাল, পিকেটিং, মারামারিসহ বিভিন্ন রকম রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও দায়িত্ব পালন করতে হয়। যেখানেই অ্যাসাইনমেন্ট দিক না কেন তা যথাসময়ে অফিসে জমা দিতে হয়। এরকম পরিস্থিতিতে শারীরিক অযোগ্য লোকের পক্ষে কাজ করা প্রায় অসম্ভব। কাজের ব্যাপারে যত বেশি আন্তরিক থাকবেন তত দ্রুত সাফল্য আসবে এ পেশায়।

কম্পিউটার জ্ঞান থাকা জরুরী
যুগটাই এখন ডিজিটাল। সর্বত্র ব্যবহার হয় ডিজিটাল ক্যামেরা। ফটোগ্রাফির অনেক কিছুই এখন কম্পিউটারনির্ভর। তাই দক্ষ ফটোগ্রাফার হতে হলে বর্তমানে প্রযুক্তি জ্ঞান থাকাটা প্রয়োজন। ছবিতে বিভিন্ন ইফেক্ট এবং প্রাণবন্ত করে তুলতে ফটোশপের বিভিন্ন ভার্সনে কাজ করার দক্ষতা থাকতে হবে।

প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা
বই পড়ে, ইন্টারনেট ঘেঁটে, ছবি দেখে বা অভিজ্ঞ কোন আলোকচিত্রীর সঙ্গে থেকে ফটোগ্রাফি শেখা যায়। তবে ক্যারিয়ার হিসেবে ফটোগ্রাফিকে বেছে চাইলে প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি হয়ে হাতেকলমে ফটোগ্রাফির নানা নিয়ম ও কৌশল শিখে নেওয়াটা জরুরী। ফটোগ্রাফি বর্তমানে কম্পিউটার নির্ভরশীল। এর বিভিন্ন টেকনিক এবং অন্যান্য কাজ সম্পূর্ণ জিজিটাল। তাই ফটোগ্রাফির কৌশল যথাযথভাবে রপ্ত করার জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।

আমাদের দেশে ফটোগ্রাফির ওপর বিভিন্নধরনের কোর্স পরিচালনা করছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে ফটোগ্রাফির ওপর ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট কোর্স করানো হয়ে থাকে। তবে প্রশিক্ষণ নেয়ার আগে অবশ্যই নিজের একটিডিজিটাল সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্স (ডিএসএলআর) ক্যামেরা থাকতে হবে। এইসব কোর্সে শেখানো হয় ডিজিটাল ক্যামেরা অপারেশন, সম্পাদনা, শিশুদের ছবি তোলা, মডেল ফটোগ্রাফি ও ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফি প্রভৃতি।

ফটোগ্রাফির বিভিন্ন কোর্স

বেসিক কোর্স অন ফটোগ্রাফি : ফটোগ্রাফি সম্পর্কে যারা কিছুই জানো না মূলত তাদের জন্য এই কোর্স। এই কোর্সে প্রশিক্ষণার্থীদের ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তোলা, ফ্রেমিং ও কম্পোজিশন, দিনে ও রাতে ছবি তোলার এক্সপোজার, ফ্লাশ ফটোগ্রাফি, স্টুডিও লাইটিং টেকনিকস এবং এক্সপোজার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

ভিডিওগ্রাফি কোর্স : যারা স্যাটেলাইট চ্যানেলে কিংবা ফ্রিল্যান্স ক্যামেরাম্যান হিসেবে কাজ করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য এই কোর্সটি উপযুক্ত। এই কোর্সের মাধ্যমে এইচডিভি এবং ডিভিক্যাম ক্যামেরা অপারেশন, শুটিং টেকনিকস, ফ্রেমিং এন্ড কম্পোজিশন, ইনডোর-আউটডোর শুটিং, স্টুডিও লাইটিং টেকনিকস, বিভিন্ন শট, সাইজসহ নানা বিষয়ে জানা যায়।

ডিপ্লোমা ইন ফটোগ্রাফি : এটি একটি প্রফেশনাল কোর্স। এই কোর্সে অংশগ্রহণ করতে চাইলে থাকতে হবে একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা। ফটোগ্রাফি সম্পর্কে যাদের বেসিক জ্ঞান রয়েছে তারা এই কোর্সে যোগ দিতে পারো। কোর্সে শেখানো হবে ডিজিটাল ক্যামেরা অপারেশন, ফটো এডিটিং, প্রোট্রেট ফটোগ্রাফি, শিশুদের ছবি তোলা, মডেল ফটোগ্রাফি, ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফি, ক্রাইম ছবি তোলা, সেমিনারের ছবি তোলা, ক্যানডিড ফটোগ্রাফি। মূলত বাণিজ্যিক চিন্তাধারা যাদের রয়েছে তাদের জন্য এই কোর্সটি উপযুক্ত।

ডিপ্লোমা ইন ফটো জার্নালিজম : যারা সংবাদপত্রে ফটো সাংবাদিক হতে চাও তাদের জন্য এই কোর্সটি প্রযোজ্য। এই কোর্সে শেখানো হয় স্টিল লাইফ ফটোগ্রাফি, ফ্লাশ ফটোগ্রাফি, খেলাধুলার ছবি তোলার টেকনিকস, ক্যানডিড ফটোগ্রাফি, দুর্ঘটনার ছবি তোলা, মিছিল ও সেমিনারের ছবি তোলা, সিল্যুট ফটোগ্রাফি, ফটো এডিটিংসহ নানা বিষয়। এই কোর্স শেখার জন্য থাকতে হবে একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা।

মডেল ফটোগ্রাফি : বর্তমান সময়ে মডেল ফটোগ্রাফারের অনেক চাহিদা রয়েছে। তাদের জন্য উপযুক্ত এই ফটোগ্রাফি। এতে মডেল ফটোগ্রাফির লাইটিং, মেকাপ, মডেলের পোশাক-পরিচ্ছদ, মডেলের ফটোসেশন এবং ফটো এডিটিং সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করা যায়।

বেসিক কোর্স অন ফটো এডিটিং : যাদের ছবি তোলা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ রয়েছে তারাই এই কোর্সে অংশগ্রহণ করতে পারো। এই প্রশিক্ষণার্থীদের ফটো এডিটিংয়ের বিভিন্ন টুলস, ক্রপ করা, কালার কারেকশন ও কম্পোজিশন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ শেষে যে কেউ মিডিয়ায় উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে পারো।

স্টুডিও ফটোগ্রাফি : যারা স্টুডিও ফটোগ্রাফি পেশায় আসতে চান তাদের জন্য এই কোর্স। এই কোর্সের মাধ্যমে শেখা যায় কিভাবে ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তোলা হয়। সেই সঙ্গে পাসপোর্ট ছবি তোলা, স্টুডিও লাইটিং টেকনিক্স, ইনডোর আউটডোর ছবি তোলা, বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি তোলা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট:
আমাদের দেশে ফটোগ্রাফি শেখার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার মধ্যে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফি ইনস্টিটিউট, বেগ আর্ট ফটোগ্রাফি ইন্সটিটিউট, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, পাঠশালা, চঞ্চল মাহমুদ স্কুল অব ফটোগ্রাফি, বেঙ্গল আর্ট ইনস্টিটিউট অব ফটোগ্রাফি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ফটোগ্রাফির ওপর বিভিন্ন ধরনের কোর্স করানো হয়।

পেশাগত চাহিদা:
প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় একজন ফটোগ্রাফারের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। দিনে দিনে এরকম প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আমাদের দেশে বেড়েই চলেছে। ফলে বাড়ছে ফটোগ্রাফারদের কর্মসংস্থান। শিক্ষানবিশ পর্যায়ে ফটোগ্রাফি করে মাসিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। একজন দক্ষ ফটোগ্রাফারের মাসিব বেতন ৫০ হাজার টাকার ওপরেও হয়ে থাকে। আসলে বর্তমান মিডিয়ার প্রসারের ফলে একজন ফটোগ্রাফারের আয়ের কোনো নির্দিষ্ট পরিসীমা নেই অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে ফটোগ্রাফারদের উপার্জনও বাড়ে। এছাড়াও ফ্রিল্যান্সার ও ওয়েডিং ফটোগ্রাফার হিসেবেও মাসে সম্মানজনক অর্থ আয় করা সম্ভব।

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম /০১.০9 পিএম/২৮//২০১৭ইং)