• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪১ পূর্বাহ্ন

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল দুর্নীতির স্বর্গ রাজ্যে পরিণত


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৬, ২০১৯, ৯:২৮ PM / ৩৯
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল দুর্নীতির স্বর্গ রাজ্যে পরিণত

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এখন দুর্নীতির স্বর্গ রাজ্যে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠান না থেকে ঠিকাদারী কাজ পাচ্ছেন এবং সরবারি ঔষধ পাচার হলেও মূল হোতারা থেকে যাচ্ছেন ধরা ছোয়া বাইরে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে বিনামূল্যে ঔষধসহ কম্বল-মশারি না পেয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সেবা গ্রহীতাদের।
কুড়িগ্রাম ২৫০শয্যা বিশিস্ট জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন শত-শত রোগী সেবা নিতে আসেন। এদের মধ্যে অনেকেই ভর্তি হন আবার কেউ চলেও যান। ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্য সরকারের দেয়া কম্বল, চাদর, বালিশের কভার দেবার নিয়ম থাকলেও সেগুলো সঠিকভাবে পাচ্ছেন না। সরকারের দেয়া সুযোগ সুবিধা থেকে শীতেও রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। শীতের সময় শয্যা বা মেঝেতে থাকলেও মিলছেনা কম্বল, বালিশের কভার। যা মিলছে তাও ময়লা, গন্ধযুক্ত। রোগী ভর্তি করে অনেকটাই বাধ্য হয়ে বাড়ি থেকে শীত নিবারনের জন্য কাথা, কম্বল, লেপ নিয়ে আসতে হয় স্বজনদের। প্রতিষ্ঠান না থাকলেও অসাধু উপায়ে মানিক লন্ড্রি এবং সাদেক লন্ড্রি নামের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিয়েত সহযোগিতা করে প্রতিমাসে মাসোয়ারা নেবার অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালের হিসাবরক্ষক আশরাফ মজিদের বিরুদ্ধে। অথচ শীত-গ্রীষ্ম কালিন সময়েও দেখা যায় প্রতিমাসেই নিয়মিত ধৌত করার মোটা অংকের বিল উত্তোলন করছেন ঠিকাদার। আরো অভিযোগ রয়েছে তিনি হাসপাতালের নানান অনিয়ম করে টাকার পাহাড় গড়ছেন। তিনি পৌর এলাকার গস্তিপাড়ায় প্রায় ৬০লাখ টাকা দিয়ে দুটি জমি ক্রয় করে একটিতে ৫তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করছেন। যা প্রায় দু’কোটি টাকা। এর আগে তিনি ২০১৭সালে প্রায় ১৮/২০লাখ টাকা ব্যয়ে তার গ্রামের বাড়িতে ৮০শতক জমি কিনেন।
হলোখানা ইউনিয়নের এক জনপ্রতিনিধি বলেন, আশরাফ মজিদ সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের টাপুরচর গ্রামের অবসর প্রাপ্ত প্রাইমারী শিক্ষক বহিয়ত উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। তার পিতার প্রায় ১০বিঘা সম্পত্তি রয়েছে। এই সম্পত্তির অংশীদার রয়েছেন ৬ভাই বোন। তিনি বলেন শুনেছি আশরাফ শহরে জায়গা জমি কিনে বাড়ি করছেন। কিভাবে যে এত টাকার মালিক হলেন তা সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। অথচ তার পরিবারের এমন কোন সদস্য নেই তাকে জায়গা-জমি কেনার জন্য মোটা অর্থ সহযোগিতা করবেন।
তথ্যানুসন্ধানে দেখাযায় কম্বল-১১টাকা, চাদর-১৭টাকা, বালিশের কভার-৭টাকা, মশারী-৫টাকা, দরজা ও জানালার পর্দ্দা-৪টাকা করে এবং তোয়ালে- ৩টাকা একক দর দেয়া রয়েছে। বিল সীটে দেখাযায় শীত ও গ্রীষ্মকালিন সময়ে প্রতিমাসে গড়ে ঠিকাদার প্রায় দেড় লাখ টাকা করে উত্তোলন করছেন। জেনারেল হাসপাতালের ১০০শয্যা রাজস্ব খাত এবং ১৫০শয্যার জন্য উন্নয়ন খাত থেকে ধৌত বিল প্রদান করা হয় ঠিকাদারকে।

ঠিকাদার মানিক মিয়া বলেন, দু’বছর ধরে হাসপাতালের ধৌত কাজের ঠিকাদারী করছেন। সরেজমিনে দেখাযায় মানিক তার বাড়ির পুকুরে হাসপাতালের কাপরচোপর ধৌত করে রোদে শুকাতে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোন কম্বল ছিল না। মানিক লন্ড্রি প্রতিষ্ঠানটি দাদামোড়ে থাকার কথা জানালেও তার ভাই সাদেক জানান, বর্তমানে লন্ড্রি প্রতিষ্ঠান না থাকলেও পূর্বে ছিল। এছাড়াও মানিক আরো জানান, তার এবং তাদের স্বজনের কাছ থেকে ৩বছর আগে প্রায় ৬০লাখ টাকা দিয়ে জমি কিনেছেন হিসাবরক্ষক আশরাফ।

সরেজমিনে দেখাযায়, শহরের দাদামোড় ঠিকানায় মানিক লন্ড্রি এবং সাদেক লন্ড্রি নামের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হলেও বাস্তবে এই দুটি প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

দাদামোড়ের লন্ড্রি ব্যবসায়ি সালাম জানান, তিনি ৭/৮ বছর ধরে এখানে লন্ড্রির ব্যবসা করছেন। এখানে এই নামে কোন প্রতিষ্ঠান নেই।
সম্প্রতি ঔষধ পাচারকালে মোসলেমা, রোসনা বেগম নামে দুজন মহিলাকে পুলিশ আটকের ঘটনায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মকর্তা, সিনিয়র নার্স জানান, হাসপাতালের ওয়ার্ড ইনচার্জ অনেকেই আছেন দীর্ঘদিন ধরে এই পদটি ধরে আছেন। তারা রোগীদের সরকারি ঔষধ না দিয়ে বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসতে বলেন। আর এই ঔষধ গুলো বিতরণ দেখিয়ে বহিরাগত নারী-পুরুষদের দিয়ে সরকারি ঔষধ পাচার করেন। কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে একটি চক্র নিয়মতি ঔষধ পাচার করার অভিযোগ করেন তারা। এছাড়াও হাসপাতালের প্রধান সহকারি ইউনুস আলীর বিরুদ্ধে নভেম্বর মাসে ৯০জন নার্স হাসপাতালে যোগদান কালে তাদের নিকট হতে জনপ্রতি ১০০০টাকা করে নেবার অভিযোগ অনেকেই।

হাসপাতালের হিসাবরক্ষক আশরাফ মজিদের কাছে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আপনি আমাকে চেনেন। আমার সম্পর্কে জানেন। আপনাকে তথ্য দিতে আমি বাধ্য নই। জেলার চারশ সাংবাদিকের সাথে আমার পরিচয় আছে বলে দাম্ভিকতা প্রকাশ করেন। এক পর্যায় তিনি বলেন বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক হতে ২৩লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন।
হাসপাতালের ত্বত্তবধায়ক ডা: আনোয়ারুল হক প্রামাণিক জানান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নিয়ম মাফিক কাজ দেয়া হয়েছে। ধৌত না করেও নিয়মতি বিল উত্তোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই বিল গুলো চেক করেই আমার কাছে আসে সে হিসেবেই আমি বিলের কাগজে সই করে থাকি।
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/৯:২৭পিএম/৬/২/২০১৯ইং)