মিতু রানী ভৌমিক নামের এক কলেজছাত্রী গতকাল শনিবার বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। ওই ছাত্রীর মায়ের ভাষ্য, ঋণের সাপ্তাহিক কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এনজিওর কর্মকর্তারা তাঁদের অপদস্থ করেন। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে মিতু রানী ভৌমিক এ পথ বেছে নেন।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের সাদিপুর ওলামাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। ওই ছাত্রীর বাবার নাম ঠাকুর দাস ভৌমিক। মিতু স্থানীয় নজিম উদ্দিন ভূঁইয়া ডিগ্রি কলেজে বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
ঠাকুর দাস ভৌমিক বলেন, তিনি পেশায় একজন পুরি, শিঙাড়া ও ঝালমুড়ি বিক্রেতা। তার তিন মেয়ে, সবাই কলেজে পড়েন। একমাত্র ছেলে স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে গিয়ে ফেরি করে পুরি, শিঙাড়া ও ঝালমুড়ি বিক্রি করে যে আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চলে না। এ কারণে তাঁর স্ত্রী কাজল রানী ভৌমিক স্থানীয় পিদিম ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নেন। প্রতি সপ্তাহের শনিবার এ ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হয়। মেয়েদের কলেজের ফি দেওয়ার কারণে এ সপ্তাহের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। এনজিওর দুজন কর্মকর্তা গতকাল শনিবার সকালে তাঁর বাড়িতে আসেন। এ সময় তাঁর মেজো মেয়ে মিতু বাড়িতে ছিলেন। কিস্তির টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ওই কর্মকর্তারা তাঁর স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও অপদস্থ করেন। মিতু এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করায় তাঁকেও অপদস্থ করা হয়। একপর্যায়ে তাঁর স্ত্রী অপমান সহ্য করতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরই মধ্যে মিতু ঘরে থাকা কীটনাশক পান করেন। এলাকাবাসী অচেতন অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে, পরে স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিলে বেলা সোয়া দুইটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মিতুকে মৃত ঘোষণা করেন।
কাজল রানী ভৌমিক বলেন, ‘এনজিওর দুই কর্মকর্তা প্রথমে আমাকে ও আমার মেয়েকে এতই অপমান-অপদস্থ করেছেন যে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। একপর্যায়ে তাঁরা বলেন, “কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারলে স্থানীয় ক্লিনিকে গিয়ে রক্ত নতুবা কিডনি বিক্রি করে হলেও টাকা আজই পরিশোধ করতে হবে।” তাঁদের কাছে এক সপ্তাহের সময় চেয়ে আমরা পাইনি।’
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাত ১০টায় মিতুর মরদেহ তাঁদের গ্রামের বাড়ি পৌঁছায়। এ সময় এই শিক্ষার্থীর মরদেহ দেখতে গ্রামের কয়েক শ মানুষ ভিড় জমায়। রাতেই তাঁর মরদেহ স্থানীয় একটি শ্মশানে দাহ করার কথা।
এ ব্যাপারে পিদিম ফাউন্ডেশনের সাদিপুর শাখার ব্যবস্থাপক আবু জাফরের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওবায়দুল হক বলেন, ‘বিষয়টি আমরা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’