• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৫:০৩ অপরাহ্ন

৩০ ভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসকশূন্য


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ৬, ২০১৭, ১১:৪৪ AM / ৩৬
৩০ ভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসকশূন্য

 
ঢাকারনিউজ২৪.কম, ঢাকা : প্রশিক্ষণ নিতে ঢাকায় চলে আসায় দেশের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসকশূন্য হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ পদে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়ায় তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় আটশো চিকিৎসককে এ পদে অন্তর্ভুক্ত করে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে। তবে তাদের অধিকাংশের পদায়নই হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। এ ছাড়া দেশজুড়ে সিনিয়র অনেককে বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র এবং ওএসডি চিকিৎসককে প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্ত করা এবং এক বিভাগের চিকিৎসককে অন্য বিভাগে পদায়নের অভিযোগও পাওয়া গেছে।

এদিকে, বঞ্চিত চিকিৎসকদের কর্মসূচির কারণে পরিস্থিতি ভিন্নমুখী হচ্ছে। প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে না পেরে বঞ্চিত চিকিৎসকরা সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. সমীর কান্তি সরকারকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। তাদের তোপের মুখে ২ জানুয়ারি থেকে তিনদিন কার্যালয়ে যেতে পারেননি তিনি। গত মঙ্গল ও বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ফোন করলেও তিনি তা ধরেননি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘প্রশিক্ষণ পদে চিকিৎসকদের অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছে। সেগুলো সমাধান করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া যেসব চিকিৎসক প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি তারা বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছিলেন। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। পরিচালক বুধবার বিকেল থেকে অফিসে যাচ্ছেন।’

চিকিৎসা শিক্ষার উচ্চতর ডিগ্রি এমএস, এমডি, এফসিপিএস প্রথম পর্বে উত্তীর্ণ হওয়ার পর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ পদে পদায়ন করা হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে উপজেলা পর্যায়ে ন্যূনতম দুই বছর চাকরি করতে হয়। এর পর জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে একজন চিকিৎসক তিন বছরের জন্য প্রশিক্ষণ পদে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পদায়ন পেয়ে থাকেন। শর্তপূরণ সাপেক্ষে এ পদের জন্য চিকিৎসকদের বর্তমানে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৭৫৪ চিকিৎসককে এ পদে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে। প্রশিক্ষণের তালিকাভুক্ত অর্ধেকেরও বেশি চিকিৎসককে রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পদায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ চিকিৎসকেরই পদায়ন হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে!

বিক্ষুব্ধ কয়েকজন চিকিৎসক জানান, ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দুই বছর ছয় মাস তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরি করেছেন। অথচ তাদের প্রশিক্ষণ পদে পদায়ন করা হয়নি। কিন্তু ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ জুনিয়র এক চিকিৎসককে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের রেজিস্ট্রার হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। যদিও এটি সিনিয়র চিকিৎসকের পদ।

এদিকে, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের জন্য অন্তর্ভুক্ত করায় ২৫-২০ ভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসকশূন্য হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পাঁচজন মেডিকেল অফিসারকে একযোগে প্রশিক্ষণের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে। এতে ওই উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকেও সব চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ পদে অন্তর্ভুক্ত করে রাজধানীর বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে পদায়ন করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ইতিমধ্যে ১৪ জন চিকিৎসক রিলিজ নিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে পদায়ন নিয়েছেন। এমন আরও ৪০ থেকে ৪৫ চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ পদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

উপজেলা খালি রেখে প্রশিক্ষণ পদে চিকিৎসক পদায়ন সম্পর্কে চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক না থাকলে সেখানে রোগীরা চিকিৎসাবঞ্চিত হবেন। তাই উপজেলা খালি রেখে প্রশিক্ষণ পদে পদায়ন গ্রহণযোগ্য নয়।’ মফস্বল ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা স্বাভাবিক রেখে এ ধরনের পদায়ন দেওয়ার আহবান জানান তিনি। সূত্র : সমকাল
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/১১:৪০এএম/৬/১/২০১৭ইং)